X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইসরায়েলি বোমা নিষ্ক্রিয় করছে ফিলিস্তিনিরা

বিদেশ ডেস্ক
১০ জুন ২০২১, ১৫:৫৭আপডেট : ১০ জুন ২০২১, ১৬:০২

গাজা উপত্যকায় সাম্প্রতিক ইসরায়েলি আগ্রাসনের দগদগে ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। দখলদার বাহিনীর টানা ১১ দিনের ওই তাণ্ডবের আপাত পরিসমাপ্তি ঘটেছে। কিন্তু শেষ হয়নি ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা। গাজায় এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বহু বিপজ্জনক অবিস্ফোরিত ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র। আর শক্তিশালী এসব ক্ষেপণাস্ত্রের ওপরই খেলায় মেতেছে কোমলমতি শিশুরা। ঝুঁকি এড়াতে ক্ষেপণাস্ত্র অপসারণে জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছে স্থানীয় বোমা নিষ্ক্রিয়কারী টিম। কোনও হতাহত ছাড়াই এ পর্যন্ত ১২শ’ বোমা নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হয়েছে তারা।

ঝুঁকি নিয়ে ইসরায়েলি বোমা নিষ্ক্রিয় করছে গাজার বিশেষজ্ঞ দল

১৯-মে, মধ্যরাত। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার রাফার বাসিন্দা মুহারেবের পরিবার যে বাড়িটিতে থাকেন ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সেটি কেঁপে উঠে। এর দুই মিনিটের মাথায় আরেকটি দোতলা বাড়িকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে দখলদার বাহিনী। তবে কোনও কারণে দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি বিস্ফোরিত হয়নি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার কাছে সেদিনের ইসরায়েলি বর্বরতার চিত্র তুলে ধরেছেন ওয়াসিম মুহারেব। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই এবং তার পরিবার দ্বিতীয় তলায় থাকতাম। ইসরায়েলি বোমা হামলায় সেদিন আমরা সবাই গুরুতর আহত হয়েছিলাম। আমার চার মাসের সন্তান দুই দিনের জন্য কোমায় চলে গিয়েছিল। আট বছর বয়সী আমার ভাগ্নি লেয়ান টানা ১০ দিন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছে। শরীরের বেশিরভাগ জায়গা পুড়ে যায়।’

ওয়াসিম জানান, ‘ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভবন পুরোপুরি মিশে গেছে। কোনও ধরনের সতর্ক সংকেত না দিয়েই বিমান থেকে বোমা পড়ছিল। তিন মিনিটের ব্যবধানে সব কিছুই শেষ হয়ে যায়।’ সবকিছু হারিয়ে এখন ভাড়া বাড়িতে উঠেছেন ওয়াসিম।

গত রমজান মাসের শেষ শুক্রবার জুমাতুল বিদা উপলক্ষে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদে জড়ো হলে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি পুলিশ। পরদিন পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাতেও থেমে ছিল না দখলদার বাহিনীর তাণ্ডব। এতে শত শত ফিলিস্তিনি আহত হয়। ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাবে মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিরা রকেট হামলা চালিয়েছে; এমন অভিযোগে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা শুরু করে দখলদার বাহিনী। জবাবে রকেট হামলা চালিয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ১১ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতে ৬৬ শিশুসহ ২৬০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দখলদার বাহিনী। হামাসের পাল্টা প্রতিরোধে ইসরায়েলে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তাদের কাছে নেই কোন আধুনিক প্রযুক্তি

অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের চাপে মিসরের মধ্যস্থতায় গত ২১ মে থেকে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায় ইসরায়েল। ভয়াবহ ঝুঁকি গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় কাজ করা এজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মিকাদ। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, অত্যাবশকীয় প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জামের অভাব সত্ত্বেও গত ১০ মে থেকে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের ৭০ জন্য সদস্য কাজ করে যাচ্ছেন। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

তিনি জানান, ‘বোমা অপসারণের জন্য আমাদের কাছে তেমন কোনও সুরক্ষা সরঞ্জাম নেই বললেই চলে। সাধারণ সরঞ্জাম রয়েছে যেমন, একটি টুল বক্স যা প্রতিটি ঘরেই পাওয়া যায়।’ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মিকাদ বলেন, ‘গাজায় গত ১৩ বছর ধরে ইসরায়েল অবরোধে দিয়ে রেখেছে। আর এতে আমাদের অনেক বিধি-নিষেধের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। ফলে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী যন্ত্র আমাদানিও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এখন সবচেয়ে চিন্তার বিষয় আমাদের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ তারা পরবর্তীতে ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

মিকাদের দাবি, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যাকায় এবার নতুন ধরনের বিপজ্জনক অস্ত্র প্রথমবারের মতো প্রয়োগ করে ইসরাইয়েলি বাহিনী। এর মধ্যে জিবিইউ-৩১ এবং জয়েন্ট ডিরেক্ট অ্যাটাক মিউনটিউশন-জেডিএএম-এর মতো বিস্ফোরক রয়েছে। দুই টন ওজনের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল বহুতল ভবন, আবাসিক ভবন ছাড়াও সংবাদমাধ্যমের অফিসে।

১১ দিনের ইসরায়েলি তাণ্ডবে বোমার আঘাতে গাজার বহু অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। ১৮শ’ হাউজিং ইউনিট, ৭৪টি সরকারি ভবন এবং ৫৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ৩৩টি মিডিয়া হাউস গুঁড়িয়ে দিয়েছে দখলদার বাহিনী। একটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট ধ্বংস করে দেওয়া সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আড়াই লাখ মানুষ।

প্রশিক্ষণ এবং মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা ১৯৯৬ সালে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গাজা শাসনকালে বোমা নিষ্ক্রিয় ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। প্রথম দলটি যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পায়। পরে ২০০৬ সালে আরও ইঞ্জনিয়ার ও টেকনিশিয়ান যুক্ত করে দলটিকে অধিক শক্তিশালী হতে সাহায্য করে। প্রকৌশলী মিকাদ বলেন, এখন দলটি নিজস্ব পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। কারণ গত ১০-১১ বছর ধরে গাজার বাইরে থেকে দলটি কোনও ধরনের সহায়তা পায়নি। গত আট বছর ধরে এই দলের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন আসাদ আল-আলওয়াল। তার ভাষায়, ‘প্রতিদিনই আপনি মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখছেন, কিন্তু সৃষ্টিকর্তাই রক্ষা করবেন। সাধারণ মানুষকে বাচাঁতে গিয়ে যদি প্রাণও যায় তবে তা হবে সম্মানের।’ সূত্র: আল জাজিরা।

/এলকে/এমপি/
সম্পর্কিত
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে ইসরায়েল?
ইসরায়েলের আকরে শহরে হামলার দাবি করলো হিজবুল্লাহ
উত্তর গাজায় আবারও হামলা জোরদার করলো ইসরায়েল
সর্বশেষ খবর
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
চুরি করা গরুসহ ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা, আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা
চুরি করা গরুসহ ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা, আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে  ইসরায়েল?
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে ইসরায়েল?
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা