X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণেও এগিয়ে বাংলাদেশ

ফারাজী আজমল হোসেন
২৪ জুন ২০২১, ১৬:৪০আপডেট : ২৪ জুন ২০২১, ১৬:৪০

ফারাজী আজমল হোসেন করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ২০১৫ সালে জাতিসংঘের ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) পূরণকারী সবচেয়ে সফল দেশ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর বাংলাদেশ সারা বিশ্বে রোল মডেলের মর্যাদা পায়।

আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এই সাফল্যের প্রশংসা করে বলা হয়, বাংলাদেশ এশিয়ার নতুন ‘অর্থনৈতিক পরাশক্তি’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এই অর্জনের পথে বাংলাদেশ অবশ্য বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রথম বাধা আসে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে। ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচন বয়কট করে সেদিনের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামীসহ তাদের সমমনা দলগুলো। এরপর তারা সারাদেশ আগুনে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা। প্রায় দুই বছর তারা এই সন্ত্রাস চালায় এবং দেশের অগ্রযাত্রা অনেকটা স্থবির করে দেয়। আওয়ামী লীগ সরকার দক্ষতার সঙ্গে বিরোধীদের অপতৎপরতা দমন করে এবং দেশের অর্থনৈতিক যাত্রায় গতি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। এর সুফল পেতে খুব বেশি দেরি হয়নি। ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি)’র সব সূচকেই এগিয়েছে। ১৫ বছর আগেই পাকিস্তানের অর্থনীতিকে টপকেছে বাংলাদেশ। এখন বৃহৎ দেশ ভারতও পেছনে। তবে করোনাভাইরাস নতুন করে হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত বছর বাংলাদেশ অবশ্য সাফল্যের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতির ব্যবস্থাপনা করেছে। এ কারণে আশঙ্কার চেয়ে অনেক কম ক্ষতি হয়েছে। এ সময় ইপ্সিত জিডিপি অর্জিত না হলেও অন্যদের জন্য নজর কাড়া সাফল্য এসেছে। আশা করা হচ্ছে, চলমান করোনা পরিস্থিতিও বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে কাটিয়ে উঠবে। এমনিতেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বে এক নম্বরের তকমা পেয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশই এখন দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চায়।

এসব কারণে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৭ শতাংশের বেশি হয়েছে। সম্প্রতি পাওয়া গেলো আরেকটি নতুন খবর। আর তা হলো, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রেও এগিয়ে থাকা দেশের তালিকায় শীর্ষ তিনে রয়েছে বাংলাদেশ।

২০১৫ সালেই সারা বিশ্বে বাংলাদেশের প্রশংসা ছড়িয়ে যায় জাতিসংঘের ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) পূরণকারী সবচেয়ে সফল দেশ হিসেবে। আটটি লক্ষ্যের সব কটিতেই ভালো করে বাংলাদেশ। এসব লক্ষ্য অর্জনে ৩৩টি উপসূচকের মধ্যে ১৩টি পুরোপুরি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এমডিজির অন্যতম প্রধান দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যটি অর্জিত হয়েছে। ২০১৫ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ২৯ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল, বাংলাদেশ এ সময়ে দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এ লক্ষ পূরণে শেখ হাসিনার সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এরমধ্যে রয়েছে বিধবা ভাতা, দুস্থ ভাতা, বয়স্ক ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত নারীদের জন্য ভাতা ইত্যাদি।

শেখ হাসিনার সরকারের সবচেয়ে সাহসী ঘোষণা ছিল- ২০২১ সালের পর একটি পরিবারও আশ্রয়হীন (গৃহহীন) থাকবে না। এ লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালেই তিনি ‘আশ্রয়ণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন। এর আওতায় সব গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে দুই শতক জমি এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ দুই রুমের পাকা বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে এই কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে। এরপরও গত এক বছরে প্রায় দুই লাখ গৃহহীন মানুষ বাড়ি পেয়েছেন। সর্বশেষ গত ২০ জুন আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৫৩ হাজার ৫০০ গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ির চাবি হস্তান্তর করা হয়। সেই সঙ্গে তাদের উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। এটা গোটা বিশ্বে নজিরবিহীন। এই কর্মসূচি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, সারা বিশ্বে শীর্ষ পর্যায়ের দেশের তালিকায় নাম লেখাবে।

এ ছাড়া শিক্ষা, লিঙ্গবৈষম্য, শিশুমৃত্যু, মাতৃস্বাস্থ্য, রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে রাখা, টেকসই পরিবেশ- এসব মূল লক্ষ্যের বেশিরভাগ উপসূচকেই লক্ষ্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। অপুষ্টির কারণে ওজন কম থাকবে এমন পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর হার ৩৩ শতাংশে নামিয়ে লক্ষ্যটিও অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের টানা দুই মেয়াদে (২০০৯-২০১৮) ১০ বছরে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়নসহ আর্থ-সামাজিক সব খাতে বাংলাদেশ অর্জন করেছে বিস্ময়কর অগ্রগতি। ফলে ২০১৫ সালে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০১৮ সালে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ।

এসডিজিতে পূরণ করতে হবে মোট ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে হবে। এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশ শীর্ষ তিন দেশের মধ্যে রয়েছে। আমাদের আগে রয়েছে এশিয়ার আরেক দেশ আফগানিস্তান এবং পশ্চিম আফ্রিকার দেশ আইভরি কোস্ট। এই উন্নয়ন দৌড়ে আফগানিস্তানের থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকলেও এসডিজি র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে আমরা। চার বছর আগে ২০১৭ সালে এসডিজি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২০। কিন্তু এ বছর জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন)-এর প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম, স্কোর ৬৩.৫। অন্যদিকে ১৩৭তম স্থানে রয়েছে আফগানিস্তান (৫৩.৯)।

এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে, দারিদ্র্য বিমোচন ও ক্ষুধামুক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টির লক্ষ্য অর্জন, টেকসই কৃষিব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা, সব বয়সের সবার কল্যাণে কাজ করে যাওয়া, অন্তর্ভুক্তি ও সমতা ভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা, আজীবন শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা, লিঙ্গসমতা অর্জন, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি। করোনার কারণে বেশ ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। বিশ্বজুড়ে করোনার প্রভাবে এসডিজি বাস্তবায়ন প্রথমবারের মতো নেতিবাচক ধারায় চলে এসেছে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে সূচক এখনও ঊর্ধ্বমুখী।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকাটি পালন করছে সামাজিক পরিবর্তন, বিশেষ করে সমাজে নারীর ক্ষমতায়ন। ক্ষুদ্র ঋণদান কর্মসূচি নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বড় অবদান রেখে চলেছে। এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে নারী শিক্ষার প্রসার এবং সমাজে মেয়েদের ভূমিকা জোরালো করতে ব্যাপক ভূমিকা নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপসমূহের অন্যতম হলো- শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম। নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি ব্যবস্থা। ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ করেছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর শতকরা হার ছিল ৬১, বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে শতকরা ৯৭.৭ ভাগে। এরমধ্যে ছেলে ৯৬.৬ ও মেয়ে ৯৮.৮ শতাংশ।

বর্তমানে দেশে নারী শিক্ষার হার ৫০.৫৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৫১ শতাংশ, মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫৪ শতাংশ, এইচএসসি পর্যায়ে ৪৮.৩৮ শতাংশ নারী। বিগত সময়ের তুলনায় বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় সাফল্য ও জিপিএ-৫ অর্জনের দিক থেকেও নারীরা এগিয়ে আছে। সরকার শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে প্রাথমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত নারীদের শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করছে। প্রাথমিক শিক্ষায় নারী শিশুদের ভর্তির হার বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান আরও ৬২টি দেশের সঙ্গে সমন্বিতভাবে প্রথম।

স্বাস্থ্য সেবা খাতেও উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক। ৩১২টি উপজেলা হাসপাতালকে উন্নীত করা হয়েছে ৫০ শয্যায়। মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালগুলোতে ২ হাজার শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার এবং জন্মহার হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ১৯৯০ সালে নবজাতক মৃত্যুর হার ১৪৯ থেকে নেমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫৩-তে। স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য সামনে রেখে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ১২টি মেডিক্যাল কলেজ, নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৪৭ হাজারেও বেশি জনশক্তি। ফলে জনগণের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছর।

বলা যায়, নারী বঞ্চনার তিক্ত অতীত পেরিয়ে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেক দূর এগিয়েছে। পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। আর এই শিল্পের সিংহভাগ কর্মী হচ্ছে নারী। ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশে গ্রামীণ উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে। আর ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে ৮০%-এর ওপর নারী। বাংলাদেশ সরকার নানাভাবে নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে চলেছে।

কৃষি খাতে টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রেও অভূতপূর্ব কিছু সাফল্যের জন্য বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ বারবার আলোচিত হয়েছে। প্রায় ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন। বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের প্রশংসা করেছে জাতিসংঘের ‘ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন’ (এফএও)। চলতি বছর জুন মাসে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন বিশ্ব খাদ্য সংস্থা’র নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলি।

হার্ভার্ড ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) যৌথ উদ্যোগে করা জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট অনুসারে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অবস্থান বিবেচনায় নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের নাম আছে এক নম্বরে। তবে নারীর সার্বিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৮তম। নারী উন্নয়নের সার্বিক সূচকে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৪টি দেশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার পরে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বে ৩৬টি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।

২০২০ সালে দ্য গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বের ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম, যা এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় আশাব্যঞ্জক। নারী শিক্ষার উন্নয়ন এবং ব্যবসায়িক উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া জাতিসংঘের ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ অ্যাওয়ার্ডেও ভূষিত হয়েছেন তিনি। চলতি বছরও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ-২০২১ সালের প্রকাশিত প্রতিবেদনে ১৫৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে রয়েছে।

বাংলাদেশই পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে সংসদ নেতা, সংসদীয় উপনেতা, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার, শিক্ষামন্ত্রী নারী। বর্তমানে ৭২ জন নারী এমপি রয়েছেন। স্থানীয় পর্যায়ে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত নারী প্রতিনিধি আছে ১২০০০-এর মতো। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ৩৩ শতাংশ আসন নারীদের জন্য রাখা হয়েছে। আর জনসেবা খাতে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে। ২০২০ সাল নাগাদ সব রাজনৈতিক দলের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়।

বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে নারী কর্মসংস্থান ৩ শতাংশ উন্নতি হয়ে ৩৫ থেকে ৩৮ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ তথ্যমতে, প্রায় ১ হাজার নারী সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রশাসনের উচ্চপদে আছেন ৫৩৫ জন নারী কর্মকর্তা। উপ-সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদগুলোতে এই নারী কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে প্রশাসনে সিনিয়র সচিব, সচিব ও ভারপ্রাপ্ত সচিব রয়েছেন ৬ জন নারী। অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন ৮১ জন, যুগ্ম-সচিবের মধ্যে নারী রয়েছেন ৮৭ জন। প্রশাসনে ১ হাজার ৮৪০ জন উপ-সচিবের মধ্যে নারী উপ-সচিব রয়েছেন ৩৬১ জন। সুতরাং নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গবৈষম্য হ্রাসে অসাধারণ অর্জন বাংলাদেশের।

এছাড়াও মানব উন্নয়ন সূচকে গত বছরের তুলনায় দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। সূচকে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১৩৩। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ২০২০ সালের দ্য হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম অবস্থানে আছে। তবে পরিবেশের প্রভাবজনিত সমন্বিত মানব উন্নয়ন সূচক অনুযায়ী আরও ৯ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।

গত বছরও এসডিজি পূরণে বাংলাদেশের উন্নয়নের সমালোচনা করে অনেকে বলেছেন, বাংলাদেশ আপাতত উন্নতি করলে ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না এবং এসডিজির ১৭টি লক্ষ্য পূরণে যে টার্গেটগুলো দেওয়া হয়েছে তার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে না বাংলাদেশ। কিন্তু জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুসারে, বাংলাদেশ এসডিজি অর্জনে সঠিক পথেই হাঁটছে। করোনার প্রভাব বাংলাদেশের সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত না করলে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের দৌড়ে অনেক দেশের থেকেই এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের পাশাপাশি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নিতে চায় বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের পথে হাঁটতে চায়। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে নিজ রিজার্ভ থেকে বিদেশি মুদ্রা ঋণ সহায়তা দিয়েছে। এছাড়া দারিদ্র্য মোকাবিলায় সুদানকে ৬৫ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতি বছর আমাদের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আগের রেকর্ড অতিক্রম করে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা বলতেই পারি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ।

মন্দার প্রকোপে বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত ছিল বাংলাদেশ তখন বিভিন্ন উপযুক্ত প্রণোদনা প্যাকেজ ও নীতি সহায়তার মাধ্যমে মন্দা মোকাবিলায় সক্ষমই শুধু হয়নি, জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৬ শতাংশের বেশি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির শ্লথ ধারার বিপরীতে আমদানি-রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। ঋণ পরিশোধে সক্ষমতার মানদণ্ডে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের সমান সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে।

শুধু তা-ই নয়, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনৈতিক শক্তির দিক থেকে বাংলাদেশ আগামী এক দশকে সিঙ্গাপুর ও সুইডেনকেও পিছনে ফেলবে।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ