মীরসরাইয়ে নিয়ে এক গার্মেন্টকর্মীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার পাঁচ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমলূক জবানবন্দি দিয়েছেন। শুক্রবার (২৫ জুন) গ্রেফতারের পর শনিবার (২৬ জুন) বিকেলে তাদের চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার ইকবালের আদালতে তোলা হলে সেখানে জবানবন্দি দেন।
জেলা পুলিশের আদালত পরিদর্শক হুমায়ুন কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় ছয়জনকে আদালতে তোলা হলে, তাদের পাঁচজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।’
এর আগে ওই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় শুক্রবার অভিযান চালিয়ে ছয় আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিরা হলেন- নাজিম উদ্দিন রানা (১৯), আল আমিন (২৪), বাসের হেলপার শাহাদাত হোসেন মামুন (২২), বাস চালক ইসমাইল (৩১), বেলাল হোসেন (২৩) ও সাগর (২২)। এদের মধ্যে নাজিম উদ্দিন রানা ছাড়া বাকি পাঁচজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী তরুণীর বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে। তাকে গত বুধবার (২৩ জুন) সন্ধ্যার পর থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত মীরসরাই ও সীতাকুণ্ডে পৃথক তিন স্থানে পৃথক তিন গ্রুপ সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ধর্ষণের শিকার তরুণীকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়েছে।
মীরসরাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, গত ২৩ জুন (বুধবার) সন্ধ্যা ৬টায় পোশাককর্মী চন্দাকে (ছদ্মনাম, ২২) তার পরিচিত সীতাকুণ্ডের চাকা পরিবহনের বাসচালক আশরাফুল ইসলাম চট্টগ্রাম নগরের অলংকার আসার জন্য বলেন। সেখান থেকে চন্দাকে আল আমিন বাসে করে সীতাকুণ্ড নিয়ে আসেন। এ সময় সীতাকুণ্ডে বাস থেকে সব যাত্রী নামিয়ে দিলেও চন্দ্রাকে তারা নামতে দেয়নি। আল আমিন ও তার সহকারী (হেলপার) শাহাদাৎ চন্দ্রাকে সীতাকুণ্ডের জুটমিল এলাকায় নিয়ে বাসের মধ্যে ধর্ষণ করে।
তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে তারা চন্দ্রাকে জুটমিল এলাকায় বাস নামিয়ে চলে যায়। পরে চন্দ্রা তার পূর্ব পরিচিত রায়হান উদ্দিন রানাকে ফোন করে ঘটনার বিস্তারিত জানান। রানা তাকে সীতাকুণ্ড আসার জন্য বলেন। চন্দ্রা সীতাকুণ্ড আসার জন্য বাসে উঠলে ওই বাসচালক ইসমাঈল ও তার সহকারী (অজ্ঞাত) রাত প্রায় সাড়ে ১১টায় তাকে আবার ধর্ষণ করে সীতাকুণ্ড ফেলে চলে যায়।
পরবর্তী সময়ে রায়হান উদ্দিন রানা সীতাকুণ্ড এসে চন্দ্রার সঙ্গে দেখা করে তার বন্ধু সাগর ও বেলালসহ তাকে সীতাকুণ্ড থেকে রাত ৪টায় মীরসরাইয়ের সাহেরখালী এলাকার বেড়িবাঁধে নিয়ে যায়। সেখানে চন্দ্রাকে পুনরায় ধর্ষণ করে সাগর, বেলালসহ আরও কয়েকজন। এরপর রানা ও তার সহযোগীরা চন্দ্রার কাছে থাকা নগদ দুই হাজার টাকা ও মোবাইল সেট নিয়ে তাকে রেখে পালিয়ে যায়। চন্দ্রা বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সকালে বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে মীরসরাইয়ের নিজামপুর এলাকায় আসেন। পরবর্তী সময়ে বাসে করে সীতাকুণ্ড থানায় গিয়ে দুপুরে ধর্ষণের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের সর্বশেষ ঘটনা মীরসরাই থানা এলাকায় হওয়ায় সীতাকুণ্ড থানা অভিযোগটি মীরসরাই থানায় হস্তান্তর করে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মীরসরাই থানায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলা করেন চন্দ্রা। এরপর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সীতাকুণ্ড উপজেলার জোড়াআমতল, কুমিরা, সীতাকুণ্ড পৌরসভা ও মীরসরাইয়ের নিজামপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছয় আসামিকে গ্রেফতার করে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় মীরসরাই থানায় নিয়ে আসা হয়।