X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

খুলনা মহানগরীর সুপেয় পানির সমস্যার সমাধানের দাবি

খুলনা প্রতিনিধি
২৯ মে ২০২১, ১৯:২৭আপডেট : ২৯ মে ২০২১, ১৯:২৭

খুলনা মহানগরীর ১৫ লাখ মানুষের সুপেয় পানির সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছে খুলনা সুপেয় পানি আন্দোলন কমিটি। শনিবার বেলা ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন খুলনা সুপেয় পানি আন্দোলন কমিটির সদস্য নাজমুল আজম ডেভিড।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও প্রভাবের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী খুলনার অন্যতম প্রধান সমস্যা সুপেয় পানি প্রাপ্যতা। ১৮ লাখ মানুষের ৪৬ বর্গ-কিলোমিটারের খুলনা মহানগরীতে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানি সংকট দেখা দেয়। বিভিন্ন স্থানে দিনরাত পাম্প চালিয়েও পানি উঠছে না। যাদের বাড়িতে নলকূপ আছে তারাও খাবার পানি পাচ্ছেন না। তারাও ছুটছেন খাবার পানির সন্ধানে। যাদের টাকা আছে তারা গভীর নলকূপের সঙ্গে সাব-মার্সিবল পাম্প বসানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। পানির স্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে, এর অন্যতম কারণ নিয়ন্ত্রণহীন ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন। এ বছর মে মাসে কোথাও কোথাও তা সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৭ ফুটে নেমেছে। শহর হিসেবে খুলনার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানে বসতি বেড়েছে। যার ফলে শহরের ভূমির চাহিদা মেটাতে ১০ বছরে সুপেয় পানির অন্যতম আঁধার পুকুরগুলো ভরাট হয়েছে, দখল-দূষণের শিকার হয়েছে ময়ূর নদ। গড়ে উঠেছে সুরম্য অট্টালিকা। ফলে আবাসিকের পানির চাহিদাসহ পানির বহুমুখী চাহিদা বাড়তে থাকে। খুলনা মহানগরীতে ২০১৬ সালে গ্রাহক ছিল ১৭ হাজার এবং এখন প্রায় ৩৭ হাজার ৩০০ জন। গত চার বছরে গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১২ হাজার। ৩১টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন-কেসিসি’র নাগরিকদের পানির সমস্যা সমাধানে খুলনা ওয়াসা ছিল খুলনাবাসীর প্রাণের দাবি।

‘খুলনা ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালে। এ অবস্থায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ভূ-উপরস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে ২০১৩ সালে ২ হাজার ৫৫৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকায় “খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প” নামে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে খুলনা ওয়াসা। এতে অর্থায়ন করে বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) নিজস্ব তহবিল হতে ৭৫০ কোটি ৪২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, ঋণ প্রদান করে এডিবি ৫২৩ কোটি ৭৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ও জাইকা এক হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৭১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মধুমতি নদী থেকে পানি সংগ্রহের পর তা পরিশোধনের মাধ্যমে খুলনা সিটি করপোরেশনে সরবরাহ করার কথা। কিন্তু, খুলনা ওয়াসা’র এই প্রকল্প আশাহত করেছে। এই প্রকল্প যথেষ্টমাত্রায় পানি সরবরাহ করতে পারছে না, উপরন্তু শুষ্ক মৌসুমে নোনা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহ করছে। বর্তমানে ওয়াসার চারটি জোনের ৮৫টি গভীর নলকূপ থেকে মহানগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। নগরীর ১৫ লাখ মানুষের প্রতিদিনের পানির চাহিদা ২৪ কোটি লিটার। প্রকল্পের অধীনে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দ্বারা ১১ কোটি লিটার পানি পরিশোধন করা সম্ভব। কিন্তু গত ৪ মে ২০২০ পরিশোধন কেন্দ্রের রিজার্ভার থেকে তিন কোটি ৪৯ লাখ লিটার সরবরাহ করা হয়েছে এবং নলকূপ থেকে দুই কোটি ৫৮ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, ওই দিনে ওয়াসা মধুমতি ও নলকূপ দিয়ে নগরীতে মোট ৫ কোটি ৯৭ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘বর্তমানে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া ও মধুমতি নদীতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে ওয়াসা নগরবাসীকে মানসম্মত পানি সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে। মার্চ ২০১১ সালে জাইকা’র ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছিল এনজেএস কনসালটেন্ট কোং লিমিটেড। সেখানে ওয়াসা কর্তৃক সম্পাদিত একটি স্টাডির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, যে এলাকায় এই স্টাডি সম্পন্ন হয়েছে সেখানকার পানিতে ক্লোরাইডের উচ্চ মাত্রার উপস্থিতি রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথাগত শোধনের মাধ্যমে পানিতে বিদ্যমান ভারী ধাতু অপসারণ করা যাবে না। পরিশোধন কেন্দ্রে নদীর পানির ময়লা-দুর্গন্ধ, রোগ-জীবাণু পরিশোধনের ব্যবস্থা থাকলেও রাখা হয়নি লবণাক্ততা শোধনের ব্যবস্থা। প্রকল্পের অধীনে ১.২৫ এমএলডি, ৫.৫ এমএলডি এবং ১০০ এমএলডি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট-এর কথা বলা হয়েছে। এই ট্রিটমেন্ট প্লান্ট কী লবণ পানি শোধন করতে পারে?’

লিখিত বক্তব্যে খুলনা সুপেয় পানি আন্দোলন কমিটির পক্ষ থেকে শুষ্ক মৌসুমে মধুমতি নদীর ওই স্থানে নোনা পানি থাকবে তা বিবেচনা না করে এ ধরনের অদূরদর্শী প্রকল্প গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, বর্তমানে খুলনা নগরীর ৬০ শতাংশ পানি বিভিন্নভাবে ভূ-গর্ভস্থ থেকে তোলা হচ্ছে তা অপচয় না করে শুধু পানের জন্য সুনির্দিষ্ট করা এবং তার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত, পানির চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন এলাকায় অনুমোদিতভাবে/ব্যবসায়িক কাজে/ভবন নির্মাণের কাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার বন্ধ, বহুতল ভবনে ব্যবহৃত উৎপাদক নলকূপের ওপর বেশি করে কর ধার্য, পানির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের জন্য ওয়াটার রেগুলেটরি কমিশন গঠন, সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনে বিধি-নিষেধ আরোপ, খুলনা ওয়াসার দুটি পানির লাইন তথা একটি খাবার পানি অন্যটি গৃহস্থালী কাজে ব্যবহারের জন্য স্থাপনের পরিকল্পনা করে খাবার পানির সংকট কমিয়ে আনার ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন– অধুনালুপ্ত খুলনা পৌরসভার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এনায়েত আলি, অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইয়াহহিয়া আক্তার, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) খুলনা বিভাগের সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান মুকুল, সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী, প্রফেসর ড. ইয়াহিয়া, নাজমুল আজম ডেভিড, নারী নেত্রী সুতপা বেদঞ্জ, সিপিবির এস এ রশিদ, মুনির চৌধুরী সোহেল প্রমুখ।

/এমএএ/
সম্পর্কিত
উপকূলে লবণ পানি নিয়ন্ত্রণ ও সুপেয় পানি নিশ্চিতের দাবি
শান্তি-সম্প্রীতি স্থাপনের এক অনন্য হাতিয়ার পানি: প্রতিমন্ত্রী
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা‘সুপেয় পানির দেশ হলেও পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি’
সর্বশেষ খবর
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা