গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে ঈদ করেছেন হেফাজত নেতা মামুনুল হক এবং ‘শিশু বক্তা’ খ্যাত রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৫০ জন হেফাজত নেতা। এর বাইরেও যেসব বন্দিরা রয়েছেন তাদের জন্য প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের দিন এবং ঈদের পরের দিন বিশেষ খাবারের আয়োজন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারা অভ্যন্তরে ঈদের নামাজের আয়োজন করা হয়, যেখানে কারাগারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিভিন্ন বন্দিরা এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবারের ঈদে বন্দিদের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং বাইরে থেকে রান্না করা খাবার সরবরাহের অনুমতি দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ। ঈদের দিন শুক্রবার (১৫ মে) কারাগারের ভেতরে বন্দিদের জন্য বিভিন্ন ওয়ার্ডে ২২টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন এসব তথ্য জানান।
কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন জানান, ৫০ জন হেফাজত নেতা ছাড়াও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায় চৌধুরী, করোনাভাইরাস পরীক্ষার জাল সনদ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সাবেক চিকিৎসক ডা. সাবরিনা চৌধুরী, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং নরসিংদীর যুব মহিলা লীগের সাবেক নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়াও রয়েছেন এই কারাগারে।
প্রতিবারের মতো বন্দিদের জন্য উন্নত খাবার-দাবারের ব্যবস্থা ছিল। বিশেষ খাবারের মধ্যে রয়েছে, সকালে পোলাও-পায়েশ-মুড়ি; দুপুরে মাংস, ডিম, মিষ্টি, শীতল পানীয় ও পান-সুপারি এবং রাতে সাদা ভাত, রুই মাছের মাথায় রান্না করা মুড়িঘন্ট ও মাছ ভাজা।
গিয়াস উদ্দিন জানান, হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ হেফাজতে ইসলামের ৪২ নেতা, সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনসহ প্রায় দুই হাজার ৮০০ বন্দি রয়েছেন এ কারাগারে। ৫শ’র মতো যাবজ্জীবন এবং এক হাজারের মতো ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছেন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট ১-এর অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করছেন গিয়াস উদ্দিন। তিনি জানান, কারাগারে এ অংশে ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানেও একই খাবারের ব্যবস্থা ছিল। জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি সাবেক উইং কমান্ডার শাহাবুদ্দিন, ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল দিদার হোসেন ও ডিআইজি প্রিজনস গোপাল বণিকসহ দেড় হাজারের মতো বন্দি রয়েছেন এ অংশে। তাদের মধ্যে ৬৮ জন ফাঁসির আসামি এবং ৯০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট ২-এর জেল সুপার আব্দুল জলিল জানান, কারাগারের এ অংশে ঈদের তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাবারে একটু ভিন্নতা আছে এখানে। সকালে পায়েশ-মুড়ি; দুপুরে পোলাও, মাংস, শীতল পানীয়, মিষ্টি, পান-সুপারি, সালাত এবং রাতে ছিল সাদা ভাত, মাছ, গিলা-কলিজা দিয়ে রান্না করা মুরগির লটপটি।
কারাগারের এ অংশে ‘শিশু বক্তা’ খ্যাত রফিকুল ইসলাম মাদানী, পুলিশের সাবেক উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) খান সাঈদ হাসান, নারয়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারিক সাঈদ, হল মার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদসহ আড়াই হাজারের মতো বন্দি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৩৪ জন ফাঁসির আসামি, ৫৩৭ জন সশ্রম ও ৫২ জন বিনাশ্রম সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের সুপার হালিমা খাতুন জানান, এখানে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জাল সনদ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সাবেক চিকিৎসক সাবরিনা চৌধুরী, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায় চৌধুরী ও নরসিংদীর যুব মহিলা লীগের সাবেক নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়াসহ সাত শতাধিক নারী বন্দি রয়েছেন। বন্দি ৬৩ জন শিশুও রয়েছে। এই শাখায় ২৭ জন ফাঁসির আসামি ও ৬৩ জন যাবজ্জীন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছেন। এখানেও বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, করোনা মহামারিকালে কারগারে বাইরে থেকে স্বজনদের আনা রান্না করা খাবার ও বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ করা নিষিদ্ধ থাকলেও বন্দিরা টেলিফোনে তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছে।
