X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

এখন ‘সহমত ভাই’ চর্চা চলে

আবিদ হাসান
২০ মে ২০২১, ২২:০৮আপডেট : ২০ মে ২০২১, ২২:০৮

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে তরুণ প্রজন্মের ভাবনা কী তা জানার প্রচেষ্টা চালিয়েছে বাংলা ট্রিবিউন। তারই অংশ হিসেবে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রফ্রন্টের (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক সালমান সিদ্দিকী। বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশের রাজনীতি নিয়ে নিজের প্রত্যাশাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকা একজন ছাত্রনেতা হিসেবে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

সালমান সিদ্দিকী: ৭১ থেকে এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য যারা রাজনীতি করেছে, কথা বলেছে, আমি মূলত এ ধরনের সংগঠনগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করতে চাই। একটা অংশে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো, যারা শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কথা বলেছে, তাদের দাবিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কথা বলেছে। আরেকটা অংশ শিক্ষার যে দাবি, সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে দাবি তার পক্ষে কথা বলে নাই। বরং আমরা দেখতে পাই তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনের সময় তাদের ওপর হামলা চালিয়ে, নির্যাতন চালিয়েছে। এরশাদের সময় জাতীয় ছাত্র সমাজ ছিল। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এরপর আমরা দেখি ছাত্রদল একই কাজ করেছে। আবার আমরা বর্তমানে দেখি যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসুর যে আন্দোলন সেখানে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টো তাদের ওপর হামলা করেছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আগামীর ৫০ বছর কেমন আশা করবেন?

সালমান সিদ্দিকী: স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা আমাদের ছিল-যেখানে মানুষ ভালো থাকবে, মানুষ তাদের মৌলিক মানবিক অধিকারগুলো পাবে। কিন্তু একটি বাস্তব ব্যাপার, বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর যে বাংলাদেশ আমরা পেলাম, এ বাংলাদেশ আমরা চাই  নাই। এখানে মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার নেই। দেশের এখন যেই অবস্থা এটা দেখেই বোঝা যায় যে, দেশ মানুষের মৌলিক মানবিক আকাঙ্ক্ষাগুলো ধারণ করতে পারছে না। সব সময় তারা জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে দেশ পরিচালনা করে। একজন ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আমি মনে করি আমাদের এখন সময় হচ্ছে নতুন করে লড়াই করার। পাকিস্তান আমলে ৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯ এ আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময় আমরা আন্দোলন করেছি। ৫০ বছর পর আজ এই স্বাধীনতা আমাদের চলে গেছে। এখন সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা নেই।

বাংলা ট্রিবিউন: ক্যাম্পাসে রাজনীতির সংস্কৃতির পরিবর্তন আসছে কি? আসলে কী পরিবর্তন দেখছেন?

সালমান সিদ্দিকী: রাজনৈতিক সাংস্কৃতির কথা যদি আমি বলি, ছাত্রদের স্বার্থে যে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো কাজ করে, তাদের যে দুর্বলতা, শক্তিহীনতা, বিশ্ববিদ্যালয় অগণতান্ত্রিক ও হলগুলোতে দখল দারিত্বের মনোভাব বাড়াতে সাহায্য করেছে। আগেও হলগুলোতে দখলদারিত্ব ছিল, অস্ত্রবাজি ছিল। কিন্তু তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন কিছুটা হলেও নিরপেক্ষ থাকতো, থাকার চেষ্টা করতো। কিন্তু এখন প্রোভোস্ট, ভিসি, প্রসাশন সরকার দলীয় সংগঠনকে স্বমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলা ট্রিবিউন: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ওপর রাজনৈতিক প্রভাব আছে কিনা, থাকলে কী প্রভাব পড়ছে বলে আপনি মনে করেন?

সালমান সিদ্দিকী: একটা রাষ্ট্রের কোনও কিছুই রাজনীতির বাইরে না। কিন্তু বিষয় হলো সরকার দলীয় নোংরা রাজনীতি, নাকি ছাত্রদের স্বার্থের, শিক্ষার পক্ষে কথা বলে সেই রাজনীতি? বিশ্বদ্যালয়ে রাজনীতির প্রভাব নিশ্চয় আছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নোংরা, দখলদারিত্ব ও অপরাজনীতির প্রভাব বিরাজ করছে। যার ফলে ছাত্রদের শিক্ষার অধিকার সংকুচিত হচ্ছে।

বাংলা ট্রিবিউন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষে পা দিলো, শতবর্ষের বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি কোন দিকে? ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে কীভাবে মূল্যায়ণ করবেন? বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ক্রমান্বয়ে পেছনে যাচ্ছে, এর পেছনে কোনও রাজনৈতিক প্রভাব আছে কিনা?

সালমান সিদ্দিকী: যদি বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাংকিংয়ের কথা বলি, যদি গবেষণার কথা বলি, জ্ঞানচর্চার কথা বলি, তাহলে প্রতি মুহূর্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা খাতে বাজেট বাড়াতে হয়, জ্ঞানচর্চার পরিবেশকে উন্মুক্ত করতে হয়, শিক্ষকদের জ্ঞানচর্চায় সংযুক্ত করতে হয়। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন থেকে আমরা বহুদূরে। আর রাষ্ট্রও চায় না বিশ্ববিদ্যালয় সত্যিকার অর্থে জ্ঞান চর্চা হোক, উন্নত বিকাশের পরিবেশ তৈরি হোক। তার বহু উদাহরণ আছে। ইউজিসি যে বরাদ্দ দেয় গবেষণা খাতে তা খুবই সামান্য। এই বিশ্ববিদ্যালয় একসময় আরসি মজুমদার পড়াতেন, সত্যেন বোস পড়াতেন, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ পড়াতেন। সেই গুরুত্ব আজ হারিয়ে গেছে। যার ফলে বিশ্বদ্যালয়ের মান ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে।

বাংলা ট্রিবিউন: বর্তমান ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রমকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? সহাবস্থান আছে কিনা?

সালমান সিদ্দিকী: নাহ, সহাবস্থান একদমই নেই। হলগুলোতে দেখতে পাবেন আমাদের ছাত্রফ্রন্টের নেতা-কর্মীরাসহ অনেকেই হলে থাকতে পারে না, বিভিন্ন সময় তারা হামলার শিকার হয়েছে, হেনস্তার শিকার হয়েছে। তাহলে আমরা কী করে বলি সত্যিকার সহাবস্থান রয়েছে? ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রমের কথা বললে, বিশ্বদ্যালয়ে দুই ধরনের রাজনীতি চলে। এক, যারা শিক্ষার্থীদের স্বার্থে, শিক্ষা পক্ষে কথা বলে। আরেক দল শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে, যারা ছাত্রদের স্বার্থের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। কখনও শিবির, কখনও জাতীয় ছাত্র সমাজ, কখনও ছাত্রদল, আবার এখন ছাত্রলীগ ছাত্রদের স্বার্থবিরোধী অবস্থানে।

বাংলা ট্রিবিউন: হলগুলোতে ক্ষমতাসীনদের একক আধিপত্য রয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ, এ বিষয়ে কী বলবেন?

সালমান সিদ্দিকী: হ্যাঁ, বিশ্বদ্যালয় হলগুলোতে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের একক আধিপত্য দৃশ্যমান। এ বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলা ট্রিবিউন: ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থাকলে গ্রহণের প্রবণতা আছে কিনা? না থাকলে এটি শিক্ষার পরিবেশের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন?

সালমান সিদ্দিকী: ছাত্র রাজনীতির উন্নত সংস্কৃতি কিছুটা হলেও আমাদের দেশে ছিল। সেটা মত-পথ যাই থাকুক না কেন। অন্তত দার্শনিক সহনশীলতা কিছুটা হলেও ছিল। এখন আর নেই। যদি ছাত্রলীগের সহনশীলতার কথা বলি তাতো নেই-ই। বরং ভিন্নমত দমনে তারা সচেষ্ট থাকে। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে কিছুটা হলেও সহনশীলতা আছে। তবে তাও ধীরে ধীরে কমছে। আর এটি শিক্ষা ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্ন করতে শেখায়, কিন্তু সহনশীলতার অভাব এটি নষ্ট করে দিচ্ছে। হলগুলোতে সহমত ভাই চর্চা চলে। আমি যখন ‘সহমত ভাই’ মানসিকতা নিয়ে ক্লাসে যাই তখন শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে পারি না।

/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪ পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি
টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪ পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না