X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুকুরের তাড়ায় ক্রিকেট বন্ধ, এরপর আর্চারিই দিয়ার ধ্যানজ্ঞান

তানজীম আহমেদ
২৬ মে ২০২১, ১৯:৪৭আপডেট : ২৬ মে ২০২১, ১৯:৪৭

বিশ্বকাপ আর্চারির রিকার্ভ মিক্সড ইভেন্টের ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। রোমান সানার সঙ্গে জুটি বেঁধে দিয়া সিদ্দিকী চমক দেখিয়েছেন। সুইজারল্যান্ডের লুজানে ফাইনাল জিততে না পারলেও রুপা জিতে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন মাত্র ১৭ বছর বয়সে প্রতিভার জানান দেওয়া দিয়া। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে মেয়েদের মধ্যে বিশ্ব পর্যায়ে যে সাফল্য কারও নেই। নীলফামারী থেকে উঠে আসা দিয়া এখানেই থামতে চান না, দৃষ্টি তার বহুদূর। রোমানের মতো অলিম্পিকে খেলার স্বপ্ন তার। সেটা হতে পারে টোকিও অলিম্পিকও!

২০১৭ সালে আর্চারির এক ট্রায়ালে অংশ নিতে এসে জীবনের গতিপথই বদলে গেলো তার। চার বছরের পরিক্রমায় দিয়ার জীবনে শুধুই আলোর রোশনাই। বিশ্ব আর্চারিতে বাংলাদেশের নতুন সেনশেসন দিয়া বাংলা ট্রিবিউনের মুখোমুখি হয়ে দিয়েছেন নানান প্রশ্নের বিশদ উত্তর-

প্রশ্ন: বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলে এখনও কি ঘোরের মধ্যে আছেন?

দিয়া সিদ্দিকী: না, ঠিক তা নয়। আসলে অন্যরকম ভালো লাগা ছুঁয়ে গেছে। আমার জন্য অবাক করা বিষয়। আমি মনে হয় বুঝতেই পারিনি যে ফাইনাল খেলবো! দুই বছর পর কোনও আন্তর্জাতিক খেলাতে অংশ নিলাম। এখনও ভাবলে অবাক লাগে। এজন্য কোচ মার্টিন ফ্রেডরিক আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। অন্যরাও করেছেন। সর্বোপরি আমার পরিশ্রমই আমাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। নিজের জন্য নয়, কোচের জন্য দেশের জন্য ফাইনালে যেতে পেরে অনেক খুশি। যা বলে বোঝাতে পারবো না।

প্রশ্ন: ফাইনালে তো সোনার পদক জেতা হলো না...

দিয়া: আগের দুই দিন অনুশীলন করেছিলাম কম বাতাসে। কিন্তু সেদিন অনেক বাতাস ছিল। সঙ্গে ছিল প্রচন্ড শীত। প্রতিকূল আবহাওয়া, যে রকম পরিবেশে খেলে আমরা অভ্যস্ত না। তার ওপর আমার তো এমনিতেই অভিজ্ঞতা কম। তারপরও চেষ্টা করেছি। হয়নি। যা হয়েছে তাতে আল্লাহর কাছে লাখো-কোটি শুকরিয়া।

আর্চারির বিশ্বমঞ্চে দিয়া ও রোমান সানা প্রশ্ন: সুইজারল্যান্ডে ভালো করলেন। অভাবিত সাফল্য পেলেন। কিন্তু সবশেষ নেপালে এসএ গেমসের দলে আপনি ছিলেন না।

দিয়া: সেটা অনেক বেদনাদায়ক ছিল। ঢাকায় ইসলামিক সলিডারিটি চ্যাম্পিয়নশিপে সোনার পদক জিতে সবাই বাহবা দিয়েছিল। এরপর থাইল্যান্ডে এশিয়া কাপে খেলতে যাই। সেখানে রোমান ভাইয়ার সঙ্গে মিক্সড টিম ইভেন্টে চতুর্থ হই। তখন পর্যন্ত ভালোই ছিল। কিন্তু এরপরই ছন্দপতন ঘটে। জাতীয় দলের ক্যাম্পে ট্রায়ালগুলোতে ভালো করতে পারিনি। যে কারণে এসএ গেমসের দল থেকে বাদ পড়ি। ওই সময় অনেকেই অনেক কথা বলতো- আমি নাকি অনেক বেশি অহংকারী হয়ে গেছি, চিন্তা-ভাবনা অন্য দিকে চলে গেছে। এরপর এসএ গেমসের দলে সুযোগ না পাওয়ার পর খুব জেদ চেপে গিয়েছিল। সবশেষ ট্রায়ালে পাঁচ নম্বর হয়েছিলাম। আসলে একটা ধাক্কার পর বলে না মানুষের অনেক পরিবর্তন ঘটে। আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।

প্রশ্ন: একটু পেছনে ফিরে তাকাই। আর্চারিতে কীভাবে এলেন?

দিয়া: নীলফামারী সরকারি বালিকা স্কুলে তখন পড়তাম। আমাদের একজন ফিজিক্যাল ফিটনেস স্যার (খাইরুল ইসলাম) ছিলেন। উনি একদিন বললেন, ‘নীলফামারীতে আর্চারি নামে নতুন খেলা আসছে। তুমি গেলে সেখানে যেতে পারো। তোমার উচ্চতা ভালো আছে। তুমি পারবে।’ ২০১৭ সালের ঘটনা সেটা। প্রতিভা অন্বেষণ প্রোগ্রাম ছিল। আমি সাহস করে ট্রায়ালে অংশ নিয়ে টিকে যাই। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

প্রশ্ন: আর্চারিতে মনোযোগ দিয়েছেন। অন্য খেলা কি টানতো না?

দিয়া: আসলে অন্য খেলা সেভাবে আমাকে আকর্ষণ করতো না। ছোটবেলা থেকে ফুটবল-ক্রিকেট ভালো লাগতো না। খেলতে ভয় লাগতো। যদি আহত হই। একবার তো ক্রিকেট খেলতে গিয়ে কুকুর তাড়া করেছিল। সেই থেকে আর খেলিনি। আমি আসলে মনস্তাত্ত্বিক খেলা হিসেবে আর্চারিকে বেছে নিয়েছি। এছাড়া এটা মার্জিত খেলা।

প্রশ্ন: এখন অভিনন্দন বার্তা কেমন পাচ্ছেন?

দিয়া: অনেক পাচ্ছি। চারদিক থেকে সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছে। আমাকে নিয়ে কথা হচ্ছে। চেষ্টা করবো এই সরব আলোচনা ধরে রাখতে। সাময়িক সময়ের জন্য যেন না হয়। যেন ভবিষ্যতেও থাকে। নীলফামারীতেও আনন্দের বন্যা। ওখানে বাসায় সবাই আসছে। দেখা করছে বাবা-মার সঙ্গে।

প্রশ্ন: পরিবারের সহযোগিতা কেমন পাচ্ছেন?

দিয়া: অনেক বেশি পাই। আমার মনে হয় না আর কেউ আমার মতো পেয়ে থাকে। বাবা নুর আলম সিদ্দিকী। (বেসরকারি টিভি চ্যানেল) বাংলা ভিশনে জেলার প্রতিনিধি হিসেবে আছেন। মা শাহনাজ বেগম গৃহিনী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে আমিই বড়। নীলফামারীর সদরে আমাদের বাসা। বাবা ও মা অনেক সহযোগিতা করেন।

বাংলাদেশের আর্চার দিয়া সিদ্দিকী প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবনা?

দিয়া: আমি খেলার পাশাপাশি পড়াশোনা করে যেতে চাই। আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে চাই। ধাপে ধাপে। এখন ফ্রান্সের দিকে (বিশ্বকাপ স্টেজ-৩) দৃষ্টি দিতে চাই। সেখানে পদক জয়ের আশা আছে। ফ্রান্সে ভালো করতে পারলে টোকিও অলিম্পিকে সুযোগ পাবো। সেখানেই দৃষ্টি দিচ্ছি।

প্রশ্ন: রোমান সানার সঙ্গে জুটি বেঁধে এগোচ্ছেন। কেমন লাগছে?

দিয়া: আমি যার সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলি না কেন, চেষ্টা করি নিজের সেরাটা দিতে। আর রোমান ভাইয়ের আত্মবিশ্বাস অনেক উঁচুতে থাকে। আমাদের একজন আরেকজনের প্রতি বিশ্বাস ছিল। ভালো খেলতে হবে। কিছু করতে পারবো। উনি অনেক সহযোগিতা করে থাকেন। উনি ভালো আর্চার। ভালো মনের মানুষ।

প্রশ্ন: আর্চারিতে মেয়েদের ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?

দিয়া: আর্চারিতে অবশ্যই আসা উচিত। এখানে পড়াশোনার সুযোগ আছে। বিদেশি কোচ আছে। অনুশীলন হচ্ছে। বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ আছে। সব মিলিয়ে নিরাপদে থাকা যায়। এছাড়া অর্থনৈতিক দিক দিয়েও খারাপ নয়। তবে ক্রিকেট বা ফুটবলের মতো টাকা নেই। অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হলে সবার জন্য ভালো হবে। তবে ফেডারেশন সাহায্য করছে।

/টিএ/কেআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিদ্যুৎ ও গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না
বিদ্যুৎ ও গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না
ওমরা পালনে সৌদি গেলেন পাটমন্ত্রী
ওমরা পালনে সৌদি গেলেন পাটমন্ত্রী
গাজায় আবিষ্কৃত গণকবরের স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র
গাজায় আবিষ্কৃত গণকবরের স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র
খুলনায় এ যাবতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এ যাবতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা