রাত পোহালেই ঈদ উল ফিতর। ঈদের আনন্দে চাই নতুন কাপড়-চোপড়সহ বিভিন্ন সামগ্রী। তাইতো শেষ মুহূর্তে মার্কেটগুলোতে ধুম লেগেছে কেনাকাটার। বৃহস্পতিবার (১৩ মে) বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মল ও মার্কেটগুলোতে বাড়তে থাকে ক্রেতাদের চাপ। যারা রাজধানীতে ঈদ উদযাপন করবেন, মূলত তারাই শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার জন্য দোকানে-দোকানে ঢুঁ মারছেন আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনছেন। তবে মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের চাপ থাকলেও বেশিরভাগই স্বাস্থ্যবিধির মানার বিষয়ে উদাসীন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি মার্কেট ও শপিং মলে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শপিং মলের পাশাপাশি ফুটপাতেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। চলতি পথে অনেকেই ফুটপাতের দোকানে দরদাম করছেন, দামে মিললে জিনিসপত্র কিনছেন।
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, শিশুসহ সব বয়সের ক্রেতাদের আনাগোনা। কাপড়ের দোকান ছাড়াও তরুণীরা ছুটছেন কসমেটিকস ও জুতার দোকানে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কোনও বালাই নেই। চাপাচাপির ভেতরেই সবাই কেনাকাটা করছেন। ফলে করোনা সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
ছোট শিশুসহ পরিবারের কয়েকজনকে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন জাকির রায়হান। তিনি বলেন, ‘এবার পরিবারের সবাই ঢাকায় ঈদ করবো। সেজন্যই শেষ দিনে কেনাকাটা করতে এসেছি। এর আগের দিনগুলোতে অনেক ভিড় থাকায় আজ এসেছি।’
তাসিন ফ্যাশনের কর্মচারী জানান,ঈদকে সামনে রেখে মার্কেট খুলে দেওয়ায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদ করতে পারবো। বেচা-বিক্রি তেমন না হলেও মোটামুটি হয়েছে। মার্কেট খুলে না দিলে আমাদের অবস্থা খারাপ হতো।
হাজী স্টোরে গিয়ে দেখা গেছে, কেনাকাটায় ব্যস্ত কয়েকজন। তাদের মুখে ছিল না মাস্ক। বিক্রেতারা বলছেন, এখন যারা আসছেন, তারা ছোটখাটো জিনিস কেনার জন্য আসছেন।
রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরে মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে মার্কেট কর্তৃপক্ষেরও কোনও কার্যকরী উদ্যোগ নেই। মার্কেটে ঢোকার প্রবেশ মুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই। রাখা হয়নি জীবাণুনাশক স্প্রে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি এখানে পুরোপুরি উপেক্ষিত। পিও কালেকশনের কর্মচারী দাবি করেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করছেন তারা। অথচ এ সময় তার মাস্কটি ছিল থুতনিতে ঝুলানো। এই মার্কেটের অধিকাংশ দোকান কর্মচারী কিংবা সংশ্লিষ্টদের কারোরই মুখে ছিল না মাস্ক।
মিরপুরে অবস্থিত ‘নিউ মার্কেট’ ঘুরে দেখা গেছে, জীবাণুনাশক ট্যানেলের ভেতর দিয়ে ঢুকতে হচ্ছে ক্রেতাদের। স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে তৎপর রয়েছেন সিকিউরিটি গার্ডরাও। কিন্তু ভেতরে ঢোকার পর যে যেভাবে পারছেন মাস্ক ছাড়াই ঘোরাফেরা করছেন। কারও হাতে মাস্ক আবার কারও থুতনিতে ঝুলানো। এ বিষয়ে মার্কেট কর্তৃপক্ষ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন ধরনের নজরদারি নেই।
মিরপুর-১০ নম্বরের বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মলে দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়। ‘মিরপুর শপিং সেন্টারে’ ঢুকতেই কথা হয় এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, মার্কেটে ঢোকার সময় যে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়েছে, তাতে শুধু স্যাভলনের গন্ধ। স্যাভলন দিয়ে তো করোনাভাইরাস দূর হবে না। এটা শুধু মার্কেট কর্তৃপক্ষের লোক দেখানো। জীবাণুনাশক স্প্রের বিষয়ে জানতে চাইলে শপিং সেন্টারের কোষাধ্যক্ষ রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জনগণকে সচেতন করছি। একই সঙ্গে মনিটরিং করছি।’
এদিকে ঈদের আগের দিন হওয়ায় রাজধানীতে যান চলাচল থাকলেও যাত্রী ছিল কম। যারা গণপরিবহন ব্যবহার করছেন, তারা মূলত কেনাকাটার জন্য শপিং সেন্টারগুলোতে যাচ্ছেন। আলিফ পরিবহনের চালক নাদিম বলেন, ‘ঈদের আগের দিন ভেবেছিলাম যাত্রী ভালোই হবে। কিন্তু রাস্তায় যাত্রী অনেক কম।’ শপিং করতে আসা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কোনও ধরনের যানজট ছাড়াই মার্কেটে এসেছি। গত কয়েকদিন রাস্তায় তো অনেক যানজট ছিল। আজ অনেকটাই ফাঁকা।’