X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাতানো খেলা, বোঝাপড়ার জীবন

তুষার আবদুল্লাহ
১২ জুন ২০২১, ১৪:২০আপডেট : ১২ জুন ২০২১, ১৪:২০

তুষার আবদুল্লাহ শুক্রবার দুপুর থেকে অবয়ব-নগরের নাগরিকেরা দু’ভাগে বিভক্ত। এমন বিভক্তি তাদের মাঝে নিত্য তৈরি হয়। যে কোনও ঘটনার ছুতো ধরে। এক সাকিব আল হাসানকে নিয়েইতো কত গোত্র তৈরি হলো অবয়ব-শহরে। শুক্রবারের উপলক্ষও সাকিব। একটি আউটের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দেননি বলে তিনি লাথি দিয়ে স্ট্যাম্প ভেঙেছেন। আপাত দৃষ্টিতে মাঠে তার আচরণ খেলোয়াড় সুলভ ছিল না। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে আবাহনীর কর্মকর্তা খালেদ মাহমুদ সুজনের সঙ্গেও। সাকিবের এই আচরণকে এক পক্ষ দেখেছেন উদ্ধত আচরণ হিসেবে। সাকিব এর আগেও বিসিবি’র নেতৃত্ব ও ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছেন। বিসিবির বিরুদ্ধে খেলোয়াড়দের যে আন্দোলন বা ক্ষোভ, সেখানেও সমর্থন জুগিয়ে সামনে ছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও হারিয়ে যাননি, নানা কথা ও কাজে ছিলেন আলোচনায়। জাতীয় দলের সঙ্গে শ্রীলংকায় টেস্টে যোগ না দিয়ে আইপিএল-এ থাকায়, হয়েছেন সমালোচিত। লাথি দিয়ে স্ট্যাম্প ভাঙার ঘটনায়, সাকিবের নেতিবাচক ঘটনাগুলো প্রসঙ্গক্রমে সামনে নিয়ে এসেছেন এক পক্ষ। আরেক পক্ষ সাকিবের এই আচরণকে সাহসী বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাদের মতে, ঘরোয়া ফুটবল, ক্রিকেটের আসরে দিনের পর দিন পাতানো ম্যাচ আয়োজন করা হচ্ছে। টাকা বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে ছোট, মাঝারি দলের কাছ থেকে বড় বা প্রভাবশালী দল পয়েন্ট নিয়ে নিচ্ছে। আবার পক্ষপাতমূলক রেফারিং, আম্পায়ারিংয়ের মাধ্যমেও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে পয়েন্ট। গণমাধ্যম একাধিকবার এ ধরনের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার পরেও বন্ধ হয়নি এমন আয়োজন। খেলার জগৎ থেকে আসেনি কোনও প্রতিবাদ। পাতানো ও বাজে আম্পায়ারিংয়ের কারণে ঘরোয়া ফুটবল, ক্রিকেটের মান নেমে যাচ্ছে। আকর্ষণ হারাচ্ছে টুর্নামেন্ট। ক্রীড়াপ্রেমীরা এরই মধ্যে মনোযোগ সরিয়ে নিয়েছেন ফুটবল, ক্রিকেটের ঘরোয়া আয়োজন থেকে। এমন বাস্তবতায় সাকিবের এই আচরণকে মোক্ষম ও উপযুক্ত প্রতিবাদ হিসেবে দেখেছেন অপর পক্ষ।

মাঝারি একটি পক্ষও আছে– তারা সাকিবের উদ্ধত আচরণ যেমন মেনে নিতে পারেনি, তেমনি তারা মেনে নিতে চাইছে না পাতানো খেলা ও পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিং। তাদের মতে, দুইয়ের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে মাঠে খেলার আবহাওয়া বিরাজমান রাখতে।

মাঠে পাতানো খেলার লক্ষণ আমরা দেখতে পেয়েছিলাম আশির দশকেই। তখন ক্রিকেটের কদর এমন ছিল না। দেশ আন্দোলিত হতো ফুটবলে। আবাহনী-মোহামেডানে বিভক্ত ছিল দেশ। ফুটবলের সেই জোয়ারের সময়েই আঁচ পেয়েছি, সুপার লীগে ওঠা, রেলিগেশন থেকে বাঁচতে কিংবা দ্বিতীয় বিভাগে নেমে যাওয়া ঠেকাতে পাতানো ম্যাচের নিখুঁত আয়োজন কীভাবে সম্পন্ন হতো– গ্যালারিতে বসে চুপচাপ বুঝে নিতাম। কোথাও কোনও হৈ চৈ হতো না। পরিবেশ সুন্দর রাখা হতো। এভাবেই পাতানো ম্যাচের অভ্যাস রপ্ত হতে থাকে খেলার ভুবনে।

পাতানো বা বোঝাপড়ার খেলা শুধু মাঠেই নয়, হয়তো আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল সমাজে, রাষ্ট্রে। ব্যক্তিস্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষায় পারস্পরিক এক বোঝাপড়ার জীবন তৈরি করেছি আমরা। দাম্পত্য থেকে ভোট– বোঝাপড়া সর্বত্র। প্রতিবাদ করে ক্ষমতা বলয় থেকে সটকে পড়তে চাই না। পাওনা বা লোভ বঞ্চিত হতে হবে, যদি প্রশ্ন করি। চ্যালেঞ্জ করি। এক সহমতের সমাজ কাঠামো তৈরি করে নিয়েছি আমরা। বাড়ি, অফিস, সমাজ, রাষ্ট্র কোনও কর্তার দিকেই আঙুল তোলা যাবে না। শুধু তালিয়া বাজাও। তাই বাজিয়ে চলছি আমরা। বোঝাপড়ার একটা সম্পর্ক তৈরি করে, সব কিছু মানিয়ে চলছি। আমি ছাড় দিচ্ছি অনেকটা, কিছুটা পাওয়ার আশায়। দুইয়ে মিলে ভুল, দুইয়ে মিলে অপরাধ করে যাই। এতে ঝুঁকি নেই। একলা হয়ে গেলেই ঝুঁকি। সকল অপরাধ এসে কাঁধে ভর করবে। একলা হতে গিয়ে কতজনই চলে গেছে নির্বাসনে। তবে যিনি যোগ্য, আত্মপ্রত্যয়ী তিনি অপরাধ সইতে পারেন না। বোঝাপড়ার আত্মীয়তায় সম্পর্ক টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না তার পক্ষে।

কিছু সময় সয়ে গেলেও এক সময় ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙে। সমাজ, রাষ্ট্রের স্বার্থেই তাকে প্রতিবাদীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। জানি না সাকিব তেমন কোনও ভূমিকা নিয়ে আর্বিভূত হতে চাইছেন কিনা। তার মনের খবর তিনিই জানেন। তবে এতটুকু বলতে পারি বোঝাপড়া ও পাতানোর যে সমাজ-রাজনীতির কাঠামো তৈরি করেছি আমরা, তারই প্রদর্শন খেলার ময়দানে দেখতে পাচ্ছি। অবশ্য রাজনীতির ময়দানের বোঝাপড়ার খেলা আরও স্পষ্ট। এই বোঝাপড়া ও পাতানোর খেলা বন্ধ করা জরুরি। না হলে সাকিবের মতো ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটার ঘটনা বাড়তেই থাকবে। খেলার ময়দান, সমাজ, রাষ্ট্রে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা থাকুক। যোগ্যরাই পাবে যোগ্য আসন, এই নিয়ম বা ‘বাইলজ’ মেনেই আমাদের চলতে হবে। জেনে রাখা ভালো– পাতানো বা বোঝাপড়া দুর্বলের কৌশল, যোগ্যের নয়।

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ