X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

গণমাধ্যমের দায়মুক্তি কবে?

তুষার আবদুল্লাহ
২৯ মে ২০২১, ১৫:৫৬আপডেট : ২৯ মে ২০২১, ১৭:১১

তুষার আবদুল্লাহ ভাইরাল যুগ আসার আগেও ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে গণমাধ্যম ইঁদুরের সঙ্গে দৌড়ে নামতো। এখন টেলিভিশন ও অনলাইনের যুগে মনে হতে পারে টিআরপি ( টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট), লাইক, ভিউ পেতে মরিয়া হয়ে গণমাধ্যম নৈতিকতা ও দায়িত্বজ্ঞান শূন্য হয়েছে। কিন্তু যখন বেসরকারি টিভি ছিল না, অন্তর্জাল দুনিয়া ছিল না, তখনও পত্রিকা কোনও কোনও ঘটনা পুঁজি করে প্রচার বাড়াতে জ্ঞান হারাতো। এক-দুইটি পত্রিকার হয়তো প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল, তাদের কোনও স্পর্শকাতর ঘটনা কাবু করতে পারতো না। বেশিরভাগ পত্রিকাতেই দেখা যেতো ধর্ষণের খবর পরিবেশন করতে গিয়ে ব্যক্তি বা সংঘবদ্ধ দল কী নকশায় ধর্ষণ করলো তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের বেলাতেও একই দেখা গেছে কী কী ভাবে মানুষ হত্যা করা যায়, তার একটি ম্যানুয়েল তৈরি করে ফেলতো পত্রিকাগুলো। যখন দেশে নতুন নতুন মাদক আসতে শুরু করলো, তখন তার সেবন পদ্ধতি জানতে, আসক্তদের কোনও গাইড বইয়ের আশ্রয় নিতে হয়নি। পত্রিকার প্রতিবেদনই ছিল যথেষ্ট। উত্তরাধিকার সূত্রে এই ধারা অনুসরণ করে আসছে টেলিভিশন চ্যানেল ও অন্তর্জাল মাধ্যম। গণমাধ্যম যেন অপরাধের দূর শিক্ষক মাধ্যম হয়ে উঠছে ক্রমশ।

বেসরকারি টেলিভিশন সংবাদ শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের কাছে দীক্ষা নিয়ে। দীক্ষা নিলে কী হবে, পত্রিকা থেকে এখানে আসা কতিপয় কর্মীর রুচির বদল ঘটেনি। পরে টেলিভিশনের বিস্তার ঘটলে, প্রশিক্ষণ ছাড়া কর্মীরা যেমন সংখ্যা গরিষ্ঠ হয়ে পড়েন, তেমনি যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন, একাধিকবার প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছিলেন, তারা ব্যক্তিগত রুচিকে অতিক্রম করতে পারেননি। এদের একটি অংশ টেলিভিশনের নেতৃত্বে চলে যান। ভিকটিম বা আক্রান্তের ছবি ব্যবহার ( ধর্ষণের ক্ষেত্রে), তার ও স্বজনের  নাম পরিচয় দেওয়া, অভিযোগ প্রমাণের আগে অভিযুক্তকে আসামি বলে পরিচয় দেওয়া, অপরাধের বর্ণনা বিস্তারে না যাওয়ার বিষয়ে তরুণ কর্মীদের মধ্যে সচেতনতা আছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। তাদের প্রতিবাদ ও ক্ষোভ আছে। কিন্তু জ্যেষ্ঠদের পদাধিকার ও রুচির কাছে সেই রুচির ও ক্ষোভের নিত্য পরাজয় ঘটে। চাকরি রক্ষার স্বার্থে তরুণ কর্মীরা বাধ্য হচ্ছেন ‘ ভাইরাল’ জার্নালিজমে।

কোনও অপরাধ ঘটলে সংবাদ কর্মীরা তদন্ত কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কখনও কখনও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ঘটনার কারণ, তদন্তের অগ্রগতির কথা জানতেন। পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মী ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য খুঁজে নিতেন। তারপর সবকিছু মিলিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতেন। এসময় তার এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের রুচি ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় পাওয়া যেত। পাঠক, দর্শকের মনজগতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়ে এমন কোনও বর্ণনা এড়িয়ে যেতেন অনেকে। কিন্তু এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্রিফিং করা হয়, এই ব্রিফিং মূলত গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য। তাই ব্রিফিংয়ে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য ও বর্ণনা থাকে। যেন গণমাধ্যম কর্মীরা ঘটনাটির আদ্যপান্ত বুঝতে পারেন। ব্রিফিং সরাসরি সম্প্রচারের কারণে এখন দর্শকও জেনে যাচ্ছেন বিস্তারিত অপ্রয়োজনীয় অংশ।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিখোঁজ ও হত্যার কারণ অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে একটি বিরল প্রকৃতির মাদক। দেখা গেলো ছাত্র মৃত্যুর চেয়ে গণমাধ্যম মেতে উঠলো নতুন মাদকটি নিয়ে। মাদকটি কীভাবে কোন অ্যাপসে পাওয়া যায়, দাম, বিপণন নেটওয়ার্ক, কীভাবে সেবন করতে হয় সবই গণমাধ্যমের কল্যাণে সকলের জানা। এখন কোনও কিশোর-তরুণ যদি কৌতূহল মেটাতে মাদকটি সেবন করে, আসক্ত হয়ে যায়, এই দায় কার? অবশ্যই গণমাধ্যমের। কারণ আমরা অনেক অপরাধের ক্ষেত্রেই দেখেছি, অপরাধীরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে তারা অপরাধের কৌশল জেনেছে গণমাধ্যম থেকে। ইঁদুর দৌড়ে হাঁপাতে থাকা গণমাধ্যম এখন ভিডিওসহ সহজলভ্য করছে অপরাধের ম্যানুয়েল।

আমরা জানি খুব কম গণমাধ্যমেরই নিজস্ব সম্পাদকীয় নীতি বা স্টাইলশিট রয়েছে। বেশিরভাগ গণমাধ্যমই চলে ব্যক্তির ইচ্ছে খুশির ওপর। সূর্যোদয়- সূর্যাস্তে নিয়ম বদলে যায়। সেখানে সাধারণ কর্মীর কিছু বলার থাকে না। এই ইচ্ছে খুশি নিয়ম, গণমাধ্যমের অপরাধের দায় বাড়াচ্ছে। এই অপরাধের দায়মুক্তির জন্য তথ্য ও সম্প্রচার দফতর, তথ্য কমিশন, প্রেস কাউন্সিল, পেশাজীবী সংগঠন, গণমাধ্যমের শিক্ষকদের সম্মিলিতভাবে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। দরকার আন্ত যোগাযোগ। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ, বিশেষ পরামর্শ দেওয়া, বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতি আনুগত্যের চেয়ে অনিবার্য হয়ে উঠেছে - গণমাধ্যমের দায়মুক্তি।

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
হৃদরোগ বিভাগে ছারপোকার রাজত্ব, হাসপাতাল পরিচালক দুষছেন রোগীদের
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালহৃদরোগ বিভাগে ছারপোকার রাজত্ব, হাসপাতাল পরিচালক দুষছেন রোগীদের
‘মডার্ন মেট্রোপলিস’ থিমে ঈদ সংগ্রহ এনেছে ঢেউ
‘মডার্ন মেট্রোপলিস’ থিমে ঈদ সংগ্রহ এনেছে ঢেউ
কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কবে সমন্বয় করবে রাজউক?
বহুতল ভবনের সংজ্ঞাফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কবে সমন্বয় করবে রাজউক?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ