ভিডিও দেখে এক অন্ধ মা ও তার মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের আমৃত্যু দায়িত্ব নিয়েছেন দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সংস্য শিবলী সাদিক। ঈদের দিন সন্ধ্যায় লোক পাঠিয়ে অতি গরিব এই পরিবারটির দাযিত্ব নিয়ে তাদের হাতে খাবার ও পোশাক তুলে দিয়েছেন তিনি।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সাতপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের স্ত্রী আমেনা খাতুন। ৭৬ বছর বয়সী বৃদ্ধা আমেনা খাতুন বয়সের ভাড়ে দীর্ঘদিন আগে হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। স্বামীও মারা গেছে ৮ বছর আগে। ছেলে লুৎফর রহমান (৪৭) কে নিয়ে বসবাস করছেন আমেনা। এক যুগ আগে লুৎফর রহমান মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এরপর থেকেই তার দুই পায়ে বাঁধা শিকল। এই শিকলে আবদ্ধ ছেলেকে নিয়ে অনাহারে জীবন কাটছিল আমেনা বেগমের। আমেনার অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। মর্মস্পর্শী ভিডিওটি নজরে আসলে বৃদ্ধা আমেনা এবং তার পাগল সন্তানের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য শিবলী সাদিক।
ভিডিওটি নজরে আসায় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের নির্দেশে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের দিন বিকালে ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিম উদ্দিন এবং স্থানীয় সমাজসেবক ইঞ্জিনিয়ার ছাপ্পু বৃদ্ধা আমেনার বাড়িতে হাজির হয়ে সাংসদের পক্ষে বস্তা ভর্তি চাল, ডাল, তেল ও মসলাসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী এবং মা-ছেলের পরিধানের জন্য বেশ কয়েকটি পোশাক দিয়েছেন। এছাড়াও বৃদ্ধা আমেনার হাতে নগদ টাকাও তুলে দিয়েছেন এমপির প্রতিনিধি দল। পাশাপশি ওই বৃদ্ধা এবং তার মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন পরিবারটির সমস্ত দায়ভার এমপি শিবলী সাদিক বহন করবেন বলে আশ্বস্ত করেন ওসি আজিম উদ্দিন।
কান্না জড়ানো কণ্ঠে বৃদ্ধা আমেনা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হামি অন্ধ। বেটাটাও পাগল। বেটাক শিকলে বন্দি করে থুছি। যাতে করে ওই হারা (হারিয়ে) না যায়। তবুও ছেলেটি বারা (বাহিরে) যায়। নিজ হাতে খোঁচা দিয়ে বেটাটার এক চোখ নষ্ট করে দিছি। যাতে বাড়ির বাহিরে যাবার না পারে। খেয়ে না খেয়ে মানুষের বাড়িত থাকা হামা হেরে দিন যায়। হামার হেরেও এমপি খাবার, কাপড় চোপড় দিয়া পাঠাছে। আল্লাহ ওমাক যুগ যুগ বাঁচা থুক। বাড়ির ধারের চেয়ারম্যান-মেম্বার খোঁজ নেয়নি। কিন্তু এমপি হামার খোঁজ নিছে।’
দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সংস্য শিবলী সাদিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভিডিওটি আমার নজরে আসার সাথে সাথে আমি ওই বৃদ্ধার বাড়িতে লোক পাঠিয়েছি তার খোঁজ নেওয়ার জন্য। আমি যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন ওই পরিবারটি সমস্ত ব্যয়ভার আমি বহন করবো। তাদের পুরো দায়িত্ব আমি আমার নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছি। আমার প্রতিনিধিরা মাসে দুইবার করে পরিবারটির খোঁজখবর নেবে এবং সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে।’
সংসদ সদস্য আরও বলেন, ওই বৃদ্ধা মা এবং তার মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের থাকার জায়গা নেই। তারা একজনের বারান্দাতে টিনের একটি চালার নিচে বসবাস করে। আমি তাদের ঘর করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং দপ্তরকে নির্দেশনা দিয়েছি।
