মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর ট্রানজিট হয়ে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে আসা কমপক্ষে ৬ যাত্রী বিমানবন্দরে ফাঁকি দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে না গিয়ে নিজের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। পরবর্তীতে চাপের মুখে পড়ে ৫ জন যাত্রী হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে ফিরছেন।
মঙ্গলবার (১৫ জুন) শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর ট্রানজিট হয়ে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে আসা কমপক্ষে ৬ যাত্রী প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে না গিয়ে নিজের বাড়িতে চলে যান। দেশে আসার পর যাত্রীদের যাওয়ার কথা ছিল হোটেলে। সেখানেই বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা ছিল তাদের। কিন্তু তারা ফাঁকি দিয়ে নিজ বাড়িতে চলে যান।
আরও পড়ুন: বিমানবন্দরে ফাঁকি দিয়ে কোয়ারেন্টিনের ৬ যাত্রী বাড়িতে
পরবর্তী হোটেল কর্তৃপক্ষ থেকে বারবার যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকে যাত্রীদের সঙ্গে। একইসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনে খবর প্রকাশের পর সরকারি সংস্থাগুলোও যাত্রীদের খোঁজ নেওয়া শুরু করে। এরপর বাধ্য হয়ে চাপের মুখে ৫ জন যাত্রী হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে ফিরছেন।
এ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়া থেকে আসা যাত্রী জিয়া উস শামস বলেন, বিমানবন্দরে দেখলাম আমাদের সঙ্গে মালয়েশিয়া থেকে আসা যাত্রীদের অনেকেই বের হয়ে যাচ্ছে। তখন আমিও ভাবলাম হয়তো বাড়িতে গিয়ে কোয়ারেন্টিনে থাকলেও চলবে। সেজন্য আমরা বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে গেছি। আমাদের কেউ সেভাবে কোয়ারেন্টিনের বিষয়ে কিছু বলেনিও। পরে আমাদের সঙ্গে হোটেল থেকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যোগাযোগ করেছে। আমরা হোটেলে ফিরে এসেছি।
১১টি দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রেখে এসব দেশ যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ৪ জুন থেকে কার্যকর হওয়া বেবিচকের ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রয়েছে মালয়েশিয়া। তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে এসব দেশে ১৫ দিনের মধ্যে ভ্রমণকারী (বসবাসকারী নয়) বাংলাদেশি নাগরিক দেশে আসতে পারবেন। এক্ষেত্রে তাদের নিজ খরচে সরকার নির্ধারিত হোটেলে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। বিদেশে ফ্লাইটে ওঠার আগেই হোটেল বুকিং করতে হবে।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর ট্রানজিট হয়ে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে আসা ৬ জন যাত্রী প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য হোটেল বুক করেছিলেন। তাদের মধ্যে ৫ জন একই পরিবারের সদস্য। বুকিং করা হোটেলের প্রতিনিধিরা বেলা ১২ টা থেকে প্রায় আড়াইটা পর্যন্ত যাত্রীদের রিসিভ করতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপেক্ষা করেন। কিন্তু তাদের দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে যাত্রীদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলে যাত্রীরা হোটেলের প্রতিনিধিদের জানান তারা বাসায় চলে এসেছেন, হোটেলে যাবেন না।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া থেকে আসা যাত্রীদের মধ্যে একজনের নাম আলি আহমেদ, পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জে। এছাড়া বাকি ৫ জন একই পরিবারের সদস্য। পাসপোর্ট অনুযায়ী তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। তারা হলেন-জিয়া উস শামস ও তার মা স্ত্রী ও দুই সন্তান।
হোটেল মেমেন্টো ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ম্যানেজার মো. রিপন সরদার জানান, আলি আহমেদ নামের একজন যাত্রী আমাদের হোটেলে রুম বুক করেছিলেন। কিন্তু তিনি কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেলে না এসে বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে চলে গেছেন।
৫ জন যাত্রী হোটেলে ফেরার তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাফেলসিয়া সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টের ম্যানেজার রাশেকুল ইসলাম। তিনি বলেন, জিয়া উস শামস তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাসায় চলে গিয়েছিলেন। তিনি বাসা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আবার হোটেলে এসেছেন। তাকে নাকি বিমানবন্দরে কেউ কিছু বলেনি, তাই তিনি বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন।
রাশেকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কোয়ারেন্টিন যাত্রীদের তথ্য নিয়মিত সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দিতে হয়। এজন্য বারবার যাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি তিনি কোয়ারেন্টিনে না থাকলে সমস্যা হবে। পরবর্তীতে হোটেলে ফিরে এসেছেন।
তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আলি আহমেদ নামে এক যাত্রীর খোঁজ পায়নি হোটেল মেমেন্টো ইন্টারন্যাশনাল।