X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মে মাস এলেই বুক কাঁপে উপকূলবাসীর

খুলনা প্রতিনিধি
২৩ মে ২০২১, ২২:৩৪আপডেট : ২৩ মে ২০২১, ২২:৩৯

দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জনপদের মানুষের বুকে কাঁপন ওঠে মে মাস এলেই। এই মে মাসেই আঘাত হেনেছে অনেক বিপদ।  আঘাত হেনেছে আইলা, আম্পানের মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত হানে আইলা। ২০২০ সালের ২০ মে আম্পানে ক্ষত বিক্ষত হয় কয়রাসহ উপকূল। এবার ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর সম্ভাব্য আঘাত হানার খবরে গোটা উপকূল জুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

২০০৪ সাল থেকে মে মাস ও নভেম্বর মাসে সিডর, বিজলী, রেশমী, আইলা, নার্গিস, মহাসেন, বুলবুল, আম্পান প্রভৃতি বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মূর্তিমান ভয়াল রূপ দেখে আসছেন উপকূলীয় মানুষ।

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর আঘাতের আগাম খবরে গোটা উপকূল জুড়ে ভয়ার্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সবাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার বিষয়ে পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েছেন। তবে অধিক জোয়ারের চাপে বাঁধ ভেঙে বা ছাপিয়ে সাগরের পানিতে সমগ্র এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। প্লাবিত হলে আবারও ঘর-বাড়ি পুকুর জলাশয় লবণ পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সমগ্র জনপদ জুড়ে পানীয় জলের অভাব আরও প্রকট হয়ে উঠবে।

আইলার আঘাতের পর ১২ বছর কেটে গেছে।  কিন্তু আইলার ধকল এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি ক্ষতিগ্রস্তরা। আবার এক বছর আগে ঘটে যাওয়া ‘আম্পান’র ধকল কাটিয়ে ওঠার আগেই আরও একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আগমনী বার্তা। স্থানীয়দের মধ্যে রীতিমত ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সংস্কারের অভাবে জীর্ণশীর্ণ উপকূল রক্ষা বাঁধের করুণ অবস্থা। যা উপকূলবাসীকে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে। এছাড়া ব্যবহার উপযোগী পানীয় জলের তীব্র সংকটের পাশাপাশি ‘আম্পান’ এর আঘাতে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি এখনও পূর্ণভাবে মেরামত হয়নি। ফলে চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন উপকূলের মানুষ।

মে মাস এলেই বুক কাঁপে উপকূলবাসীর

উপকূলীয় বাসিন্দারা জানায়, আইলা, বুলবুল ও ‘আম্পান’র আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া উপকূল রক্ষা বাঁধের বেশিরভাগ অংশ মজবুত করে বাঁধা হয়নি। অনেকাংশের বাঁধ যেমন টেকসইভাবে মেরামত করা হয়নি, আবার গোটা উপকূল রক্ষা বাঁধের উপরিভাগে আজ পর্যন্ত কোনও মাটির কাজ হয়নি। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ যদি আবারও সুন্দরবন সংলগ্ন এ উপকূলীয় জনপদে আঘাত হানে তাহলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ভরা পূর্ণিমার কারণে একই সময়ে স্বাভাবিকের তুলনায় নদ-নদীতে জোয়ারের পানি ৩-৪ ফুট বৃদ্ধির প্রবল সম্ভাবনা থাকায় তারা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন বলেও জানান।

উপকূলীয় বাসিন্দা ফিরোজ হোসেন বলেন, আম্পানের পর একটা বছর কেটে গেলেও গাবুরাকে ঘিরে থাকা বাঁধের ওপর মাটি দিয়ে উঁচু করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভাঙন মুখে থাকা অনেক জায়গার বাঁধ এখনও সরু আইলে পরিণত হয়ে আছে। এ অবস্থায় পূর্ণিমার মধ্যে যদি ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আছড়ে পড়ে, তবে সাগরে ভেসে যেতে হবে।

চকবারা গ্রামের মুর্শিদা খাতুন বলেন, মাত্র দশ দিন আগে স্বামীকে বাঘে খেয়েছে। ছেলে মেয়ের মুখে খাবার দিতে পারছিনা। এই দুঃসময়ে কোনও জায়গায় যে আশ্রয় নেবো ভেবে পাচ্ছি না।

কয়রা সদরের আজমল হোসেন জানান, বাঁধের দুরবস্থা আর কর্মসংস্থানসহ পানীয় জলের তীব্র অভাবে প্রতিনিয়ত তারা সংগ্রাম করে চলেছেন। প্রকৃতির হুমকিতে বারবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে যাওয়া ও ফিরে আসার এমন টানা হেঁচড়ার মধ্যে ভাঙন কবলিত বাঁধ তাদের দুর্দশায় অন্যতম প্রধান কারণ।

উত্তর বেদকাশির হোসনে আরা বেগম বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে যেয়ে নিজেদের জীবন বাঁচানোর সুযোগ থাকলেও বাড়ি ঘর আর গৃহস্থলীর জিনিসপত্রের সঙ্গে গবাদি পশু-পাখি নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন।

গোলাখালীর আকিরুন বেগম বলেন, তিন পাশে নদী আর এক পাশে বনকে আশ্রয় করে বসবাস। আম্পান’র আঘাতে বাঁধ ভেঙে সমগ্র এলাকা এলোমেলো হয়ে গেলো। তিন/চার দিন আগে স্থানীয়রা বাঁধের ভাঙন কবলিত অংশ বেঁধেছে। এবার ঘূর্ণিঝড় ভরা জোয়ারের সময় আঘাত করলে সাগরের সঙ্গে মিশে যেতে হবে’। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেখে বাড়ি-ঘর ফেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ যাবেন তিনি।

খুলনা জেলা প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ইকবাল হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলার জন্য খুলনা জেলা প্রশাসন থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে ৩৫৯টি আশ্রয় কেন্দ্রর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি উপকূলীয় বাসিন্দাদের গরু, ছাগল, হাস, মুরগিসহ বিভিন্ন গবাদি পশু নিরাপদে রাখার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া সার্বক্ষণিক রেস্কিউ টিম থাকবে এবং জরুরি চিকিৎসাসেবার জন্য চিকিৎসকসহ ১১৬টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। খাদ্য নিশ্চয়তা শুকনা খাবারে পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইনের ব্যবস্থা রয়েছে।

/এমআর/
সম্পর্কিত
পটুয়াখালীতে কালবৈশাখী ঝড়ে দুজনের মৃত্যু, অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত
এপ্রিলে ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা, তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪২ ডিগ্রিতে
ভোরের ঝড়ে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও বাড়তে পারে দুপুরে
সর্বশেষ খবর
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা