X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

একদিকে রেকর্ড সংক্রমণ আর অক্সিজেনের হাহাকার, অন্যদিকে চলছে মোদির বাড়ি নির্মাণ

বিদেশ ডেস্ক
০৭ মে ২০২১, ১৫:০৪আপডেট : ০৭ মে ২০২১, ১৫:০৪
image

অক্সিজেনের অভাবে হাসপাতালে মরছে রোগীরা। ধারাবাহিকভাবে দৈনিক সংক্রমণ অতীতের রেকর্ড ভেঙে ফেলছে। শ্মশানে মরদেহের সারি, দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষারত স্বজন। এই যখন ভারতের বাস্তবতা, তখনও থেমে নেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য বাড়ি নির্মাণের কাজ।

মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮০ কোটি ডলার ব্যয়ে পার্লামেন্ট সংস্কারের কাজ এগিয়ে নিতে চাইছেন মোদি। এই সংস্কারকাজের আওতায় রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জন্য নতুন একটি বাড়ি নির্মাণের কাজ। রাজধানী দিল্লিতে এই প্রকল্প চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছে দেশটির বহু মানুষ এবং বিরোধী রাজনীতিক।

নিরবিচ্ছিন্ন কাজ করেও মরদেহ পোড়ানো শেষ করতে পারছে না শ্মশান কর্মীরা

ভারতে করোনাভাইরাসের প্রাণঘাতী দ্বিতীয় সংক্রমণের ঢেউ চলছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন তিন লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকটে মারা যাচ্ছে বহু মানুষ। এর মধ্যেই দিল্লিতে চলছে ব্যয়বহুল সংস্কারকাজ। পার্লামেন্ট ভবন সংস্কারের ওই প্রকল্পের নাম সেন্ট্রাল ভিসতা রিডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট। একে ‘জরুরি সেবা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ভারত সরকার। ফলে মহামারির মধ্যে অন্যান্য ভবন নির্মাণ কাজ স্থগিত থাকলেও চলতে পারবে এই প্রকল্প।

প্রকল্পের কাজ বন্ধের আর্জি নিয়ে বুধবার দিল্লি উচ্চ আদালতে আবেদন করেছেন ভারতের দুই নাগরিক। এর মধ্যে এক জনের মায়ের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে। আবেদনকারীদের যুক্তি হলো পার্লামেন্ট ভবন নির্মাণ জরুরি সেবা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। আর এই নির্মাণ কাজ করোনা ছড়ানোর ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখতে পারে। আইনজীবী নিনি সালুজার মাধ্যমে দাখিল করা আবেদনে বলা হয়েছে, শ্রমিকরা নিজেদের ক্যাম্প থেকে নির্মাণ কাজে যোগ দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে পারছেন না। দিল্লির প্রাণকেন্দ্রে চলছে নির্মাণ কাজ

দিল্লি হাই কোর্ট আবেদনটির বিষয়ে এই মাসের আরও পরের দিকে শুনানি করতে চেয়েছে। তবে আবেদনকারীরা বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গেছেন। আইনজীবীদের যুক্তি হলো নিম্ন আদালত পরিস্থিতির ব্যাপকতা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টে করা আবেদনে আইনজীবী নিতিন সালুজা লিখেছেন, জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা চলতে থাকায়, কোনও ধরনের বিলম্ব জনস্বার্থের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে। সালুজা বলেন আবেদনটি সম্ভবত শুক্রবারেই শুনানি হবে।

করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর আগেই সেন্ট্রাল ভিসতা প্রকল্প নিয়ে ভারতে বিতর্ক শুরু হয়। সমালোচকদের দাবি এই সংস্কারের মাধ্যমে ইতিহাস এবং ঐতিহ্য বিনষ্ট হবে। তবে সম্প্রতি এই বিরোধিতা তীব্র হয়েছে। রাজনীতিবিদরা একে অসাড় প্রকল্প আখ্যা দিচ্ছেন।

ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবনের নকশা

৮৬ একর জায়গা জুড়ে চালানো এই সংস্কার কাজের প্রবক্তারা বলছেন, একশ’ বছরের পুরনো বর্তমান ভবনটি কাজের জন্য উপযুক্ত না হওয়ায় নতুন করে নির্মাণ করা প্রয়োজন। গত ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘ভারতের মানুষই ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন পার্লামেন্ট ভবন নির্মাণ করবে।’

গত মাসে মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত সার-সংক্ষেপে বলা হয় ৪৬ হাজার সাতশ’ মানুষ  এই প্রকল্পে অস্থায়ীভাবে কাজের সুযোগ পাবে। ওই বৈঠকে জানানো হয় পার্লামেন্ট ভবন সম্প্রসারণ এবং নতুন একটি পার্লামেন্ট ভবন নির্মাণ আগামী ২০২২ সালের নভেম্বরে শেষ হবে। সম্পূর্ণ প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ।

এই বছরের শুরুতে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছ থেকে পরিবেশগত ছাড়পত্র পায় প্রকল্পটি। তবে করোনাভাইরাস বাড়তে থাকায় সমালোচনার মুখে পড়ে মোদির এই প্রকল্পটি।

নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে ভারতের করোনা পরিস্থিতি

সাবেক অর্থ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘মানুষ কোভিডে মরছে কিন্তু (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির) অগ্রাধিকার হলো সেন্ট্রাল ভিসতা প্রজেক্ট। এর বদলে হাসপাতাল ভবন বানানোর দরকার ছিলো না? এক ক্ষমতালোভী মানুষকে নির্বাচনের আর কতো বেশি মূল্য জাতিকে দিতে হবে?’

এই সপ্তাহের শুরুতে বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতা রাহুল গান্ধী বলেন, ‘(প্রধানমন্ত্রীর) ইগো মানুষের জীবনের চেয়ে বড়।’ তার আগে এক টুইট বার্তায় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা সিতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘সেন্ট্রাল ভিসতা জরুরি নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের দূরদৃষ্টি প্রয়োজন।’

রাজনীতির গন্ডিও ছাড়িয়ে গেছে এই সমালোচনা। টুইটারে কেউ কেউ মোদি এবং নিরোর তুলনা করছেন। তারা বলছেন, রোম যখন পুড়ছিলো তখন সম্রাট নিরো যেমন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন তেমনি মোদিও ভারতের মানুষ যখন করোনায় মরছে তখন তিনি পার্লামেন্ট ভবন বানাচ্ছেন।

অবশ্য ভবন নির্মাণ ছাড়াও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার নানা ব্যর্থতায় সমালোচিত হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর ভারতে যখন বিপুল মানুষ আক্রান্ত হতে শুরু করে তখনও তিনি ঝুঁকি অগ্রাহ্য করেছেন আর রাজ্য নির্বাচন সামনে রেখে বড় বড় রাজনৈতিক সমাবেশ চালিয়ে যান।

/জেজে/বিএ/
সম্পর্কিত
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য খালাস করে গেলেন যে নারী ট্রাকচালক
সর্বশেষ খবর
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা