বিভিন্ন নামে ফেসবুকে পেজ খুলেন তারা। এরপর তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের ছবি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে সেগুলো পেজে আপলোড করেন। তুলনামূলক কম দাম দেওয়া হয়। ক্রেতারা সেই বিজ্ঞাপন দেখে ফোন দেয়। দরদাম ঠিক হয়ে গেলে ক্রেতাকে কখনও ফুল পেমেন্ট, আবার কখনও হাফ পেমেন্ট বিকাশে দিতে বলেন। টাকা পাওয়ার পর কখনও ছেঁড়া কাপড় বা পুরনো পোশাক পাঠিয়ে দেয় ক্রেতার ঠিকানায়। আবার কখনও বলে, আপনার বাসার দিকে যাবার সময় ডেলিভারিম্যান সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। এরকম অনেকগুলো প্রতারণা করে পেজটি ডিঅ্যাক্টিভ করে দেয় প্রতারক চক্রটি। এই চক্রের এক নারী সদস্যসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪।
রবিবার (৯ মে) দুপুরে র্যাব-৪ এর উপ-অধিনায়ক কামরুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর মিরপুরের মধ্য পাইকপাড়া ছাপাখানার মোড়ের একটি বাসা থেকে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার দুজন হলেন, মোছা. লিজা (৩০) ও মো. আকাশ (২০)। এসময় তাদের কাছ থেকে সিপিইউ ১টি, মনিটর ১টি, কিবোর্ড ৩টি, মাউস ২টি, স্পিকার ১ সেট (৩ টি), ওয়াইফাই রাউটার ১টি, নথিপত্র ৫ সেট, মোবাইল ১১টি ও নগদ ৩, হাজার ৪শ’ টাকা উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার দুজন র্যাবকে জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে বিভিন্ন পোশাক সামগ্রী এবং বিভিন্ন মোবাইল বিক্রির জন্য পেজ খুলে। বড়দের এবং ছোটদের পোশাক সামগ্রী ও বিভিন্ন মোবাইলের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে অনলাইন ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে।
ক্রেতারা পেজের মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে পোশাক বা মোবাইলের অর্ডার করেন। ক্রেতাদেরকে অনলাইনে পণ্য হোম ডেলিভারি করার আশ্বস্ত করে এবং অগ্রিম পণ্যের মূল্য তাদের পেজে দেওয়া বিকাশ নাম্বারে পাঠিয়ে দিতে বলে। পরবর্তীতে চক্রটি টাকা পাওয়ার পর বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ক্রেতাদের ঠিকানায় ছবির পণ্যটি না পাঠিয়ে বিভিন্ন পুরনো কাপড়ের টুকরা এবং অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস পার্সেল করে পাঠিয়ে দেয়।
এভাবে চক্রটি দীর্ঘদিন যাবত অনলাইনে স্বল্পমূল্যের পোশাক সামগ্রী এবং বিভিন্ন মোবাইলের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে তাদের নিকট হতে বিপুল পরিমাণ টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে।
এই চক্রের অনলাইন ব্যবসার পেজটিতে এক তরুণীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল কেবল কল রিসিভ করতে। তার নাম সোহানা। এই তরুণী ২১ দিন ধরে চক্রের সঙ্গে কাজ করেন। আট থেকে দশটি পেজ খুলে পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়া হতো। একেকটা দশ হাজার টাকার থ্রি পিসের বিজ্ঞাপন দেওয়া হতো পেজে, কিন্তু এসব অর্ডার নেওয়ার পর পণ্যটি না পাঠিয়ে ৬শ’ টাকার থ্রি পিস পাঠাতো। কখনও পুরনো কাপড় কুরিয়ার করতো। এমনও হতো টাকা নেওয়ার পর কোন কিছুই পাঠাতো না। ক্রেতাদের বলা হতো, আপনাদের পণ্য ডেলিভারি দিতে গিয়ে ডেলিভারিম্যান সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। এরপর সিম ও পেজ ডিঅ্যাক্টিভ করে রাখতো।
এই চক্রের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা হয়েছে।