X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
বাবা দিবসে বিশেষ

যেভাবে বদলে গেলো বলিউডের বাবারা

ফয়সল আবদুল্লাহ
২০ জুন ২০২১, ১৪:০০আপডেট : ২০ জুন ২০২১, ১৪:৪১

বলিউডের বাবা চরিত্রগুলো কেমন হয়? আগে কেমন হতো? বিবর্তনটা হলো কী করে?

‘মুঘল-ই-আজম’ থেকেই আসা যাক। এ সিনেমায় বাবা রীতিমতো ভিলেন। সেলিমের প্রেমিকা আনারকলিকে জ্যান্ত কবর দিয়ে বসেন তিনি। যে সেলিম সিনেমার শেষ পর্যন্ত বাবার দিকেই তাকিয়ে ছিল- আনারকলির জীবন তিনি ভিক্ষা দেন কিনা।

‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’র প্রচণ্ড রাগি অমরেশ পুরিরাও কম যাননি। সিনেমার শেষ দৃশ্যে মোড় ঘোরানো সিদ্ধান্তটা ছিল তার হাতেই। বাবা হাতটা সময়মতো না ছাড়লে কাজল বেচারি তো ট্রেনের সঙ্গেই পেরে উঠতো না। কেন অমন এক কঠিনতর পিতার কথা ভেবেছিলেন নির্মাতা আদিত্য চোপড়া? কারণ একটাই, ওই সময় ভারতের সমাজ ব্যবস্থাই ছিল সেই রকম। আর যে কারণে সিনেমার বাবা মানেই ছিল এক ধরনের কনফ্লিক্টের যোগানদাতা।

একই ছবিতে শাহরুখের বাবা চরিত্রে থাকা অনুপম খের ছিলেন আগাগোড়া বন্ধুবৎসল ও ‘ক্রাইম-ইন-পার্টনার’ মানে একটু বাড়াবাড়ি রকমের বন্ধুসুলভ বাবা। কিন্তু তাকে আনা হয়েছিল স্রেফ কমেডির উদ্দেশ্যেই। বাবা কেমন হয় সেটা দেখাতে নয়। কারণ ওই সময় বলিউডে ওই রকম দিল-খোলা বাবা মানে কিন্তু সিরিয়াস কোনও চরিত্র ছিল না, ছিল এক ধরনের ফ্যান্টাসি মাত্র।

এ কারণে বলিউডের সিনেমায় বাবা চরিত্রগুলো মূল গল্পে বিশেষ কোনও স্থান পেতো না। বাবাদের দেখানো হতো পরিবারের আয়ের উৎস হিসেবে। দুয়েকটা না হলেই নয় এমন কিছু দৃশ্যে থাকতেন।

১৯৬০ সালের ‘মুঘল-ই-আজম’ এ পৃথ্বিরাজকে (আকবর চরিত্রে) দেখা গিয়েছিল ছেলে দিলিপ কুমারের (আকবর) সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধে নামতে। পরে আবার ১৯৮২ সালের ‘শক্তি’ সিনেমায় সেই দিলিপের সঙ্গে বাগড়া বাঁধে সন্তান অমিতাভ বচ্চনের। তাতে দেখা গিয়েছিল অমিতাভ বচ্চনের জীবনের চেয়েও দেশের আইনকে বড় করে দেখেন বাবা দিলিপ কুমার। যে কারণে শুরু হয় পিতা-পুত্র দ্বন্দ্ব। তাও ভালো যে আইনের কথা বলে ছেলেকে জ্যান্ত কবর দেননি দিলিপ। মানে ততদিনে বলা যায় বাবারা কিছুটা নমনীয় হয়েছেন।

বলিউড সমাজের আসল বাবাদের মন বদলাতে কম চেষ্টা করেনি। ১৯৯১ সালের ‘দিল হ্যায় কি মানতা নাহি’র কথা যাদের মনে আছে, তারা জানেন, চূড়ান্ত দৃশ্যে বিয়ের মন্ডপে পর্যন্ত বাবা তার মেয়েকে বলছেন, মনে মনে যাকে সে পছন্দ করেছে তাকেই যেন বিয়ে করে। ওই সময় ভারতবর্ষে আদৌ এমন বাবা ছিল?

তথাপি বেশিরভাগ সিনেমা দেখলেই মনে হবে বলিউডের বাবারা কেমন যেন সৎ-মায়ের অভাবটা পূরণ করে আসছেন। আর মা চরিত্র তো বরাবরই সাক্ষাৎ ‘মাদার ইন্ডিয়া’- ত্যাগের চূড়ান্ত মূর্তি।

ভারতীয় লেখক ও সমাজবিদ শিব বিশ্বনাথনের মতে, বলিউডি সিনেমায় বাবা চরিত্রটা গড়পড়তায় কেমন হবে সেটা মূলত ঠিক করে দেয় ভারতের অর্থনীতির চাহিদা। যে কারণে এখনকার সিনেমায় নায়ক-নায়িকার বাবাকে নিয়ে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয় লেখককে। বাবা থেকে ক্রমশ স্বামী হিসেবেই উপস্থাপন করা হচ্ছে চরিত্রগুলোকে। যেখানে পুরুষতান্ত্রিক বেড়াজাল থেকে বের করে এনে তাকেও মূল গল্পে কিছু না কিছু বলার থাকতে হবে।

পালাবদলের এ হাওয়া শুরু হয়েছে বেশিদিন হয়নি। ইরফান খানকে দেখা গিয়েছিল মেয়ের পড়াশোনার জন্য নিজের বড়লোকি লাইফস্টাইল বদলে একেবারে বস্তি পর্যন্ত যেতে (হিন্দি মিডিয়াম)। এরও আগে আমরা আমির খানকে দেখেছিলাম কী করে সিঙ্গেল বাবা হয়ে সন্তানকে বড় করে তুলতে হয় তা শিখতে (আকেলে হাম আকেলে তুম)। মানে, বাবা চরিত্র কেবল চরিত্রের প্রয়োজনে নয়, ওই সিনেমাগুলোতে এসেছিল মূল চরিত্র হিসেবেই।

তবে হালের সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের বাবারা আবার বাস্তবের বাবাদের মতোই। এখনকার চিত্রনাট্যকার-পরিচালকরা সমাজ দেখেই চরিত্র সাজানোর চেষ্টা করেন। হাতের কাছের উদাহরণ মনোজ বাজপেয়ি। আমাজন প্রাইমের ওয়েব সিরিজ ‘ফ্যামিলি ম্যান’-এর শ্রীকান্ত তিওয়ারি একইসঙ্গে বাবা আবার সিরিজের নায়কও। বাস্তবের বাবাদের মতো সব যুদ্ধে তিনিও জেতেন না। কিছু কিছু হেরে যান।

আবার সংসারে দ্বন্দ্ব থাকলেও এ ধরনের বাবা একাই পেশী নাচান না। পরিবারের কর্তা হিসেবে সিরিজে আগাগোড়া সমান গুরুত্ব পেয়েছেন মা চরিত্রে অভিনয় করা শুচিও (প্রিয়ামনি)।

এই বাবার সঙ্গে তার দুই সন্তানেরও আছে কিছু দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্বটা আবার এক ধরনের ভারসাম্যমূলক অবস্থার মধ্য দিয়েই এগিয়েছে। এ দ্বন্দ্বের সিনেমাটিক কোনও সমাধানে পৌঁছাতে হয়নি নির্মাতাকে। সরাসরি বুঝিয়ে দিয়েছেন, ওই আমলের বাবার সঙ্গে এ সময়কার সন্তানদের মতের কিছু অমিল তো থাকবেই, এ আর এমন কী। কথায় কথায় বরফ-শীতল চাহনি হাঁকিয়ে সব সমাধান করে ফেলতে হবে, এমন কথা তো নেই।

‘ফ্যামিলি ম্যান’-এর মনোজ বাজপেয়িকেও তাই দেখা যায় একদম আধুনিক বাবার মতোই্। বেশি কড়া তো নয়-ই, আবার সন্তানের সব কথায় তাকে মাথায় তুলেও নাচেন না।

মানে, এখন আর পিতা-সন্তান দ্বন্দ্ব নিয়ে সিনেমা হোক না হোক বলিউডের বাবাদের দেখে ভারতের (কিংবা উপমহাদেশের) এ সময়কার নতুন প্রজন্মের বাবাদের চেনা যাবে সহজে। বোঝা যাবে, কল্পকাহিনির আড়ালে আদতে কতটুকু বদলেছে সমাজটা।

/এমএম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’