X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে সাহানের প্ল্যান্ট

বরিশাল প্রতিনিধি
০৯ জুন ২০২১, ১৮:০৫আপডেট : ০৯ জুন ২০২১, ১৮:০৫
image

সড়ক থেকে প্রেশারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্মার্ট সোলার হাইওয়ে অ্যান্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট উদ্ভাবন করেছেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার শিক্ষার্থী মোসলেউদ্দীন সাহান। উপজেলার মাহিলাড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাস করা সাহান বছরের সেরা মেধাবী এবং সৃজনশীল মেধা অন্বেষণে একাধিকবার প্রথম স্থান অর্জন করেছেন।

সাহানের উদ্ভাবন করা এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে সড়ক নির্মাণে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কয়লা ও পিচের ব্যবহার না করে ন্যানো-টেকনোলজির তৈরি সোলার সেল ব্যবহার হবে। এতে করে সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে দুই কোটি টাকা সাশ্রয় হবে, বাড়বে স্থায়িত্ব।

মোসলেউদ্দীন সাহান ২০১৬ সালে সরকারি গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় স্মার্ট সোলার হাইওয়ে অ্যান্ড পাওয়ার প্ল্যান্টের কাজ শুরু করে ২০১৭-তে শেষ করেন। গত দুই বছর ধরে এ প্রজেক্ট নিয়ে পরীক্ষা করে হয়েছেন সফল। সাহান আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার মোখলেছুর রহমানের ছেলে ও গৈলা ইউনিয়নের কালুপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে বরিশাল নগরীর কলেজ এভিনিউ এলাকায় বসবাস করেন।

সাহান বলেন, আমাদের দেশে মূলত কয়লা, পিচ ও বিটুমিন দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়। কয়লা এবং পিচ যখন পোড়ানো হয় তখন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন গ্যাস যেমন-কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন হয়, যা মোটেও পরিবেশ বান্ধব নয়। যে জ্বালানি দিয়ে কয়লা ও পিচ পোড়ানো হয় এতে যদি সালফারের যৌগ থাকে তাহলে তা পরিবেশের জন্য অ্যাসিড বৃষ্টি সৃষ্টিকারী গ্যাস যেমন- সালফার ডাই অক্সাইড, সালফার ট্রাই অক্সাইড উৎপন্ন করে যা মোটেও পরিবেশ বান্ধব নয়।

তিনি বলেন, কিন্তু এ স্মার্ট সোলারে হাইওয়ে তৈরিতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনও পদার্থ ব্যবহার করা হবে না। রাস্তা তৈরি করতে ন্যানো-টেকনোলজির তৈরি সোলার সেল ব্যবহার করা হবে যা মূলত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন। তাছাড়া স্মার্ট সোলার হাইওয়ে হচ্ছে একটি পরিবেশ বান্ধব এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস। এই রাস্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, এটা মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম।

এই রাস্তা তিন উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। সূর্যের আলোর মাধ্যমে, মানুষের চলাচলের সময় যে ঘর্ষণ উৎপন্ন হয় তার মাধ্যমে এবং মানুষ ও গাড়ির প্রেশারকে কাজে লাগিয়ে।

শক্তির নিত্যতা সূত্র অনুসারে শক্তির সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই। কিন্তু শক্তিকে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তন করা সম্ভব। সে অনুযায়ী প্রেশারকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করা হবে। এই রাস্তা প্রাথমিক অবস্থায় ৩০ টন পর্যন্ত চাপ নিতে সক্ষম। আর সোলার হাইওয়ে দিয়ে যখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে তখন মানুষের তড়িৎপৃষ্ট হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ এখানে সেমি পারমিত্রবেল ম্যাট্রিক্স টেকনোলজি, পলিক্লিস্টালিন টেকনোলজি এবং পলিকার্বনেট টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে।

এই রাস্তার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এই সূর্যের আলোর মাধ্যমে দুই কিলোমিটার রাস্তা থেকে ৬ হাজার ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব এবং মানুষের চলাচলের মাধ্যমে ও গাড়ির প্রেশারকে কাজে লাগিয়ে পিজো ইলেকট্রিক এফেক্টের মাধ্যমে আলাদাভাবে বছরে ১৫ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। প্রেশারকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্নের বিষয়টা সম্পূর্ণ নির্ভর করে রাস্তায় কী পরিমাণ গাড়ি চলাচল করছে এবং কেমন প্রেশার পড়ছে এর উপর।

এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সরকার প্রতি এক কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৬ কোটি টাকা খরচ করে। কিন্তু স্মার্ট সোলার হাইওয়ে তৈরি করতে ৪ কোটি টাকাই যথেষ্ট। এছাড়া পিচের রাস্তার স্থায়িত্ব ২৫ থেকে ৩০ বছরের কথা থাকলেও এর আগেই নষ্ট হয়ে যায়। কারণ বিটুমিনের সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে পানি। বিটুমিন যখনই পানির সংস্পর্শে আসে তখনই দেখা যায় পিচ বা কয়লার তৈরি রাস্তা ভাঙতে শুরু করে। কিন্তু এ স্মার্ট সোলার হাইওয়ের এমন কোনও ক্ষতিকারক দিক নেই। কারণ এই রাস্তা তৈরি করতে কোনও ধরনের পিচ বা কয়লার ব্যবহার করা হচ্ছে না।

স্মার্ট সোলার হাইওয়ে হচ্ছে, একটি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস এবং পৃথিবীতে যতদিন পর্যন্ত সূর্যের আলো থাকবে এবং এই রাস্তা থাকবে ততদিন বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এই রাস্তার স্থায়িত্বকাল হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ বছর।

এ বিষয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হাশেম বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্মার্ট সোলার হাইওয়ে অ্যান্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট বাংলাদেশকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। তার এই প্রজেক্টকে আরও আধুনিকভাবে তৈরি করার লক্ষ্যে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। সে বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

২০১৫ সালে উপজেলা পর্যায়ে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন সাহান। ২০১৭ সালে উপজেলা, জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান, জাতীয় পর্যায় বছরের সেরা মেধাবী নির্বাচিত হয়ে পদক পান। ২০১৯ সালে উপজেলা, বরিশাল মহানগর ও বিভাগ পর্যায় সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান এবং জাতীয় পর্যায়ে বছরের সেরা মেধাবী নির্বাচিত হয়।

২০১৭ সালে ৩৮তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান দখল করেন সাহান। ২০১৭ সালে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে প্রথম হন। ২০১৮ সালে জাপান সরকারের আমন্ত্রণে সাকুরা সায়েন্স একসেন্স প্রোগ্রামে ৮ দিনের জন্য অংশগ্রহণ করেন এবার এইচএসসি পাস করা সাহান।

/এফআর/
সম্পর্কিত
বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে প্রধানমন্ত্রীর অবদানের কারণে মেধাবীরা দেশে ফিরছেন: তাপস
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্র খুঁজতে কমিটি গঠন
ডেঙ্গু টিকার ‘কার্যকরী’ তথ্য পেয়েছে আইসিসিডিডিআর,বি এবং ইউভিএম
সর্বশেষ খবর
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
গরমে পানির সংকট রাজধানীতে, যা বলছে ওয়াসা
গরমে পানির সংকট রাজধানীতে, যা বলছে ওয়াসা
গরমে নাকাল পথচারীদের জন্য পানির ব্যবস্থা করলো ফায়ার সার্ভিস
গরমে নাকাল পথচারীদের জন্য পানির ব্যবস্থা করলো ফায়ার সার্ভিস
বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা
বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়