X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

একটি এইচডিইউ বেডের সন্ধানে

শাহেদ শফিক
১০ জুলাই ২০২১, ১১:০২আপডেট : ১০ জুলাই ২০২১, ১৮:০৮

দিলারা বেগম, বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। মেহেরপুর জেলার সদর হাসপাতালে দুই সন্তানের এই জননী প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। তবে দুদিন আগে হঠাৎই তার অক্সিজেনের লেভেল কমে আসে। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে কোনও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) বা হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) বেডে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন। জেলায় কোনও ব্যবস্থা না পেয়ে রাজধানী ঢাকায় খোঁজ শুরু করেন স্বজনরা। কিন্তু করোনা মহামারির সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে রাজধানীর অবস্থাওতো ভয়াবহ। রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে সরকারি হাসপাতালগুলোর আইসিইউ বেড। ফাঁকা নেই এইচডিইউ বেডও।

কূলকিনারা না পেয়ে গতরাতে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রোগীকে নিয়ে রওনা হন রাজধানী অভিমুখে। এরই মধ্যে তারা এক চিকিৎসক স্বজনের মাধ্যমে খোঁজ পেয়েছেন, করোনারোগীদের চিকিৎসায় মাত্র আড়াই মাস আগে রাজধানীর মহাখালীতে ‘ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল’ চালু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালে এরমধ্যে ৫০০ বেড সেন্ট্রাল অক্সিজেন সংযুক্ত। এই ৫০০টির মধ্যে ২১২টি বেড আইসিইউ বেড রয়েছে। বাকি ৫০০ সিলিন্ডার বেইজড এরিয়া। এগুলো সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা রুম। কারণ এগুলো আগে দোকান ছিলো। প্রতিটি রুমে একজন রোগী রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। কিছুটা আশার আলো জ্বালিয়ে আজ শনিবার (১০ জুলাই) সকাল ৭টার দিকে সেই হাসপাতালে হাজির হন তারা।

সকাল ৭টায় হাসপাতালে পৌঁছান তারা

‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই! ছোট সে তরী...’; অবস্থা কিছুটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই ‘সোনার তরী’ কবিতার মতোই। এখানে এসেও নিরাশ হতে হয় তাদের। দায়িত্বরতরা দিলারা বেগমের স্বজনদের জানিয়ে দেন, আইসিইউ কিংবা এইচডিইউ বেড, কোনওটাই ফাঁকা নেই। এইচডিইউতে তাদের আগেই আরও দুজন সিরিয়ালে আছেন। অন্তত তিনজন রোগী রিলিজ পেলে ভর্তি হতে পারবেন দিলারা বেগম।

এদিকে রোগীর অবস্থা বেগতিক, অক্সিজেনের লেভেল নেমে এসেছে ৬০-এ। সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে তাকে অ্যাম্ব্যুলেন্সে রাখা হয়েছে। দুই সন্তানের জননী দিলারা বেগমকে তখন অ্যাম্ব্যুলেন্সের মধ্যে ছটফট করতে দেখা গছে। স্বজনরাও তার সাধ্যমতো সেবা করার চেষ্টা করছেন। মাঝে মধ্যে কান্নাকাটিও করতে দেখা গেছে। বেডের জন্য ডাক্তারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন তারা। রোগীর স্বজনরা মোবাইল ফোনে রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতালেও খোঁজখবর নিচ্ছেন অনবরত। কিন্তু কোথাও কোনও বেড ফাঁকা থাকার সন্ধান পাননি।

এরই মধ্যে দিলারা বেগমকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের পাশে এসে দাঁড়ালো আরেকটি। তাতে শুয়ে আছেন এক সত্তুরোর্ধ্ব বৃদ্ধা। রাখা হয়েছে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে। অবশ্য তাদের আগে থেকেই সিরিয়াল নেওয়া। এসে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢোকানো হলো হাসপাতালে। তা শুধু তাকিয়ে দেখলেন দিলারা বেগমের স্বজনরা।

দিলারা বেগমের সঙ্গে এসেছেন, তার দুই বোন হোসনে আরা ও হাসনায়ারা। হোসনে আরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ছয়দিন মেহেরপুর সদর হাসপাতালে ছিলাম। সেখান থেকে ডাক্তারা বলেছে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসতে। রাত ১টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। ভোর ৭টায় এখানে এসে পৌঁছাই। এখন শুনছি তার (রোগী) জন্য যে ধরনের বেড দরকার সেধরনের বেড খালি নেই।

তিনি আরও বলেন, আমার একজন আত্মীয় রয়েছেন। তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালের ডাক্তার। তিনিও চেষ্টা করছেন। কোথাও ফাঁকা পাচ্ছি না। প্রাইভেটেও চেষ্টা করছি। তাতেও ফাঁকা নেই। দুই ঘণ্টার ধরে এখানে অবস্থান করছি। রোগী কষ্ট পাচ্ছে। জানি না উপরওয়ালা কপালে কী রেখেছেন!

‘উপরওয়ালা’ হয়তো হোসনে আরার কথা শুনেছেন! তার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিলো এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক পড়ে তাদের। দিলারা বেগমকে তোলা হয় ট্রলিতে। নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালের ভেতরে।

2

হাসপাতালের তথ্য ও অনুসন্ধান কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা জহিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আসলে পরিস্থিতি তেমন একটা ভালো না। প্রতিদিন অনেক রোগী আসে। শুরুর দিকে যা রোগী আসতো এখন তার ১০ গুণ বেশি আসে। অনেক সময় সব বেড ভরে যায়। যখন কেউ মারা যায় বা রিলিজ নেন, তখন আসন ফাঁকা হয়। নানান সীমাবদ্ধতার পরও আমাদের চিকিৎসকরা সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

গত বৃহস্পতিবার ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে যে হারে রোগী আসছে তাতে আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে আমাদের সব বেড ও আইসিইউ পূর্ণ হয়ে যাবে। তখন পরিস্থিতি সংকটের দিকে যেতে পারে।

তার আশঙ্কা অনুযায়ী আজ শনিবার হাসপাতালটির চিত্র তেমনই দেখা গেছে।

ওইদিন তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ঢাকার বাইরে থেকে যেসব রোগী আছে তাদের ৫০ শতাংশকে আইসিইউ সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। বাকিদের এইচডিইউ বেডে রাখা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৭০-৮০ জনের মতো রোগী ভর্তি হচ্ছে। আর ছাড়পত্র পাচ্ছে ৩০-৩৫ জনের মতো। আসন ভরে গেলে তখন আগত রোগীরা ওয়েটিং এ থাকবেন। বেড ফাঁকা হলে সিরিয়াল অনুযায়ী অবস্থার বিবেচনায় তাদের বেডে তোলা হবে।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
লাইফ সাপোর্টে সেই শিক্ষিকা
ওমিক্রন সতর্কতা: ৩ বিভাগে আইসিইউ শয্যা ৮২টি
সরকারি সাত হাসপাতালে আইসিইউ বেড ফাঁকা নেই
সর্বশেষ খবর
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন