X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি আছে কাগজে-কলমে!

শাহেদ শফিক
০১ জুন ২০২১, ১৫:১১আপডেট : ০১ জুন ২০২১, ১৫:১৩

চলমান লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে দেশে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু সেই শর্ত কোথাও পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। পরিবহনগুলোতে দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা কিংবা মাস্ক পরিধান করতে অনীহা দেখা গেছে চালক ও হেলপারের মধ্যে। নগরীর বিভিন্ন টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

গত ২৩ মে দূরপাল্লার বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়ার পর বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করে বাস মালিক সমিতি। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে- মাস্ক ছাড়া কোনও যাত্রী গাড়িতে ওঠানো যাবে না। চালক, সুপারভাইজার, হেলপার এবং টিকিট বিক্রিতে নিয়োজিতরাও মাস্ক পরবে। তাদের হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবান-পানি, হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।

সামাজিক দূরত্ব না মেনে যাত্রী পরিবহন ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহন করার পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএ'র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যাত্রীদের কাছ থেকে বর্তমান ভাড়ার অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ ভাড়া আদায় করা যাবে। যাত্রার শুরু ও শেষে গাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

কিন্তু পরিবহনগুলোতে এসব নির্দেশনার কিছুই পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। দূরপাল্লার বাসগুলোতে অর্ধেক আসনে যাত্রী পারিবহন কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও সিটি সার্ভিসে স্বাস্থ্যবিধি বেশি ভাঙা হচ্ছে। প্রতিটি আসনে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। তবে দূরপাল্লার বাসগুলোতে একই পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি আসনে বসতে দেখা গেছে।

ট্রেনে যাত্রী পরিবহন ৩১ মে সকালে মালিবাগ রেলগেট এলাকায় দেখা গেছে তুরাগ পরিবহনের একটি বাসের সব আসনের পাশাপাশি দাঁড়িয়েও যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। এসময় যাত্রী ও হেলপারের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা হতে দেখা গেছে। জানতে চাওয়া হলে পরিবহনটির হেলপার বলেন, ‘মানুষতো নিয়ম জানে। তারা কেন জোর করে বাসে ওঠে? আমরা তো নির্ধারিত ভাড়া আদায় করবোই।’

এমন চিত্র প্রায় প্রতিটি গণপরিবহনের। তবে যাত্রীদের অভিযোগ তারা অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে পরিবহন করতে চান না। কিন্তু যখন চাহিদা অনুযায়ী গণপরিবহন পান না তাখনই তারা বাধ্য হন।

পল্টনের একটি বেসরকারি অফিসে চাকরি করেন আবুল কাশেম। তিনি প্রতিদিন মিরপুর থেকে বাসেই যাতায়াত করেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সকালের অফিস টাইমে যে পরিমাণ গণপরিবহন থাকার কথা সে পরিমাণ পাওয়া যায় না। প্রতিটি পরিবহনেই অতিরিক্ত যাত্রী। মানুষও বাধ্য হয়ে পাশাপাশি আসনে বসে। ভাড়াও ৬০ শতাংশ বেশি আদায় করা হচ্ছে।’

ট্রেনে যাত্রী পরিবহন এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহন করতে আমরা সকল বাস মালিক, কোম্পানি, সমিতির সকাল জেলা শাখা ও ইউনিটগুলোতে চিঠি দিয়েছি। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তদারকি করছে। আমরা বলে দিয়েছি কেউ যদি সরকারি বিধান অমান্য করে তার বিরুদ্ধে যেন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

লঞ্চের চিত্রও একই। কোথাও তদারকি নেই। হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বা তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। গাদাগাদি করে তোলা হচ্ছে যাত্রী।

সদরঘাট থেকে হাতিয়াগামী লঞ্চ তাসরিফ-১ এর যাত্রী সামছুদ্দিন বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি বলতে কিছুই নেই। লঞ্চে ওঠার সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজিং হচ্ছে না। যাত্রী তো দূরের কথা লঞ্চের আনসার সদস্যরাও মাস্ক পরছেন না। সিঙ্গেল কেবিনে দুই থেকে তিনজন পর্যন্ত উঠছেন। ডেকে গাদাগাদি করে যাচ্ছে সবাই। অনেকে দলবেঁধে গল্প করছেন। কোথাও কোনও তদারকি নেই। ভাড়া কিন্তু ৬০ ভাগ বেশি নেওয়া হচ্ছে।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঢাকা নদীবন্দরের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। প্রতিটি পন্টুনে আনসার নিয়োজিত রয়েছেন। বেশি যাত্রী যাতে তোলা না হয় সে জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।’

ট্রেনে যাত্রী পরিবহন তবে ব্যতিক্রম দেখা গেছে রেল স্টেশনে। নগরীর কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, স্টেশনে ঢোকার মুখে প্রতিটি যাত্রীকে হ্যান্ড স্যানিটাইজিং করা হচ্ছে। শরীরের তাপমাত্রাও মাপা হচ্ছে। ভেতরে জীবাণুনাশক ছিটানোর পাশাপাশি পানি দিয়ে ধোয়া হচ্ছে। ট্রেনে পাশাপাশি দুই সিটের মধ্যে এক সিটে বসিয়ে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।

কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে রেল চলছে। জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। স্টেশনে ঢোকার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে। যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রাও মাপা হচ্ছে। আমরা যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালন করছি তা অন্য কোনও গণপরিবহনে নেই।’

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘এখন আমাদের ১০৮টি আন্তনগর ট্রেন রয়েছে। তার মধ্যে ২৮ জোড়া তথা ৫৬টি ট্রেন চালাবো। এতে অর্ধেক আসন ফাঁকা থাকবে। টিকিট অনলাইন থেকে সংগ্রহ করতে হবে। সংক্রমণের কারণে কাউন্টারে কোনও টিকিট রাখা হয়নি।’

 

 

 

/এফএ/
সম্পর্কিত
হেলমেটের মান নির্ধারণ হবে কবে?
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
ফিরতি ঈদযাত্রা: আগের দামে টিকিট নেই, দ্বিগুণ দিলে আছে
সর্বশেষ খবর
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা