X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘ছাত্র রাজনীতিকে আমি সহশিক্ষা বলব’

আবিদ হাসান
০৫ জুন ২০২১, ২৩:১৬আপডেট : ০৫ জুন ২০২১, ২৩:১৬

দেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা, ক্যাম্পাসে ভিন্নমতের চর্চা ও ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রমের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে ছাত্র সংগঠনের কী ভূমিকা ছিল? ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে এটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ইকবাল হোসেন শ্যামল: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন ও স্বাধীনতা অর্জনের প্রেক্ষাপট তৈরিতে ছাত্র সংগঠনগুলো জোরালো ভূমিকা রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়েও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে সরকার যখন স্বৈরাচারী মনোভাব দেখিয়েছে বা দেখাতে চেয়েছে, অগণতান্ত্রিকভাবে জনমতের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ছাত্র সংগঠনগুলো ওই সরকারকে চ্যালেঞ্জ করেছে। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন এবং ১/১১-এ ছাত্র সংগঠনগুলো আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধেও ছাত্র সংগঠনগুলো কথা বলছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আগামীর ৫০ বছর কেমন আশা করেন?

ইকবাল হোসেন শ্যামল: স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আমি মনে করি মুক্তিযুদ্ধের যে মূল আকাঙ্ক্ষা তথা গণতন্ত্র- তা আমরা পাইনি। গণতন্ত্রের যে মূল উপকরণ-জনগণের প্রত্যক্ষ ভোট, জনগণের ভোটাধিকার, সেই অধিকার এই সরকার খর্ব করেছে। ৫০ বছরেও আমরা পরিপূর্ণ স্বাধীনতা পাইনি। জনগণের মৌলিক অধিকার প্রত্যক্ষ ভোট, তা নিশ্চিত করতে পারিনি। আমরা আশা করি, দেশের জনগণের ভোটের অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠা করবো, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবো।

বাংলা ট্রিবিউন: ক্যাম্পাসে রাজনীতির সংস্কৃতির পরিবর্তন আসছে কি? কী পরিবর্তন দেখছেন?

ইকবাল হোসেন শ্যামল: ছাত্র রাজনীতিকে আমি সহশিক্ষা বলব। আমি মনে করি শুধু ক্লাসরুমে শিক্ষকের লেকচারে শিক্ষাটা সীমাবদ্ধ থাকা উচিৎ নয়। ছাত্র রাজনীতিকে আমি সামাজিক কার্যক্রম বলতে চাই। ক্যাম্পাসে সহাবস্থান যতটা আশা করি তার সিংহভাগই অনুপস্থিত। ক্যাম্পাস মুক্তচিন্তার জায়গা হবে, স্বাধীনভাবে আমি আমার মত প্রকাশ করবো। বর্তমানে ক্যাম্পাসে সেই পরিবেশ নেই। রাজনীতি সংস্কৃতির পরিবর্তন আসেনি। আশির দশকেও ছাত্র সংগঠনগুলো রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে সহাবস্থানের রাজনীতি করেছিল। কিন্তু বর্তমানে ভিন্নমতের কোনও সংগঠনকে আমরা লালন করতে পারি না, ধারণ করতে পারি না।

বাংলা ট্রিবিউন : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ওপর রাজনৈতিক প্রভাব কেমন?

ইকবাল হোসেন শ্যামল: রাজনৈতিক প্রভাব অবশ্যই আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন একটা 'খয়ের খা' প্রশাসন। এই প্রশাসন সরকারের অনুগত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রশাসনের কাছ থেকে নিরপেক্ষ আচরণ সাধারণ শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না। আমাদের সুন্দর ক্যাম্পাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপরই আস্থা রাখতে হবে। সেই আস্থার জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেই। রাজনৈতিক দোষে দুষ্ট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছে না। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনির্মাণ করতে পারছে না।

বাংলা ট্রিবিউন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষে পা দিলো, এতদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি কোন দিকে?  ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন।

ইকবাল হোসেন শ্যামল: পূর্ব বাংলার মানুষের আর্থসামাজিক মুক্তির জন্যই মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। শত বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই উদ্দেশ্যের অনেকটাই পূরণ করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই রচিত। তবে বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমরা হতাশ। বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান অনেক নিচে। রাজনৈতিক প্রভাব আছে বলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান আরও নামছে। যখন সকল মতের জন্য ক্যাম্পাস হবে তখন শিক্ষার পরিবেশেরও উন্নতি হবে।

বাংলা ট্রিবিউন : এখনকার ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রমকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? সহাবস্থান আছে?

ইকবাল হোসেন শ্যামল: সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাড়া সকল সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপরই রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম খুবই সীমিত। ছাত্র সংগঠনগুলোর নির্বাচন দীর্ঘদিন হচ্ছে না। সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনগুলো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অন্যদের কার্যক্রমগুলোকে সীমিত করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমিত পরিসরে সহাবস্থান আছে। এটাকে সহাবস্থান বলা যাবে না। কারণ প্রতিনিয়তই তারা আমাদের ওপর হামলা করছে। আমাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে।

বাংলা ট্রিবিউন : হলগুলোতে ক্ষমতাসীনদের একক আধিপত্য রয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ, এ বিষয়ে কী বলবেন?

ইকবাল হোসেন শ্যামল : এর সঙ্গে আমিও একমত। ভিন্নমতের কাউকেই স্থান দেওয়া হচ্ছে না। একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শের বাইরে গেলে কাউকেই হলে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না।

বাংলা ট্রিবিউন : ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ভিন্নমত গ্রহণের প্রবণতা আছে?

ইকবাল হোসেন শ্যামল: ভিন্নমত থাকবেই। আমরা ভিন্নমতকে সম্মান করি। আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি। বর্তমানে কিছু কিছু সংগঠনের মধ্যে ভিন্নমত গ্রহণের প্রবণতা কমেছে। তারা অন্য মত কিছুতেই সহ্য করছে না। এটা আশঙ্কার জায়গা। এটা অবশ্যই শিক্ষার পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করলো ইরান, তদন্ত চলছে
ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করলো ইরান, তদন্ত চলছে
শিল্পী সমিতির নির্বাচন, মিশা-ডিপজলে কুপোকাত কলি-নিপুণ
শিল্পী সমিতির নির্বাচন, মিশা-ডিপজলে কুপোকাত কলি-নিপুণ
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক
ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক