X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

পরীক্ষা কীভাবে নেবে জানে না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

আবিদ হাসান
০১ জুন ২০২১, ১৯:১১আপডেট : ০১ জুন ২০২১, ১৯:১১

সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ১২ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সেশনজট কাটাতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন ক্লাসে গেলেও পরীক্ষা পদ্ধতি নির্ধারণ করতেই পেরিয়ে গেছে বছর। সেশনজটে পড়ে দুই বছর একই বর্ষে আটকে আছে শিক্ষার্থীরা। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসাইনমেন্ট ও মিডটার্ম নিলেও বাকি রয়েছে সেমিস্টার ফাইনাল। আর ওই পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে হবে তা এখনও ঠিক করতে পারেনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কী অবস্থা?

দেশের প্রধান কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রত্যেকেই পথ খুঁজছে পরীক্ষা নেওয়ার। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ১ জুলাই থেকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে প্রশ্ন-পদ্ধতি চূড়ান্ত হয়নি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে জুনের শেষে দুই সপ্তাহ ক্লাস রিভিউ করে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে পদ্ধতি চূড়ান্ত হয়নি।

কিছুটা এগিয়ে আছে জাহাঙ্গীরনগর ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তারা নিজেদের মতো করে একটি পদ্ধতি বের করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করেছে তিনটি ধাপ-অ্যাসাইনমেন্ট, ওপেন বুক এক্সাম এবং মৌখিক পরীক্ষা। শাহজালালে ১ম, ২য় ও ৩য় বর্ষের ১ জুলাই থেকে অনলাইনে পরীক্ষা হবে। ফাইনালে ৭০-এর মধ্যে ৩০ বা ৪০ নম্বরের জন্য ক্রিয়েটিভ অ্যাসেসমেন্ট অর্থাৎ লিখিত বা অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে ৩০ নম্বরের।

শিক্ষকরা যা ভাবছেন

কীভাবে পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো? এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ড. মাকসুদ কামাল বলেন, ‘জুনের মধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হবে। মহামারি চলা অবস্থায় শিক্ষার্থীরা যেন বাড়িতে বসে রেজিস্ট্রেশন করতে পারে সেজন্য অ্যাপ বানানো হয়েছে। অনলাইন পরীক্ষায় প্রশ্ন কাঠামো তৈরি করতে সকল অনুষদকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক তাসলিমা মির্জা বলেন, ‘আমরা মনে করি প্রতিটি ব্যাচের সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। আবার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর মতো অনলাইনেও পরীক্ষা হতে পারে। সেক্ষেত্রে সময় কমিয়ে আনা যেতে পারে। আগে তিন-চার ঘণ্টা পরীক্ষা নেওয়া হতো, সেটা এক ঘণ্টা করা যেতে পারে। একাডেমিক কাউন্সিলে ভাইবার ওপর জোর দেওয়া হবে বলে শুনেছি। এটাকে সমর্থন করি না। কারণ এতে অপপ্রয়োগের আশঙ্কা থাকে। আমি মনে করি অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব।’

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তবিউর রহমান বলেন, ‘ইউজিসির পরীক্ষার ঘোষণার আগে আমাদের একাডেমিক কাউন্সিলে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেহেতু অফলাইনে নেওয়ারও একটা ঘোষণা আসছে, আমরা দুটোই সমন্বয় করে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে সেভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা করবো। প্রশ্ন-পদ্ধতি নির্ধারণে ইউজিসির নির্দেশনাগুলো যাচাই-বাছাইয়ের বিষয় আছে। যদি অনলাইনে পরীক্ষা নিতেই হয়, সেই সিদ্ধান্তের আলোকে আমাদের নতুন করে পরীক্ষার ধরন ঠিক করতে হবে।’

কী ভাবছেন শিক্ষার্থীরা?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যাবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘২০১৯ এর ডিসেম্বরে ৪র্থ বর্ষে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। ২০২১-এর জুন চলে এলেও এক সেমিস্টারের ক্লাসই শেষ হয়নি। দুই সেমিস্টারের ক্লাস কিংবা পরীক্ষার কথা তো ভাবাই যাচ্ছে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিমা মেহজাবিন বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের। তাদের সবার আশা থাকে সময়মতো পড়া শেষ করে কাজ শুরু করবে। বিসিএস দেবে। তাদের পরিবারও তাদের ওপর আশা নিয়ে থাকে। এখন আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। কবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে, কবে স্নাতক শেষ হবে জানি না।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আরমান হাসানও বললেন একই কথা। তিনি বলেন, ‘সময় তো চলে যাচ্ছে। কবে কী হবে বুঝতে পারছি না। শেষ বর্ষে এভাবে আটকে থাকায় হতাশা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।’

শিক্ষাবিদরা বলছেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষাখাতকে মোটেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। গার্মেন্টস খোলার জন্য যে তৎপরতা দেখানো হয়েছে, সেটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে করা হয়নি। বলা হচ্ছে সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের নিচে না নামলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে না। এর জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেটাও নেওয়া হচ্ছে না।’

ঢাবি’র শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ বলেন, ‘শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরই নয়, গোটা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে। অন্যান্য দেশে লকডাউনে শিক্ষা কার্যক্রম চলেছে। আমাদের অনলাইন ক্লাস ফলপ্রসূ হচ্ছে না। আমাদের একটা আশা ছিল, এ পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে আইইআর বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটা গাইডলাইন তৈরি করবে। ঢাবি একটা মডেল হবে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পড়ে আছে।’

/ইউআই/এফএ/
সম্পর্কিত
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ জনের বিরুদ্ধে দুদকের আরও এক মামলা
এইচএসসি পরীক্ষা ৩০ জুন থেকে, সূচি প্রকাশ
অস্থিরতার মধ্যেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্নীতিমুক্ত ঘোষণা করলেন উপাচার্য
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমার-থাই সীমান্তে আবারও বিদ্রোহীদের হামলা, থ্যাইল্যান্ডে পালাচ্ছে মানুষ
মিয়ানমার-থাই সীমান্তে আবারও বিদ্রোহীদের হামলা, থ্যাইল্যান্ডে পালাচ্ছে মানুষ
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
ভুয়া অবিবাহিত সনদের মেয়াদ বাড়াতে গিয়ে ধরা পড়লেন এক ব্যক্তি
ভুয়া অবিবাহিত সনদের মেয়াদ বাড়াতে গিয়ে ধরা পড়লেন এক ব্যক্তি
ঢাকায় ‘র‌্যাম্পে হাঁটলো’ উট, ঘোড়া, কুকুরসহ বিভিন্ন পোষা প্রাণী
ঢাকায় ‘র‌্যাম্পে হাঁটলো’ উট, ঘোড়া, কুকুরসহ বিভিন্ন পোষা প্রাণী
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি