X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগ যা বুঝিয়ে দিতে পারে

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৩ জুন ২০২১, ১৩:৩৮আপডেট : ২৩ জুন ২০২১, ১৪:৫৮

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা রাজনীতিতে জনতাই সব। যার পক্ষে যত মানুষ, সে তত শক্তিশালী। রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে যেভাবেই হোক আম জনতার কাছে পৌঁছাতে হয় এবং তাদের স্বপক্ষে আনতে হয়।

আজ দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি এখন নানা লড়াই, সংগ্রাম, চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এখন টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায়। 

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এমন শুভলগ্ন দাঁড়িয়ে নিশ্চয়ই দলের নেতা-কর্মীরা আনন্দে উচ্ছল থাকবেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দল এত দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় আছে। কিন্তু তার সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সময়টাতেই আমরা চ্যালেঞ্জগুলো বড় আকারে সামনে উপস্থিত হতে দেখেছি।

সাম্প্রদায়িক, উগ্রবাদী শক্তির উন্মত্ততার একাধিক নজির স্থাপিত হয়েছে সেই ২০১৩ সাল থেকে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত।  

এখানেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ছিল উদার ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। এই দল এখন ক্ষমতা চর্চার বাইরে রাজনৈতিক চর্চা কতখানি করছে সে প্রশ্ন নিয়মিত উঠছে। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘রাজনীতিতে যারা সাম্পদায়িকতা সৃষ্টি করে, যারা সাম্প্রদায়িক তারা হীন, নীচ, তাদের অন্তর ছোট। যে মানুষকে ভালোবাসে সে কোনও দিন সাম্প্রদায়িক হতে পারে না। আপনারা যারা এখানে মুসলমান আছেন তারা জানেন যে, খোদা যিনি আছেন তিনি রাব্বুল আলামিন। রাব্বুল মুসলেমিন নন। হিন্দু হোক, খ্রিস্টান হোক, মুসলমান হোক, বৌদ্ধ হোক সমস্ত মানুষ তাঁর কাছে সমান। সেই জন্যই এক মুখে সোশ্যালিজম ও প্রগতির কথা এবং আরেক মুখে সাম্প্রদায়িকতা পাশাপাশি চলতে পারে না’।

বাঙালি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির যে সুনাম ছিল সেখানে এখন ধর্মচর্চার নামে ধর্মীয় জিঘাংসার হানা। অথচ আমরা জানি একটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি না থাকলে সমাজের সার্বিক অগ্রগতি থেমে যায়। মৌলবাদী, সংকীর্ণমনা, জাতীয় মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন এবং সন্ত্রাসবাদী মানসিকতার এক রাজনীতি যখন আমাদের চারপাশ দখলে নিয়ে যেতে তৎপর, তখন আওয়ামী লীগ কি রাজনীতি করে সেদিকেই সেক্যুলার সমাজের চেয়ে থাকা।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের রাষ্ট্রীয় আয়োজন যখন চলছে তখন তার ভাস্কর্য স্থাপন করতে দেওয়া হবে না–এমন ঘোষণা দেওয়ার পর বৃহত্তর সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের যে প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা সেটা আমরা দেখিনি। এবং শাসক দলের এই নির্লিপ্ততার মাঝেই কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙেও দেয় সাম্প্রদায়িক শক্তি।

আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে যে ভাষায় কথায় বলার কথা, আমরা তা দেখিনি। বরং দলের নেতাদের কথায় ছিল কৈফিয়তের সুর। কত কত মুসলিম দেশে ভাস্কর্য আছে, আওয়ামী লীগ ইসলামের জন্য কতটা করছে– এমন সব কথা বলে গেছেন দলের নেতারা। দুই একজন বাদে বেশিরভাগ নেতা জোর দিয়ে বলেননি যে, ‘এই বাংলাদেশে জাতির পিতার ভাস্কর্য হবে, আরও অনেকের হবে, কোনও মৌলবাদী শক্তি তা রুখতে পারবে না’।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালিকে তার গৌরবময় জীবনের সন্ধান দিয়েছেন। কিন্তু তিনি কখনও ক্ষুদ্র রাজনীতি করেননি। মানুষ হিসেবে মানুষকে দেখার যে রাজনীতি, কোনও ধর্ম বা অন্য পরিচয়ে নয়, এমন নেতা আর আসেনি এ ভূখণ্ডে। বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক জীবনের পুরো সময়টাতেই এই অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করেছেন। তাই পরিস্থিতি বদলালেও এর কোনও বিকল্প নেই ৭২ বছরের আওয়ামী লীগের কাছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অনেক ঝড়ঝাপটার সাক্ষী। বঙ্গবন্ধু কন্যা দৃঢ়তার সঙ্গে পরিচালনা করে দলকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছেন এবং দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের যেন গভীরতর অসুখ। দলের বিভিন্ন স্তরে, বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ে বিভিন্ন দল-উপদলের বিভক্তি এমন পর্যায়ে গেছে যে এখন জেলা উপজেলায়, পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ, খুনাখুনি। ঘরে ঘরে বিবাদ। চিহ্নিত সমাজবিরোধীরা, বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা দলে, দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে জায়গা করে নিয়েছেন বলে খোদ দল থেকেই সমালোচনা উঠছে। যুবলীগের ক্যাসিনো কাণ্ড, বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি ও সহিংস উগ্র আচরণ মানুষের মুখে মুখে।

দলের ভেতরকার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, আর কিছু এমপি মন্ত্রীর ব্যক্তিতন্ত্র এমন ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে যেন দলের ভেতর শুধু সিন্ডিকেট আর সিন্ডিকেট। এই সংকট আগেও ছিল এবং সেই সংকট থেকে দলকে বের করে শেখ হাসিনাই হয়ে ওঠেন আসল নেত্রী। কিন্তু মনে রাখা দরকার সব কাজ তার একার পক্ষে করা সম্ভব না।   

দলের অনেক প্রবীণ নেতা এখন নিষ্ক্রিয়। আমরা মনে করি দলের ভেতর অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। দেশজুড়ে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে যে যন্ত্রণা রয়েছে তা শুনতে হবে। দেশের স্বার্থে, দলের প্রয়োজনে এটা করতে পারলে আমি মনে করি ৭২ বছরের আওয়ামী লীগ আবার সজীব হয়ে উঠবে একাত্তরের মতো।

সমাজের মোড়ল সেজে বসে আছে যে ধর্ম ব্যবসায়ী লোকেরা। তাদের পরাভূত করতে পারে আওয়ামী লীগই। তাই এই দেশের জন্য নতুন করে জেগে ওঠা এক আওয়ামী লীগ প্রয়োজন। আর তার জন্য দলকে দেখাতে হবে যে সে উপস্থিত, সে সচেতন ও অর্থপূর্ণভাবে প্রতিটি কাজ করছে সে। এর জন্য কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক স্তরে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন, যাতে এটা দেশবিরোধী শক্তিকে বুঝিয়ে দেওয়া যায়– আওয়ামী লীগ এমন একটি শক্তি, যার ভেতর কোনও জড়তা নেই।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
ভাটারায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে লোহার পাইপ পড়ে হোটেল কর্মচারীর মৃত্যু
ভাটারায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে লোহার পাইপ পড়ে হোটেল কর্মচারীর মৃত্যু
সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউনের কয়রা সফর সম্পন্ন
সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউনের কয়রা সফর সম্পন্ন
২০২৩ সালে বায়ুদূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ
২০২৩ সালে বায়ুদূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ