X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিতু হত্যা মামলা, তদন্তেই পাঁচ বছর পার

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
০৬ জুন ২০২১, ১১:০২আপডেট : ০৬ জুন ২০২১, ১৪:২২

আলোচিত সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল (৫ জুন)। ২০১৬ সালের ৫ জুন হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ পাঁচ বছর পার হলেও এখনও বিচার পায়নি তার পরিবার। ঘটনা তদন্ত করতেই এই পাঁচ বছর পার করে দিয়েছে পুলিশ। শুরুতে বাবুল আক্তারের জঙ্গিবিরোধী তৎপরতার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে ধারণা করা হলেও এখন তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তার নিজেই জড়িত। ভারতীয় এক নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে বাবুল নিজেই তার স্ত্রীকে খুন করান। তবে তদন্তে এটি এখনও সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়নি। ফলে মামলাটির বিচার কাজ এখনও ঝুলে আছে তদন্তে।

দুই দফায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের পর এখন মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)। তাদের তদন্তেই বাবুলের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসে। এ বিষয়ে পিবিআই অনেক তথ্য প্রমাণও সংগ্রহ করেছে। তবে তারাও এখন পর্যন্ত এই মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।

এ বিষয়ে জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও ধরেননি।

নিজের জীবদ্দশায় মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন। পুলিশের এই সাবেক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মৃত্যুর আগে মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই। আমি আগে থেকেই বলে আসছিলাম, বাবুল আক্তার মিত্যু হত্যার সঙ্গে জড়িত। এখন পিবিআইয়ের তদন্তে তার সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়েছে। আমার মেয়েকে যারা হত্যা করেছে তাদের শাস্তি চাই।’

নুসরাতের মতো মিতু হত্যার বিচার দ্রুত হোক দাবি করে তিনি বলেন, ‘নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার মামলায় যদি ৬১ কার্যদিবসে আসামিদের ফাঁসির আদেশ দেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে মিতু হত্যার বিচার কেন এত বিলম্বিত হচ্ছে? আমি চাই, মেয়ে হত্যার বিচার নুসরাত হত্যার বিচারের মতো দ্রুত হোক।’

এদিকে মিতুর বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন মিতু হত্যা মামলার দ্রুত বিচার দাবি করলেও খুব সহসায় এটি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। ঘটনার পর থেকে কিলিং মিশনের কথিত মাস্টারমাইন্ড মিতু হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি কামরুল ইসলাম ওরফে মুছা নিখোঁজ থাকায় হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনে অন্যান্য তথ্য উপাত্তের ওপর নির্ভর করতে হবে পুলিশকে।

অন্যদিকে অন্য নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জের ধরে বাবুল যে মিতুকে খুন করিয়েছেন, সেটিও এখনও সুনিশ্চিত হওয়া যায়নি। যদিও এ বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে অনেক তথ্য আছে। এরপরও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সুনিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভারতীয় ওই নারীর তথ্য চেয়ে জাতিসংঘের ইউএনএইচআর-এ চিঠি পাঠিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এর আগে একই বিষয়ে সাক্ষ্যআইনে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বাবুলের দুই পরিচিত ব্যক্তি। জবানবন্দিতে তারা জানিয়েছেন, মিতুকে খুন করাতে বাবুল মুছাকে ৩ লাখ টাকা দিয়েছেন। ওই টাকা বাবুল অন্য একজনকে দিয়ে বিকাশে মুছার কাছে পাঠান। এই ৩ লাখ টাকা বাবুল আক্তার মিতুকে হত্যার জন্য দিয়েছেন নাকি অন্য কারণে দিয়েছেন সেটিও এখনও প্রমাণিত হয়নি।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন চট্টগ্রামে বিভিন্ন জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু। ওই দিন সকাল ৭টায় জিইসি মোড়ের ওয়েল ফুড শোরুমের সামনে তাকে ছুরিকাঘাতের পর গুলি চালিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায় তিন মোটরসাইকেল আরোহী। মিতু হত্যাকাণ্ডের তিন সপ্তাহ পর মো. ওয়াসিম ও মো. আনোয়ার নামের দুই আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। দুই জন জবানবন্দিতে বলেন, কামরুল শিকদার ওরফে মুসার নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ডে তারা সাত-আট জন অংশ নেন। বাবুল চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনের সময় মুছা তার ঘনিষ্ঠ সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজেও তাদের হত্যাকাণ্ডে অংশ নিতে দেখা যায়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মুছা, কালু, ওয়াসিম, আনোয়ার ও নবী সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছেন।

হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় তিন জনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। বাবুল তখন চট্টগ্রাম থেকে বদলি হয়ে ঢাকায় পুলিশ সদর দফতরে এসপি (পুলিশ সুপার) পদে সংযুক্ত ছিলেন। মাহমুদা হত্যাকাণ্ডের মোড় ঘুরতে শুরু করে ২০১৬ সালের ২৪ জুন ডিবি কার্যালয়ে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের পর। এ সময় হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, বাবুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে চাকরিচ্যুত করা হলো। এর আগে একই বছরের ১১ জুন নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কাজী রকিবউদ্দিনকে সরিয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামানকে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে। এরপর চার বছর পার হলেও চাঞ্চল্যকর এই মামলার কোনও কূল-কিনারা করতে পারেনি তারা। সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান এ মামলায় চার্জশিট দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই।

ওই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্তা পায় পিবিআই। গত ১২ মে পিবিআই এই মামলায় ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়। প্রতিবেদনে পিবিআই বলছে, মিতু হত্যা ছিল কন্ট্রাক্ট কিলিং। বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় এটি সংঘটিত হয়। মিতুকে হত্যার জন্য তিন লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে বলে তারা জানান। এরপর একইদিন নগরীর পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন। পরে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ওইদিন তাকে আদালতে তুলে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পিবিআই। শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট সরোয়ার জাহানের আদালত বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। রিমান্ড শেষে বর্তমানে বাবুল আক্তার ফেনী কারাগারে রয়েছেন।

/আইএ/
সম্পর্কিত
কোন পর্যায়ে আছে মিতু হত্যা মামলা
আদালতে সাক্ষী মোস্তাইন বললেনবাবুল আক্তারের সোর্স মুছাকে পাঠানো হয় ৪৯ হাজার টাকা
বাবুলের নির্দেশে মিতুকে হত্যা, আদালতকে নিখোঁজ মুছার স্ত্রী
সর্বশেষ খবর
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা