X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

সহিষ্ণু হও, বিশ্ব বিদ্যায়তন

তুষার আবদুল্লাহ
১৯ জুন ২০২১, ১৫:৩৭আপডেট : ১৯ জুন ২০২১, ১৫:৩৭

তুষার আবদুল্লাহ আমার কন্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের অপেক্ষায়। করোনাকাল না এলে এত দিনে কোনও একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ও উচ্চশিক্ষার জন্য বেছে নিতে পারতো। কন্যার বিশেষ একটি বিষয় নিয়ে পড়ার ইচ্ছে। ওই বিষয় নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আগ্রহী। খোঁজ-খবর নিয়ে দেখলাম দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই বিভাগে শিক্ষকরাও আকর্ষণীয়। অস্বীকার করার সুযোগ নেই সকল শিক্ষকের মেধা ও পড়ানোর কৌশল শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে না। আমার কন্যা মূলত ওই বিষয়ে পড়ার ইচ্ছে নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেবে। বাবা-মেয়ে এও জানি পরীক্ষা দিলেই যে ওই বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়া যাবে এমন নয়। মেধাক্রম এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তবুও আত্মবিশ্বাস ও লটারি জেতার স্বপ্ন নিয়ে আমার মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু দু’দিন ধরে ভাবছি সুযোগ পেলেও ওকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করবো কিনা।

বিশ্ববিদ্যালয় বলতেই অবাধ জ্ঞান আর তর্ককে জানি। আমি যেমন করে পৃথিবীকে জানি, সেই আমার দেখার গোলক সবাইকে দেখাতে চাই। আমি যা সত্য তা প্রমাণ করতে যখন মরিয়া, তখন তর্ক এসে বলবে, তোমার দেখায় ভুল আছে। আসলে বাস্তব পৃথিবীটা…।

এভাবে আমরা স্বপ্ন-তর্কে জ্ঞান সমুদ্রে ভাসাবো নিজেদের। আমাদের উভয়ের ভাবনা নিয়ে নিরীক্ষা হবে, তর্ক হবে। তা থেকে সমাজ, রাষ্ট্র পাবে আগামী গন্তব্যে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা। বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্য-বিদ্বেষ শেখাবে না। সাম্য, সুন্দর ও সহনশীল হতে শেখাবে। জানাবে সুন্দরের কাছে যেতে, আত্মসমালোচনা কত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ নিজেকে না জানলে, বিশ্লেষণ না করলে জ্ঞানের চৌকাঠে পা রাখতে পারে না। মানুষ হওয়ার আরেকটা বড় উপকরণ হলো সহিষ্ণুতা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের সহিষ্ণু হওয়ার টনিকও জেনে নেওয়ার কথা। প্রেম ও দ্রোহের ঘূর্ণি সে-তো বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই জন্ম নেওয়ার কথা।

আমি দেখছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার ঐতিহ্যগত উদার ময়দান থেকে সংকীর্ণ উঠানে চলে আসতে চাইছে। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম থেকে অদ্যাবধি অসংখ্য শিক্ষককে জানি, যারা শিক্ষার্থীদের সহিষ্ণু ও তর্কে বহুদূর যাওয়ার প্রেরণা।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য কোনও একটি অনুষ্ঠানে প্রসঙ্গক্রমে ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের চা-সমুচার সুলভতা নিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন। সেই বক্তব্যের একটি অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বক্তব্যের এমন ভাইরাল দেশ ও বিদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বেলাতেও ঘটেছে। এসব স্থুল ভাইরাল নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই। কারণ তাদের ব্যক্তিত্ব এত ঠুনকো নয় যে, এসব ভাইরালে অবনমন হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কমে গেছে। আন্তর্জাতিক রেটিং-এ অবনমন ঘটেছে, বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের মান নিয়ে সমালোচনা নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই হচ্ছে। একটা বিষয় আমাদের জাতীয় করোটিতে জলছাপ হয়ে আছে– দেশে দেড় শতাধিক সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও, বিশ্ববিদ্যালয় ভাবনটি এলেই মনজগতে ভেসে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নামটি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অধিকার যেন সকলের।

যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনকে নিজের মনে করে কখনও বিদ্যায়তনে না যাওয়া মানুষটিও। কারণ হলো জাতির জ্ঞানের আতুঁড় ঘর কিংবা বাতিঘর দুই ভাবা হতো, এখনও হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে। সেই বাতিঘরকে অনুজ্জ্বল দেখলে, মন কষ্ট বা অধিকারবোধ থেকেও সমালোচনা হতে পারে। রসযুক্ত সমালোচনাকে এক পাক্ষিকভাবে রঙ্গ-তামাশাও মনে হতে পারে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়, তাকে ঝিনুকের মতোই নিরবে সয়ে যেতে হবে। তাঁর শিষ্যদের তর্কে বহুদূর নিয়ে যেতে। সমালোচনার নিষেধাজ্ঞা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ও সৌন্দর্যকে ম্লান করে দেয়। কন্যাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করতে চাই-ই। বিদ্যায়তনটি আমার কন্যাকে বিশ্ব জ্ঞানের উঠানে পৌঁছে দেওয়ার কাজেই নিবিষ্ট থাকুক।

নিবিষ্ট থাকার জন্যে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নয়, শিক্ষকদেরও উদ্যোগের প্রয়োজন আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামগ্রিকভাবে আলোর ছায়াপথ হলে, একেক জন শিক্ষক নক্ষত্রের মতো জাজ্বল্যমান ছিলেন। তারা শুধু শিক্ষার্থীদেরই নয়, গোটা জাতির শিক্ষক হয়ে উঠেছিলেন। সেই নক্ষত্রের সংখ্যা দিন দিন কমে গিয়ে আমরা যেন অমাবস্যার রাত্রির দিকে এগুচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ কখনই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। তার মধ্যে দিয়েই বাতিঘরের আবির্ভাব ঘটতো। আমাদের শিক্ষকদের একটি বড় অংশ শিক্ষা ও গবেষণার বাইরে রাজনীতি ও সমাজনীতির অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন। পদ-পদবির লোভে অন্যত্র ব্যস্ততা বেড়েছে। ফলে মেধা ও জ্ঞানে মরিচা পড়ায় কোনও স্ফুরণ নেই। যে স্ফুরণ শিষ্য বা শিক্ষার্থীদের মোহিত করবে। অতএব বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষা অবকাঠামোতে যেমন শান দেবে, তেমনি শিক্ষকদেরও মেধাকে দ্যুতিময় করতে হবে আমার কন্যার চোখে পড়ুক সেই দ্যুতির আলো।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ