X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

তাপস-খোকন দ্বন্দ্ব কেন?

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
৩০ জুন ২০২১, ১৭:০৬আপডেট : ৩০ জুন ২০২১, ১৭:১৫

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা আবার প্রকাশ্যে এলো তাপস-খোকন দ্বন্দ্ব। দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন, তার মা, স্ত্রী ও বোনের আটটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নির্দেশনাটি এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের কারণে।

ঘটনার পরপরই বিক্ষুব্ধ খোকন সংবাদ সম্মেলন করে উচ্চ কণ্ঠে ঢাকা দক্ষিণের বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে দায়ী করে বলেছেন, তিনি নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে তাকে হয়রানি করছেন। দুদক অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছে তারা কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এ কাজ করেনি।

টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে বড় সাফল্য দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। শুধু রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ সংযোগ, সেতুসহ অবকাঠামোর চেহারা বদলেছে তা নয়, কিংবা জিডিপি প্রবৃদ্ধি বা মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে তাও নয়, বলা যায় শেখ হাসিনার সরকারের বড় সাফল্য মানুষের হৃদয়ে একটা উন্নয়ন স্পৃহা জাগাতে সক্ষম হয়েছে, যেটা আগের কোনও সরকার পারেনি।

কিন্তু ঠিক এ সময়টায় দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তার নিজস্ব রাজনীতি যতটা না করতে পেরেছে, তার চেয়ে বেশি করছে ক্ষমতার চর্চা। এবং এটা করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে নিজেদের ভেতর বিদ্বেষ, বিরোধ আর দ্বন্দ্ব। প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক জেলা-উপজেলা ও বিভাগে শাসক দলের ভেতর বিবাদ এবং বিবাদকে কেন্দ্র করে সহিংসতা দেখছি আমরা। সারা দেশেই এখন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ। কোনও জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগ আর এক আছে বলে মনে হয় না। এক আওয়ামী লীগে কত যে ভাগ। উপদলীয় কোন্দলে আওয়ামী লীগ ক্ষত-বিক্ষত। মুখে যদিও বলা হয়, তারা সবাই বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী কিন্তু বাস্তবে তারা অনুসরণ করেন বা সোজা বাংলায় বলা যায় চাটুকারিতা করেন স্থানীয় কোনও না কোনও নেতার এবং এই নেতা কেন্দ্রিক ক্ষমতাচর্চা থেকেই পক্ষ ও প্রতিপক্ষ সৃষ্টি হচ্ছে সর্বত্র।

শেখ ফজলে নূর তাপস এবং সাঈদ খোকন, দু’জনেই কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বড় নেতা। প্রকাশ্যে একে অন্যের প্রতি এমন দোষারোপ দলের নেতাকর্মীদের কেমন বার্তা দেয় সেটা ভাবনার বিষয়। জেলা, উপজেলা এবং প্রান্তিক পর্যায়ে দলের ভেতর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানোর দাওয়াই কি সেটা দলই ভালো বলতে পারবে। কিন্তু এত বড় সাংগঠনিক ভিত্তিসম্পন্ন দলের নেতাদের বিরোধ নিবেদিতপ্রাণ কর্মী সমর্থকদের হতাশ করে, সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে।

আওয়ামী লীগের কলহ-কোন্দল সংঘাতে রূপ নিচ্ছে। আহত-নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে খবর থাকছে। বিরোধী দল দুর্বল, তাই দলের ভেতর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যেই বিবাদে জড়াচ্ছেন নেতাকর্মীরা। খোদ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনি এলাকায়, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে তার ভাই মির্জা কাদেরের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের বিরোধে এক ভয়ংকর অবস্থা বিরাজ করছে। দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সেখানে দুই জন সম্প্রতি মারাও গেছেন। এমন সব পরিস্থিতিতে দলে কোন্দল বাড়ছে সারা দেশেই।

তাপস ও খোকনের বিরোধ শুরু মেয়র পদে মনোনয়নকে ঘিরে। এরপর সামনে আসে অর্থকড়ির প্রসঙ্গ। টাকার হিসাব নিয়ে গত জানুয়ারিতে তাদের বিরোধ মানুষ জানতে পারেন। শুরু হয় কথার লড়াই, চলে অনুসারীদের পাল্টাপাল্টি মিছিল-মানববন্ধনও।

তুলনামূলক কম কথা বলেন ফজলে নূর তাপস। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ সংক্রান্ত বিষয়ে সাঈদ খোকনের কথার জবাব তিনি দেননি। বিষয়টি আদালত ও দুদকের বলে এড়িয়ে গেছেন।

আধিপত্য বিস্তারের জন্য নেতাদের যে উদগ্র বাসনা তার মধ্যেই নিহিত আছে সহিংসতা। যেকোনোভাবে সংঘাত ও সহিংসতা হতে পারে। ব্যক্তি বনাম ব্যক্তি, ব্যক্তি বনাম গোষ্ঠী, গোষ্ঠী বনাম গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বনাম সম্প্রদায়, জাতি বনাম জাতি— এসব নানাভাবে হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশ। এসব দ্বন্দ্ব নিরসন করতে গিয়ে রাষ্ট্রকে তার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হয়। কিন্তু সহিংসতা যদি সরকারি দলের রাজনৈতিক অনুশীলন হয়ে দাঁড়ায় তখন সেটা থামাবে কে?

কিন্তু তাপস-খোকনের লড়াইটা ঠিক এ ধরনের আধিপত্য বিস্তারের নয়। তার চেয়ে বেশি মনস্তাত্ত্বিক।

আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে দলের অনুমতি নিয়ে এমন সংবাদ সম্মেলন করা, প্রকাশ্যে সরকার দলীয় মেয়রকে দোষারোপ করা, রাস্তায় নামার হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে কিনা সেটা পরিষ্কার নয়। দলের উপরের পর্যায়ে নিশ্চয়ই বিষয়টি গুরুত্ব অনুধাবনের চেষ্টা হবে। বলা হয় ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ বড় শক্তি। তাহলে কোন কারণে এসব ঘটছে তার একটা নিরীক্ষা হওয়া প্রয়োজন। কাজ করার বদলে দলের ভেতরে অন্তর্কলহ বাড়লে সাধারণ কর্মীরা পড়েন চরম বিভ্রান্তির মধ্যে। আমাকে কয়েকজন বলেছেন, দু্জনেই তাদের নেতা– তারা কোন দিকে যাবেন বুঝতে পারছেন না। তারা না বুঝলেও দলের কান্ডারিদের বোঝাটা বেশি জরুরি।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ