আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমি তাদের কথার কী উত্তর দেবো, তাদের কথায় এখন ঘোড়াও হাসে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও করোনা—এই দুই শত্রু দেশের সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে।’
বুধবার (৯ জুন) রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় জিয়া স্মৃতি পাঠাগার ও জাতীয়তাবাদী প্রকাশনা সংস্থার যৌথ উদ্যোগে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বইমেলা উদ্বোধন করার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, ‘আগের কথা বলছি, পুরনো ঢাকায় ঘোড়ার গাড়ি আছে না, ট্রেন থেকে নেমেই আমরা ওইসব ঘোড়ার গাড়িতে করে হলে যেতাম। ফুলবাড়ীয়া ট্রেন স্টেশন থেকে এসএম হলে ঘোড়া গাড়ির ভাড়া ছিল ৪ আনা। আমরা বলতাম দুই আনা দেবো, বারগেন করতাম।’
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য প্রসঙ্গে ফখরুল আরও বলেন, ‘‘গাড়ির চালক ঘোড়ার লাগামটা টান মারতো। আর ঘোড়াটা হু হু করে উঠতো, ঘোড়া একটা শব্দ করতো। তখন চালক বলতো—‘আপনার কথায় তো ঘোড়াও হাইসা ওঠে।’ আসলে ব্যাপারটা এমন যে ওবায়দুল কাদের সাহেবদের কথায় এখন ঘোড়াও হাসে। কী বলে না বলে তারা জানেন না। আর মিথ্যা বলতে বলতে এমন একটা জায়গায় চলে গেছেন, ওই যে গোয়েবলসীয় প্রচারের মতো।”
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গোয়েবলস ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসিবাদী ফ্যাসিস্ট হিটলারের প্রচারমন্ত্রী। আপনাদের হাছান মাহমুদদের মতো। অনর্গল মিথ্যা বলেই যাচ্ছেন। অবলীলায় খুব শান্ত মেজাজে বলেন। কিন্তু জোরে বলেন না, রাগ করে বলেন। মনে হয় যেন ঠিকই বলছেন। এটাকেই বলে গোয়েবলসীয় প্রচার। মিথ্যা প্রচার করতে করতে তারা জিয়াউর রহমানকে এখন মুক্তিযোদ্ধা দূরের কথা, স্বাধীনতার ঘোষক দূরের কথা, বলে পাকিস্তানের চর ছিল। এটাতে সবাই হাসে। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে তারা ইতিহাসকে এভাবে বিকৃত করছে।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘সেজন্য আমি সবাইকে বলবো, প্রকৃত ও সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে বারবার বলতে হবে। আমরা সুর্বণজয়ন্তী পালন করছি, অনেক অনুষ্ঠান করেছি। আরও করবো। সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। আজকে জিয়াউর রহমানকে যত চেষ্টা করুক মুছে ফেলতে, মুছে ফেলা যাবে না কখনও। তিনি আমাদের রক্তে, মজ্জায় চলে গেছেন। তার জন্য আমাদের কোনও সাইন লাগে না, সংবিধান লাগে না। আমাদের মানুষের মাথায় মাথায়, মগজে মগজে, হৃদয়ে হৃদয়ে, রক্ত কনিকায় চলে গেছেন। জিয়াউর রহমান এ দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন, এ দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বটমলেস বাস্কেটটাকে তিনি ওপরে টেনে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। এসব বললে তাদের (আওয়ামী লীগ) মেজাজ খারাপ হয়।’
অনুষ্ঠানে ‘করোনা এবং আওয়ামী লীগ দেশের শত্রু’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘দেশে এখন দুই শত্রু—একদিকে আওয়ামী লীগ শত্রু, আরেক দিকে করোনা শত্রু। এই শত্রু, এই দুই দানব তছনছ করে দিচ্ছে আমাদের সবকিছু। সেজন্য আমরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। কিন্তু এটাকে আমাদের জয় করতে হবে তো।’
তিনি যোগ করেন, ‘‘শুনেন, পৃথিবীর সমস্ত বড় বড় বিজয়, বড় বড় বিপ্লব, বড় বড় অর্জন কিন্তু একটা স্লোগানে—‘আমরা করবো জয়’, এই স্লোগান দিয়েই আমাদের জয় করতে হবে।”
নেতাকর্মীদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভাই, শর্টকাট কোনও রাস্তা নেই। একটা যুদ্ধ যখন করতে হবে, সেই যুদ্ধে আপনাকে পুরোপুরিভাবে ইকুইপ্ট হতে হবে। যুদ্ধ করতেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘এরা আপনাদের এমনি এমনি ক্ষমতা দিয়ে দেবে না। এরা একেবারে ডিক্টেটর বনে গেছে। কর্তৃত্ববাদী বনে গেছে এবং জানে যে নির্বাচন করে তারা কোনও দিন জিততে পারবে না। সুতরাং, নির্বাচন নির্বাচন খেলা করবে, নির্বাচনের নাটক করবে, তামাশা করবে। কিন্তু সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে তারা নিজেদের জয়ী করবে। যেমন ২০১৮-তে করেছে, যেমন ২০১৪-তে করেছে।’
