রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে রেস্টুরেন্ট স্থাপনের নামে নির্বিচারে গাছ নিধন। লকডাউনে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকা অবস্থায় এ উদ্যানের বড় অংশজুড়ে কিছু স্থাপনা নির্মাণকাজও শুরু হয়েছে। বুধবার (৫ মে) সাধারণ নাগরিকদের পক্ষ থেকে এ নিয়ে সেখানে একটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। কেন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এলাকায় এরকম রেস্টুরেন্ট করতে হবে? কেন এজন্য পরিবেশ বিনষ্ট করে গাছ নিধন করতে হবে? এমন প্রশ্ন তুলে স্ট্যাটাসদাতারা বলছেন, গোপনে যেটুকু কাজ হয়েছে তা এখনই বন্ধ করা হোক।
ইতোমধ্যে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সদস্যরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তারা বলছেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রেস্তোরাঁ বানানোর উদ্দেশ্যে সারি সারি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে এই স্থানে হাজারো দর্শনার্থীর ভিড় জমে সেই সৌন্দর্যকেই ধ্বংসের মুখে ফেলাটা কতটা যৌক্তিক? গাছ নিধনের ফলে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে, বাস্তুসংস্থান ভেঙে পড়ছে। এমনিতেই ঢাকায় যত গাছ থাকার কথা, আছে এর চেয়ে অনেক কম। ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে বৃক্ষের শীতল ছায়া।
‘আমরা রেস্টুরেন্ট স্থাপনের নামে নির্বিচারে গাছ নিধন নিধনের প্রতিবাদ করছি। সৌন্দর্যের নামে যারা এ ঘৃণ্য কাজে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
পুরো উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, উদ্যানের বিভিন্ন স্থানে এই একই চিত্র। তবে কারা এ কাজ করছেন সে বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে চায়নি।
উদ্যানে খাবারের রেস্টুরেন্ট নির্মাণ এবং এজন্য গাছ কেটে ফেলা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তারা প্রশ্ন করছেন, উদ্যানের গাছ কেটে রেস্টুরেন্ট নির্মাণ কি খুব বেশি প্রয়োজন? পরিবেশ অধিকারকর্মী মোকাররম হোসেন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিয়ে অরাজকতা বন্ধ হোক। কারা উদ্যানের ভেতর হোটেল বানানোর অনুমতি দিলো? তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
সাংবাদিক গাজী নাসিরুদ্দিন লিখেছেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেউ কখনও রেস্টুরেন্ট চাইছে বলে আমরা শুনিওনি। যে শহরে শ্বাস নেওয়ার জন্য ওপেন স্পেস বের করা জরুরি, সেখানে যা আছে তাও বন্ধ করে দিতে চায় কারা? সব পার্ক দখলমুক্ত করুন, নতুন পার্ক তৈরি করুন। মানুষের সঙ্গে মানুষের কথা বলার, দেখা করার জন্য মুক্ত জায়গা তৈরি করুন। মানুষের সঙ্গে মানুষের স্বাভাবিক ইন্টার্যাকশন ঢাকা নগরীতে একেবারে সংকুচিত হয়ে আসছে। বাচ্চাগুলো সব জোম্বি হয়ে উঠছে। তরুণরা নেট অ্যাডিক্ট হয়ে পড়ছে। বড়রা বেপরোয়া, বিষণ্ন। এক সামাজিক অসুখ ধেয়ে আসছে। রাজনীতি যে বিপন্ন হচ্ছে তার গোড়াতে দেখবেন ধেয়ে আসা সামাজিক অসুখের প্রভাব কম নয়। ওপেন স্পেস বাড়ান। আমাদের যে দম বন্ধ হয়ে আসে।’
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের আবু নাসের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। কাটা গাছগুলো দেখলে বুঝতে পারবেন কী অন্যায় ঘটে গেছে। আমরা অনলাইনে প্রতিবাদ আলোচনা সবই করছি কিন্তু কাজ অব্যাহত আছে। তবে কেউ কোনও কথা বলতে চায়নি।’
এদিকে, আজ (বুধবার) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রতিবাদ কর্মসূচি ডেকেছে নাগরিক সমাজ। আয়োজক তরুণ সজীব বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, করোনার কারণে ওই এলাকায় এখন কেউ যায় না। সেই সুযোগ নিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলা হয়েছে। এখন তো গাছ কেটেই ফেলা হয়েছে। আর একটিও গাছ যেন কাটা না পড়ে আর এই মুহূর্ত থেকে স্থাপনার কাজ যেন বন্ধ করা হয় সেই দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ আজ।