ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেছেন, ‘আইন সবার জন্য সমান নয়। হেফাজতে ইসলামের নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী একজন ইডিয়ট।’
শনিবার (১২ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশের বড় বড় কর্তাব্যক্তিরাও বলেছেন, শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে জুনায়েদ বাবুনগরী একজন। রাষ্ট্রের যারা আইন প্রয়োগের দায়িত্বে আছেন, তাদের সঙ্গেই বৈঠক করেন বাবুনগরী। তাহলে এখানে তো আইন বৈষম্যমূলক হয়ে গেলো। আইন আমার জন্য এক রকম, সাধারণ মানুষের জন্য আরেক রকম আর বাবুনগরীর জন্য আরেক রকম। একটা অদ্ভুত অবস্থার মধ্যে আছি আমরা।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে এমপি মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটিতে যারা অন্তর্ভুক্ত হন, তারা একজনও ভালো লোক হওয়ার কথা না। তারাও অনেক মামলার আসামি। তাদের তোয়াজ করছেন তারা, যারা রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগের দায়িত্বে আছেন। এর চেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা কী হতে পারে?’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া হেফাজতের দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে দেওয়া নিজের এজাহার মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘দেশের লাখ লাখ মানুষ দেখেছে এবং শুনেছে জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার লোকেরা আমার বিরুদ্ধে কি বলেছে। আমার নেতৃত্বে নাকি ছাত্রলীগ-যুবলীগ জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসায় হামলা চালিয়েছে। আমি নাকি পাখির মতো মানুষ মেরেছি। পাখির মতো যদি মানুষ মেরে থাকি তাহলে পুলিশ কোথায় ছিল। আমি একজন এমপি, দায়িত্বশীল মানুষ। একটা মামলা করেছি, ওই মামলার এজাহারে দেওয়া ফেসবুক লিংক নাকি সিআইডি খুঁজে পায় না। আইন বৈষম্যমূলক হয়ে গেছে। আইন সবার জন্য সমান নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইন যতক্ষণ পর্যন্ত সবার জন্য সমানভাবে ব্যবহার না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সভ্যতা বিপন্ন থাকবে। রাষ্ট্রের যতই উন্নতি হোক, তা একদিন মুছে যাবে। কিন্তু সভ্যতা খুঁজে পাওয়া যাবে। ইউরোপীয়দের আমরা যেভাবেই নিন্দা করি না কেন, তারা একটি সভ্য সমাজ গড়ে তুলেছে। আব্রাহাম লিংকন, সক্রেটিস নেই। কিন্তু মানুষ এখনও তাদের কথা মনে করে। পৃথিবীর যেসব জায়গায় সভ্যতার বিকাশ হয়েছে, সেখানে আইনের শাসন আছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামির সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক মো. মনির হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দফতর) আবু সাঈদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালান হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা। এ সময় তারা সরকারি-বেসরকারি অন্তত অর্ধশতাধিক স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এ ঘটনায় ৫৬টি মামলা হয়। এসব মামলায় এখন অন্তত সাড়ে ৫০০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
