X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহ মেডিক্যালে ফ্রি চিকিৎসা পাচ্ছেন করোনা রোগীরা

আতাউর রহমান জুয়েল, ময়মনসিংহ
২৪ জুন ২০২১, ১৮:৪০আপডেট : ২৪ জুন ২০২১, ১৮:৪০

দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনার চিকিৎসাসেবা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠলেও বিপরীত চিত্র এখন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। করোনার সাধারণ ওয়ার্ড, কেবিন এবং আইসিইউতে ফ্রি চিকিৎসাসেবা পেয়ে খুশি রোগী ও স্বজনেরা। চিকিৎসক-নার্সদের প্রশংসা করছেন তারা।

এর আগে করোনা রোগীদের কাছে গিয়ে চিকিৎসক-নার্সরা সেবা দেন না এমন অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ মে ‘ময়মনসিংহ মেডিক্যালে নামকাওয়াস্তে করোনার আইসিইউ’ শিরোনামে অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ রিপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন টকশোতেও আলোচনা হয়। পরে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির সুপারিশে হাসপাতালের সেবার মান বেড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে বুধবার (২৩ জুন) বিকাল ৪টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা সাধারণ ওয়ার্ড, কেবিন ও আইসিইউ ঘুরে রোগী ও স্বজন, চিকিৎসক-নার্সদের সঙ্গে কথা বলে সেবার মান বেড়েছে বলে জানা যায়।

করোনার ছয়তলার মহিলা ওয়ার্ডে শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ২০ জুন ভর্তি হন টাঙ্গাইলের সখীপুরের কলেজছাত্রী তাওহিদা আক্তার (১৭)। ভর্তির পর আরটিপিসিআর পরীক্ষায় তার করোনা শনাক্ত হয়। তাকে বেশিরভাগ সময় অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।

চিকিৎসক-নার্সদের প্রশংসা করছেন করোনা রোগীরা

হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিয়ে তাওহিদার বাবা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভর্তির পর চিকিৎসক-নার্সরা যত্ন সহকারে রোগীর কাছে এসে সেবা দিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত কোনও ওষুধপত্র বাইরে থেকে কিনতে হয়নি। সবকিছু হাসপাতাল থেকে ফ্রিতে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তিন বেলা যে খাবার দিচ্ছে, সেটাও মানসম্মত। আমরা চিকিৎসক-নার্সদের প্রতি অনেক খুশি।

হাসপাতালের আটতলার ২৮ নম্বর কেবিনে করোনা পজিটিভি হয়ে গত ১৪ জুন ভর্তি হন ময়মনসিংহ মহানগরীর নয়াপাড়া এলাকার পবন দাস (৭০) ও প্রীতি দাস (৬০) দম্পতি। তাদের এক কন্যা প্রীতি দাসও করোনা পজিটিভ। তবে তার কোনও সমস্যা নেই দেখে বাসায় আছে। এই দম্পতির শ্বাসকষ্ট থাকায় মাঝেমধ্যে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। এতে তাদের কোনও টাকা দিতে হয় না।

তাদের বড় কন্যা ডা. পুনম দাস বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান বেড়েছে। চিকিৎসক-নার্সরা সার্বক্ষণিক দেখভাল করছেন। কাছে এসে তারা রোগীর খোঁজখবর নেন। কোনও ওষুধপত্র বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে না। সবই ফ্রি পাচ্ছি।

হাসপাতালে সেবার মান বেড়েছে, কাছে গিয়ে রোগীকে দেখছেন চিকিৎসক-নার্সরা

তিনি আরও জানান, তার শ্বশুর ও শাশুড়ি করোনা পজিটিভ ছিলেন। তাদের ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করেছিলেন। সেখানে নানা সমস্যার মধ্যে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। সেই তুলনায় ময়মনসিংহ মেডিক্যালে অনেক ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন।

টাঙ্গাইলের গোপালপুরের গৃহবধূ আফিয়া খাতুনকে (২১) সন্তান প্রসবের জন্য হাসপাতালের গাইনি বিভাগে গত ৯ জুন ভর্তির পর সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তান হয়। সন্তান প্রসবের চার দিনের মাথায় জ্বর এলে তাকে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষায় তার করোনা শনাক্ত হয়। এখনও তিনি করোনার সাধারণ মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

আফিয়া বলেন, ভর্তির পর থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। আফিয়ার মা নুরজাহান বলেন, বাইরে থেকে হাসপাতালের সেবা নিয়ে মানুষের কাছে নানা অভিযোগ শুনেছি। হাসপাতালে এসে উল্টো চিত্র দেখতে পাচ্ছি। চিকিৎসাসেবা নিয়ে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

তবে কিছুদিন আগেও করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক-নার্সরা বেশ আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। এ নিয়ে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। রোগীর এক স্বজন তখন অভিযোগ করেছিলেন, ‘চিকিৎসক-নার্স রোগীর কাছে আসে না। দূর থেকে সেবা দেন। নার্স প্রয়োজনীয় ওষুধ কাগজে পেঁচিয়ে রোগীর স্বজনদের দিয়ে যান। প্রস্রাব-পায়খানা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোগী বেডে শুয়ে থাকলেও কেউ খোঁজ নেন না। রোগীর স্বজনরা দিনে তিনবার গিয়ে পায়খানা-প্রস্রাব পরিষ্কার ও ওষুধপত্র খাওয়ানোর কাজ করেন। নার্স, আয়া ও ওয়ার্ডবয়দের চাহিদা মতো টাকা দিলে অনেক সময় সেবা মেলে। দিনে-রাতে অপেক্ষা করেও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয় না রোগীর স্বজনদের।’

পরে চিকিৎসক ইমরুল হাসান রবিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের সুপারিশে করোনার চিকিৎসা ও আইসিইউ সেবার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে জনবল বাড়ানোর কথা বলে। এছাড়া রোগীর তথ্য স্বজনদের জানানোর ব্যবস্থা নেওয়া, ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্ট পদ সৃষ্টি এবং সেবার মান বাড়াতে মনিটরিং টিম গঠন করে কার্যক্রম জোরদারের সুপারিশ করেছিল। এসব পরামর্শ সামনে রেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়। সে আলোকে সেবার মান বেড়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

কোনও ওষুধপত্র বাইরে থেকে কিনতে হয় না, সবকিছু হাসপাতাল থেকেই দেওয়া হয়

রোগী ও স্বজনরা বলছেন, এখন চিকিৎসক-নার্সরা রোগীর কাছে এসে সেবা দিচ্ছেন। আটতলার পশ্চিম পাশের কেবিন ব্লকে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স মাহমুদা খাতুন বলেন, এখন আমরা গ্লাভস, মাস্ক ও ফেসশিট পরে রোগীদের কাছে গিয়ে সেবা দিচ্ছি।

সার্বিক বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে। সার্বক্ষণিক মনিটরিং, চিকিৎসক-নার্স ও কর্মচারীদের আন্তরিকতায় করোনা রোগীদের সেবাদান নিশ্চিত করতে কাজ চলছে। হাসপাতালে ভর্তির পর রোগীর চিকিৎসাসেবার সব দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। রোগীদের চিকিৎসার জন্য কোনও টাকা দিতে হয় না। চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

হাসপাতালের করোনা বিষয়ক ফোকাল পারসন চিকিৎসক মহিউদ্দিন খান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পজিটিভ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ সদরের একজন করে এবং নেত্রকোনার দুইজন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ভর্তি আছেন ১৪৯ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন ১১ জন।

/টিটি/
সম্পর্কিত
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
ত্রিশালে ধলা সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রের ২৬ শিশু অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি
মমেক হাসপাতাল ঘিরে অনুমোদনহীন ক্লিনিক-ল্যাবের ছড়াছড়ি
সর্বশেষ খবর
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচের ভেন্যু চূড়ান্ত
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচের ভেন্যু চূড়ান্ত
মিয়ানমার থেকে ফিরলেন ১৭৩ বাংলাদেশি
মিয়ানমার থেকে ফিরলেন ১৭৩ বাংলাদেশি
দক্ষ বিচার বিভাগ গঠনে বিশ্বমানের জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি প্রয়োজন: আইনমন্ত্রী
দক্ষ বিচার বিভাগ গঠনে বিশ্বমানের জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি প্রয়োজন: আইনমন্ত্রী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
সর্বাধিক পঠিত
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?