X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএসসিসির অর্ধকোটি টাকা নিয়ে ‘নিখোঁজ’ রাজস্ব বিভাগের কর্মচারী!

শাহেদ শফিক
০২ জুন ২০২১, ১৮:২০আপডেট : ০২ জুন ২০২১, ১৯:১০

দোকান ভাড়া ও সালামির প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) রাজস্ব বিভাগের বাজার শাখা-৩-এর এক রেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চার মাস ধরে সংস্থার সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই। ব্যক্তিগত ফোন নম্বরসহ সবকিছু সচল থাকলেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি ডিএসসিসির। ওই ব্যক্তির নাম ওমর ফারুক। তিনি সংস্থার দোকান ভাড়া ও সালামিসহ বিভিন্ন খাত থেকে আদায় করা অর্থ ডিএসসিসির তহবিল জমা দেননি। এতে সংস্থার অর্থ তছরুপের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য সংস্থার পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে। পাশাপাশি ওমর ফারুককে অনুপস্থিত থাকার জন্য কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার কোনও জবাব পায়নি কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিএসসিসির বাজার শাখা-৩-এর রেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ওমর ফারুক রাজস্ব আদায়ের জন্য ১০টি রসিদ বই গ্রহণ করেন। প্রতিটি বইতে ১০০টি করে পাতা রয়েছে। রসিদ বইয়ের এক একটি পাতার মাধ্যমে প্রতিমাসে একজন গ্রাহক থেকে দোকান ভাড়া, ট্রেড লাইসেন্স ফিসহ অন্যান্য রাজস্ব আদায় করা হয়। এছাড়া তার কাছে আরও চার শতাধিক মানুষের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন বাবদ টাকা রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তিনি লাইসেন্স নবায়ন করে দেবেন বলে প্রতিটি লাইসেন্সের বিপরীতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। কিন্তু এই অর্থ এখন পর্যন্ত করপোরেশনের তহবিলে জমা দেওয়া হয়নি।

একপর্যায়ে দায় এড়াতে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা। তার বাড়িতেও ডিএসসিসির পক্ষ থেকে লোক পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে কোনও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

রেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ওমর ফারুকের অধীনে ডিএসসিসির বঙ্গবাজার, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার, কাপ্তান বাজার কমপ্লেক্স-১, ২ ও ৩ রয়েছে। এসব মার্কেটে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী রয়েছেন।  এরা করপোরেশন থেকে দোকান বরাদ্দ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তাদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করার দায়িত্বে ছিলেন ওমর ফারুক।

এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে গত ২ মে শাহবাগ থাকায় দায়ের করা সাধারণ ডায়েরিতে রাজস্ব কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, ডিএসসিসির রেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ওমর ফারুক গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি তার বর্তমান ঠিকানায় রেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট মোয়াজ্জেম হোসেন, ইফতিখার উদ্দিন, বাজার সুপারভাইজার জাকির হোসেন ও উপ-কর কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম খোঁজ করেও তাকে পাননি। তার দায়িত্বাধীন মার্কেটের দোকান ভাড়া আদায়ের জন্য সাতটি ভাড়ার রসিদ বই (নম্বর- ৮৩, ১৬৪, ২০২, ২২৬, ২৪৮, ৬৯৮, ৬৯৯) এবং সালামি আদায়ের জন্য তিনটি রসিদ বই (নম্বর- ১৪২১, ১৪২২ ও ১৪২৩) রয়েছে। এ ১০টি রসিদ বই তার কাছে রক্ষিত আছে।

এতে আরও বলা হয়, ‘দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে অফিসে অনুপস্থিত থাকায় এবং রেকর্ড রুম থেকে গৃহীত বর্ণিত ১০টি রসিদ বই তার কাছে রক্ষিত থাকায় তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আর্থিক তছরুপের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন বলে অনুমেয়।’ এ অবস্থায় তাকে খুঁজে বের করা এবং তার কাছ থেকে রক্ষিত রসিদ বইগুলো উদ্ধারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সাধারণ ডায়েরিতে অনুরোধ করা হয়।

এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে অফিসে অনুপস্থিত থাকায় কেন তার বিরুদ্ধে চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার কারণ চিঠি পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে চিঠি দেন রাজস্ব কর্মকর্তা আবুল খায়ের। একইভাবে ২ এপ্রিল তাকে আরও একটি কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু এসব নোটিশের কোনও জবাব দেননি রেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ওমর ফারুক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই ফারুককে তার কাজের প্রতি অনীহা বা অবহেলা করতে দেখা গেছে। তাকে কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন নির্দেশনার বিষয়ে অবহিত করা হলেও তিনি সেসব নির্দেশনা পালন করেননি। তার কাছে পাঁচটি রসিদ বই রয়েছে। এছাড়া তিনি তার এলাকার বিভিন্ন মানুষের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন বাবদ চার শতাধিক ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করেছেন। তার নেতৃত্বে রাজস্ব বিভাগে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন সময় ব্যাংক কর্মকর্তার নাম, সিল ও স্বাক্ষর জাল করে সংস্থার হোল্ডিং ট্যাক্স, দোকান ভাড়াসহ বিভিন্ন খাত থেকে আদায় করা টাকা সংস্থার তহবিলে জমা না দিয়ে ভুয়া চালান ফরম তৈরি করে আত্মসাৎ করেছেন।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এত বড় একটি ঘটনা। কিন্তু সংস্থার বিভাগীয় কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে কোনও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়নি। শুধু একটি জিডি আর কারণ দর্শাতে বলেই দায় এড়ানো হয়েছে। সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী দায়িত্বে অবহেলা, অর্থ আত্মসাৎ, অসদাচরণ বা অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। কিন্তু ডিএসসিসির এই কর্মচারীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

অভিযোগ উঠেছে, এই ঘটনার সঙ্গে সংস্থার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক জড়িত রয়েছেন। তিনিসহ কয়েকজন কর্মকর্তা ফারুককে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। যে কারণে তার বিরুদ্ধে কোনও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি জানানো হয়নি।

তবে নগর ভবনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত ওমর ফারুক।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক কোনও কথা বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে জানতে হলে বাংলা ট্রিবিউনকে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত আবেদন করতে বলেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ওমর ফারুক দাবি করেন, ‘আমি নিখোঁজ নই। নিয়মিত সিটি করপোরেশনে যাই। কিন্তু আমি অসুস্থ। আমি করোনায় আক্রান্ত ছিলাম। সুস্থ হলে নগর ভবনে যাবো। তখন লেনদেন বুঝিয়ে দেবো।’

কিন্তু এতদিন ধরে কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে না জানিয়ে সরকারি রাজস্ব নিজের কাছে রাখা যায় কিনা এমন প্রশ্নের বাজাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার অফিসাররা জানেন।’

এর আগে, ডিএসসিসি’র অঞ্চল-৪-এর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে রেভিনিউ সুপারভাইজার ফাহিম উদ্দিনের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। ঘটনার সত্যতা মিললে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধানে নামে। ঘটনার সত্যতা পায় দুদকও। তার থেকে প্রায় ৮৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

তবে ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে জানানোর জন্য ধন্যবাদ।’ ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

/টিটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার শঙ্কা এজেন্সি মালিকদের
গরমে পানির সংকট রাজধানীতে, যা বলছে ওয়াসা
পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে
সর্বশেষ খবর
দেশজুড়ে এমপিরাজ শুরু হয়েছে: রিজভী
দেশজুড়ে এমপিরাজ শুরু হয়েছে: রিজভী
স্কুল ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
মোদি ও রাহুলের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ, ইসির নোটিশ
মোদি ও রাহুলের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ, ইসির নোটিশ
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের