প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর কর আরোপের প্রস্তাব বাতিলের দাবিতে গেল এক সপ্তাহ ধরেই শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে। এতদিন এসব প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সীমিত আকারে হলেও আগামী কয়েকদিনে তা শক্ত কর্মসূচিতে রূপ নিতে পারে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থী ও সংগঠকদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
ছাত্রনেতারা বলছেন, এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ১০ শতাংশ ভ্যাটের প্রস্তাব করার পর ঢাকাসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পরে সরকার বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৫ শতাংশ কর আরোপ করায় এই বিক্ষোভ আরও জোরদার হবে।
করোনার সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এই মুহূর্তে সীমিত পরিসরে বিক্ষোভ হলেও ছাত্রনেতারা বলছেন, খুব সহসাই তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচির দিকে যাবেন।
শুক্রবার (১১ জুন) রাজধানীর রামপুরা ব্রিজে ‘নো ট্যাক্স অন এডুকেশন’ এর ব্যানারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর যে ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
তারা বলছে, আইনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। সরকার যতই বলুক- বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এই ট্যাক্স দিতে হবে। কিন্তু আমরা নিশ্চিতভাবেই জানি, এর পুরোটা আসলে শিক্ষার্থীদের উপরে চাপানো হবে। আমরা অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানাই।
কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হান হৃদয়, তামজীদ হায়দার চঞ্চল, দীপা মল্লিকসহ অনেকে।
রামপুরার মতো রাজধানীর ধানমন্ডি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেও কর আরোপের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর একাধিকনেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর বসানোর সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের উভয়গ্রুপ, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংগঠন কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন, নো ট্যাক্স অন এডুকেশন’সহ বিভিন্ন ব্যানারে কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।
একাধিক ছাত্রনেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কর বিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচি দেখা যাবে। এ ছাড়া ২০১৫ সালে ছাত্র আন্দোলনে যারা সক্রিয় ছিলেন, তাদেরও সংগঠিত করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন একাধিক দায়িত্বশীল নেতা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘নো ট্যাক্স অন এডুকেশন’-এর একজন সংগঠক বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সৈকত আরিফ শুক্রবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৫ সালের মতো সরকার এবারও শিক্ষার্থীদের স্বার্থের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের জন্য বাজেট প্রণয়ন করলেও সেই বাজেটে শিক্ষার্থীরা উপেক্ষিত। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট দেওয়ার মানেই হচ্ছে এই অর্থ শিক্ষার্থীদেরই পরিশোধ করতে হবে। তাদের খরচ বাড়ানো হবে, টিউশন ফি বৃদ্ধি করা হবে ইত্যাদি।'
সৈকত আরিফ বলেন, ‘ছাত্র সমাজ সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হতে দেবে না। আমরা সারাদেশের ছাত্রসমাজকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষাবিরোধী এই প্রস্তাব বাতিল করবো।’