ভূ-রাজনীতির সংকীর্ণতা ও যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল নীতির কারণে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এরজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রয়োজনীয় ভূমিকারও অভাব রয়েছে। ইসরায়েলের বর্তমান নীতি বর্ণবৈষম্যমূলক এবং এটিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা করার সময় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিন সমস্যা নিয়ে আয়োজিত ওয়েবিনারের বক্তারা।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘প্যালেস্টাইন সমস্যা: কোথায় মানবতা’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে। এতে বক্তারা বলেন, সমস্যাটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, কিন্তু মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের কারণে এর সমাধান হচ্ছে না।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ফিলিস্তিনের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, ‘অবিলম্বে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি আমাদের দৃঢ় সমর্থন আছে।’
এখনও ইসরায়েল নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং কোনও শাস্তি না হওয়ার কারণে নির্যাতনকারীরা আরও সাহসী হচ্ছে এবং বিভিন্ন অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র সচিব।
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে বলেছেন, আমাদের আরব ভাইয়েরা অন্যায্যতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে ফিলিস্তিনের অগ্রাধিকার রয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে লেখা চিঠিতে দৃঢ়ভাবে ইসরায়েলের নিন্দা করেছেন।
সম্প্রতি ই-পাসপোর্ট নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ‘ইসরায়েল বাদে’ এই শব্দটি বাদ দিয়েছি পাসপোর্টের মান বাড়ানোর জন্য এবং তবে আমাদের নীতির কোনও পরিবর্তন হয়নি।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, অনেক সময়ে ফিলিস্তিন বিষয়ে ইসলামি দেশগুলোর অবস্থান উদ্বেগজনক। অনেকে এ বিষয়ে ভোটাভুটিতে অনুপস্থিত থাকতো এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্যপক্ষে ভোট দিতো।
একই ধরনের মত পোষণ করে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ইসরায়েলকে অনেক দেশ তোষামোদি করে, কিন্তু এটি কোনও সমাধান না।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে জাতিসংঘে একটি রেজুলেশন গ্রহণ করা হয়, যেখানে বলা ছিল দখলদার বাহিনী অর্থাৎ ইসরায়েল কোনও জমি দখল করতে পারবে না। কিন্তু এটি বাস্তবায়ন হয়নি।
ইসলামি সংস্থা ওআইসি বিষয়ে তিনি বলেন, ওই সংস্থা তৈরি হয়েছিল ফিলিস্তিনের জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা দেখেছি এর কিছু সদস্য ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করেছে এবং এটি ভালো উদ্যোগ জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে তারা এই উদ্যোগটি নিয়েছিল এবং সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।
ইসরায়েল সাংস্কৃতিক যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে সবাই দেখছে তাদের বর্ণবৈষম্যমূলক আচরণ, যা অনেক ইহুদিও সমর্থন করছে না।
ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুটি পশ্চিমা দেশের মিডিয়া যেভাবে উপস্থাপন করে থাকে, আমরা সেইভাবে দেখে থাকি। কিন্তু এ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। আগে একতরফাভাবে বিষয়টি মিডিয়াতে উপস্থাপন করা হতো, এর পরিবর্তন হচ্ছে।
তিনি উদাহারণ দিয়ে বলেন, চারদিন আগে ফিলিস্তিনিরা দখলকৃত ভূমিতে কেমন আছে, তার ওপর নিউইয়র্ক টাইমসে একটি লেখা ছাপা হয়েছে। যা গত এক দশক আগে চিন্তাও করা যেতো না।
বাংলাদেশের পাসপোর্টে পরিবর্তন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত বললেন ‘অগ্রহণযোগ্য’৮০ ও ৯০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে নিজের ছাত্র জীবনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সময় এবং বর্তমানে যে কথা বলা হয়, তার মধ্যে রাত-দিনের পার্থক্য হয়েছে।
ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ইউসেফ রামাদান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কারণে আমাদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
এই সমস্যাকে ধর্মীয় যুদ্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি ডিপ্লোম্যাসি দিয়ে সমাধান হবে না, এই সমস্যা অস্ত্রের মাধ্যমে সমাধান হবে। ইহুদিদের সঙ্গে বসবাস করতে আরবদের কোনও সমস্যা নেই, কিন্তু এটি সমতার ভিত্তিতে হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আরব ভূমিতে ৪০ কোটি মুসলিম বাস করে এবং সেখানে ৫০ লাখ ইহুদি ইসলায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলো, এর জবাব যদি পরবর্তী প্রজন্ম চায়, তবে আমরা কীভাবে এর উত্তর দেবো।