X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহী মেডিক্যালে আরও ১৩ মৃত্যু, বাড়ছে গ্রামের রোগী

রাজশাহী প্রতিনিধি
১৬ জুন ২০২১, ১২:১৪আপডেট : ১৬ জুন ২০২১, ১২:১৪

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে বুধবার (১৬ জুন) সকাল ৮টার মধ্যে বিভিন্ন সময় তারা মারা যান। এদের মধ্যে সাত জন পুরুষ ও ছয় জন নারী। মৃতদের মধ্যে রাজশাহীর আট জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চার ও কুষ্টিয়ার একজন করে। এ নিয়ে জুনের ১৬ দিনে মারা গেলেন ১৬১ জন। এদিকে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে পাঁচ জন করোনা পজিটিভ ছিলেন। বাকিরা শ্বাসকষ্টসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। করোনা পজিটিভ মারা যাওয়া পাঁচ জনের মধ্যে রাজশাহীর তিন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুই জন রয়েছেন।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, মৃতদের মধ্যে ৩১ থেকে ৪০ বছরে মধ্যে তিন জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে তিন জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে পাঁচ জন ও ৬১ বছর বয়সের উপরের দুই জন রয়েছেন।

হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, রোগীর চাপ বাড়ায় মঙ্গলবার এ হাসপাতালে দুটি আইসিইউসহ ৩৪টি বেড বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও আরও ১৫ জন চিকিৎসক পাঠাতে স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহ খানেক আগে ১৫ জন চিকিৎসককে এ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।

তিনি আরও জানান, বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২০টি আইসিইউসহ ৩০৫ বেডের বিপরীতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৪৪ জন। বাকিদের মেঝেসহ অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ২৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আট, নাটোরের সাত, নওগাঁর চার, পাবনা ও কুষ্টিয়ার একজন করে রাগী ভর্তি হন। একই সময় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২৩ জন।

এদিকে রাজশাহী মেডিক্যালে করোনায় মারা যাওয়াদের বেশিরভাগই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত বলে মনে করছেন রামেক হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার শামীম ইয়াজদানী। মৃতদের বেশিরভাগই চিকিৎসাকালে অবস্থা খারাপ থাকছে। তাদের শারীরিক সমস্যা গতবছরের করোনার লক্ষণের চেয়ে আলাদা। এছাড়া শহরের চেয়েেএখন গ্রামের রোগী বাড়ছে বলে জানান তিনি।

পরিচালক বলেন, বর্তমানে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর ৪০ শতাংশই গ্রামাঞ্চলের। কারণ হিসেবে আমরা দেখছি গ্রামের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি কম মানা, অবাধে সব জায়গায় চলাচল, মাস্ক না পরাসহ অন্য কারণে ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে সামগ্রিকভাবে রাজশাহীতে শনাক্তের হার কমছে। স্বাস্থ্যবিধি মানলে শনাক্তের হার আরও কমে অবস্থার উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, এখন যে রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন তাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন কম, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া, শারীরিক অন্যান্য সমস্যাও হঠাৎ করে বাড়ছে। শারীরিক অবস্থার নানান ধরনগুলো পরিবর্তন হয়েছে। চিকিৎসার সময় দিচ্ছে না এই ধরন গুলো! হঠাৎ করেই করোনা আক্রান্ত রোগীর অবস্থা বেশিমাত্রায় খারাপ হয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজন হচ্ছে আইসিইউ সাপোর্টের।

চিকিৎসকরা আরও জানান, ঈদে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হয়েছে, ফলে সংক্রমণ বেড়েছে। শুধু স্বাস্থ্যবিধি মানলে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নয়- অন্য ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের হারও কমিয়ে আনা সম্ভব। কয়েকদিন কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার কারণে মঙ্গলবার (১৫ জুন) শনাক্তের হার কমেছে বলেও জানান তারা।

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. পার্থ মণি ভট্টাচার্য জানান, গতবছর করোনার যেমন লক্ষণ ছিল এবার কিন্তু অনেক বিষয় আলাদা দেখছি। ভর্তির পর থেকেই শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া এবং অক্সিজেন স্যাচুয়েশন কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। লিভার, কিডনি ও ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে সমস্যা অনেক বেশি হচ্ছে। 

রাজশাহী মেডিক্যালে আরও ১৩ মৃত্যু, বাড়ছে গ্রামের রোগী এদিকে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মৃত্যু হার কমছে না বলছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও বিধিনিষেধ আরোপের পরামর্শ তাদের। লকডাউনের সুফল পেতে সাত দিন নয়, অন্তত ১৪ দিনের লকডাউনের পরামর্শ দিচ্ছেন হাসপাতাল পরিচালক ও রামেক হাসপাতালের চিকিৎকরা।

হাসপাতাল পরিচালক বলছেন, বয়স্ক মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তরুণদের মৃত্যুর হার। রোগীর চাপ সামলাতে হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটসহ মোট ১৩টি ওয়ার্ডে চলছে করোনা রোগীর চিকিৎসা। প্রস্তুত করা হয়েছে আরও একটি ওয়ার্ড, সেখানে ৩৬টি বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে আইসিইউ বেড। এখন হাসপাতালে ২০টি আইসিইউ বেডে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে করোনা ও ইউনিটগুলোতে ৮টি টিমে সেবা দিচ্ছেন মোট ৮০ জন চিকিৎসক। সঙ্গে নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন ৫০০ জন। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে আরও ১৫ জন চিকিৎসক চাওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে বুধবার রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জনের তথ্যমতে, রাজশাহী জেলায় এ পর্যন্ত ১১৪ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এরমধ্যে নগরীর ৬৮ জন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী জেলায় এক হাজার ৫৮১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৪৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২১.৭০ শতাংশ। রাজশাহী নগরীতেই গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ২৭৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

 

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’