X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদযাত্রা এবারের জন্য বন্ধ হোক

সালেক উদ্দিন
১০ জুলাই ২০২১, ১৬:৫২আপডেট : ১০ জুলাই ২০২১, ১৭:২৯

সালেক উদ্দিন সামনে ঈদুল আযহা। সারা বিশ্বের মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব। সাধারণত যে যেখানেই থাকি না কেন ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি যাই। এটা শুধু আমাদের দেশে নয় পৃথিবীর অনেক দেশেরই রেওয়াজ।

দুর্ভাগ্য হলেও সত্য এবারের ঈদটি পড়েছে করোনা মহামারির সময়। দেশে করোনা এখন আর নিয়ন্ত্রণে নেই। এখন আর শহরকেন্দ্রিক নেই করোনা। ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী এলাকায়, শহর-বন্দর, গ্রামগঞ্জে সর্বোপরি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। শুধু সরকারি হিসেবে প্রতিদিনের করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু রেকর্ড করছে প্রতিদিন। এখন করোনায় মৃত্যু ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। এটি প্রায় প্রতিদিনের খবর।  অর্থাৎ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যু এখন নতুন কোনও খবর নয়। করোনা এখন পুরো দেশব্যাপী দুরন্ত ঘোড়ার মতো দৌড়ে বেড়াচ্ছে। দৌড়ে বেড়াচ্ছে বললে ভুল হবে রীতিমতো দৌড়ে চূড়ায় উঠে যাচ্ছে। সরকারি পরীক্ষাগারের বরাত দিয়ে একটি পত্রিকার  রিপোর্টে দেখলাম প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫০০ জন করোনার রোগী শনাক্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে ৭ জন। দেশে একদিনে করোনা শনাক্ত উঠে এসেছে ৪১.৪৬ শতাংশে। সে এক ভয়ঙ্কর চিত্র!

এসব তথ্য যায়ই বলুক, রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশব্যাপী করোনা যে এখন প্রকৃত মহামারির রূপ নিয়েছে এতে কোনও সন্দেহ নেই। সংক্রমণ এবং মৃত্যুর আমরা যে হিসেব পাই তা হলো সরকারি হিসেব। যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার নিচ্ছেন, এটা তাদের হিসেব। গ্রামেগঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরও যে কত হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন তাদের হিসেব সরকারি খাতায় নেই। থাকার কথাও না। আর যার কারণেই কঠোর লকডাউনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাঠে নামানো হয়েছে পুলিশ, বিজিপি, র‌্যাবসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের।

বড় আশা নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনেই গেলো সপ্তাহে ‘দৃষ্টি এখন কঠোর লকডাউনের ওপর’ শিরোনামে লিখেছিলাম, ‘করোনা প্রতিরোধের এযাবৎকালের পরীক্ষিত উপায় হলো সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন এবং টিকা। ইতিপূর্বে ঢিলেঢালা লকডাউনের কারণে এর কোনোটাই আমরা মানিনি। যার জন্যই করোনা বিস্তার এত বেশি। যা হোক বর্তমানে দেশব্যাপী যে কঠোর লকডাউনের সরকারি সিদ্ধান্ত এসেছে তাতে পুলিশ বিজিবি’র র‌্যাবের সঙ্গে সেনাবাহিনী নামানোর কথা জেনে আশ্বস্ত হয়েছি। আশা করছি এবার করোনা নিয়ন্ত্রণে যুগোপযোগী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বলতেই হবে এখন আর এক্সপেরিমেন্ট এর সময় নেই।’

আমার ওই লেখার সে আশা আশাই রয়ে গেছে। সেনাবাহিনী দেখে মানুষ ভয় পাবে মনে করেছিলাম এবং সেই ভয়টি কাজে লাগবে ধারণা করে সেনাবাহিনীর ওপর ভরসা করেছিলাম অনেক। ভেবেছিলাম মানুষ অন্তত এবার বিনা কারণে রাস্তায় বের হবে না, আড্ডা দেবে না, কাঁচাবাজারে ধাক্কাধাক্কি করবে না। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মানুষ নিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপনে আসেনি। কঠোর লকডাউন শুধুমাত্র নামেই কঠোরে রূপ নিল। এই কঠোর লকডাউনের সময়কালে আজই আমি বাড়ি থেকে প্রথমবারের মতো বেরিয়েছিলাম। আমার বাসস্থান মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেটে যেতে হয়েছিল অতি জরুরি একটি ওষুধ কেনার জন্যে। সাথে প্রেসক্রিপশন থাকলেও অনেক ভয়ে ভয়ে গিয়েছিলাম সেখানে। গিয়ে যা দেখলাম তাতে ভয়ের কোনও কারণ আছে বলে আর মনে হলো না। শত শত মানুষের মিলনমেলা যেন এই কৃষি বাজার। কারও মুখে মাস্ক আছে , কারোর মাস্ক মুখের নিচে। আবার কারও মুখে মাস্কই নেই। সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। কেনাকাটায় কাঁচাবাজারে ধাক্কাধাক্কি চলছে রীতিমতো। কঠোর লকডাউনের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে চোখে রাখতে পরলো না। যদি ঢাকা শহরের অধিকাংশ কাঁচাবাজারেই এই অবস্থা হয় তবে এই কঠোর লকডাউনের ফলাফল খুব একটা ভালো হওয়ার কথা নয়। প্রকৃতপক্ষে হচ্ছেও তাই। আর অলি-গলির কথা বলবেন? সেখানে নিয়ম-কানুনের কোনও বালায়ই নেই। দেখার লোকও যেন নেই।

এসব কারণেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। যখন এই লেখাটি লিখছি তখন গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড ২১২ জন ঘোষিত হলো।

দেশে করোনা মহামারির রূপ নেওয়ার পেছনে এছাড়াও যে কারণগুলো কাজ করেছে বলে আমার মনে হয়েছিল তা গত লেখায় বিস্তারিত লিখেছিলাম। এই লেখায় তা আর উল্লেখ করতে চাই না বরং যে কথাটি বলতে চাই তা হলো অবস্থার যেন আরও অবনতি না হয়। দৈনিক সংক্রমণ ১১ হাজার থেকে যেন ৫০ হাজারের কোঠায় পা না বাড়ায়। মৃত্যুর সংখ্যা ২ শত থেকে যেন ২ হাজারে না যায়। এর জন্য সরকারকে যা যা করা দরকার যতটা কঠোর হওয়া দরকার তাই হতে হবে।

করোনার সংক্রমণ প্রথমত শহর কেন্দ্রিক ছিল। এটি গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে একটি প্রধান কারণ ছিল গত ঈদে  সরকারি বিধি-নিষেধ থাকা সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ মানুষ ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে যাওয়া। সে সময় ফেরিতে  খাঁচায় যেমন মুরগী রাখা হয় তেমনি গিজগিজ করে মানুষ  নদী পার হয়ে  গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে গেছে। গেছে আত্মীয়-স্বজনের সাথে ঈদ উৎসবে যোগ দিতে। লকডাউনের কারণে তারা আটকা পড়েছিল ফেরিতে গিয়ে। অথচ আটকা পড়ার কথা ছিল ঘর থেকে বের হওয়ার সময়। ফেরি পর্যন্ত তাদের যাওয়ার উপায় থাকার কথা ছিল না। এটা অতি ঢিলেঢালা লকডাউনের একটি নমুনা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। যার প্রেক্ষিতে যে করোনা শহরে ছিল যাকে শহরের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ছিল তা চলে গেলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল। আবার সীমান্তবর্তী এলাকায় যারা গিয়েছিলেন তারা ঈদ শেষে সেখান থেকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের করোনা নিয়ে ফিরেছেন ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরাঞ্চলের কর্মস্থলে।

এখন কোরবানির ঈদের মৌসুম। এই ঈদেও যদি গত রোজার ঈদের মতো অবস্থা হয়। যদি লাখ লাখ মানুষ ঢাকাসহ শহর অঞ্চল থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঈদ যাত্রায় অংশ নেয় তবে তা হবে করোনার কাছে আত্মহুতি দেওয়ার শামিল। রোজার ঈদের সময় দেশে করোনা অবস্থা নিয়ন্ত্রণে ছিল। এবার রয়েছে নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায়। এমন কঠিন অবস্থায়ও যদি এবারের ঈদ যাত্রার  মানুষদের ঠেকানো না যায় তবে বলতেই হবে করোনার কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া এদেশের মানুষের আর কোনও উপায় নেই।

এবারের লেখায়  সরকারের কাছে একটিই  অনুরোধ তা হলো কঠোর লকডাউনকে কঠোরতার রুপ দিন। কাঁচা বাজার, গরুর হাটসহ জনসমাগম হয় এমন জায়গায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোক নিয়োগ করুন। সামজিক দূরত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করুন। যারা যেখানে আছেন সেখানেই এবারের ঈদ করবে সেই রকম নির্দেশ জারিই শেষ কথা নয় সেই নির্দেশ পালনে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন এবং অন্তত এবারের জন্য ঈদযাত্রাকে বন্ধ করুন।

লেখক: কথাসাহিত্যিক
   

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ক্যাসিনো কাণ্ডের ৫ বছর পর আলো দেখছে ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স
ক্যাসিনো কাণ্ডের ৫ বছর পর আলো দেখছে ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
পিএসজির অপেক্ষা বাড়িয়ে দিলো মোনাকো
পিএসজির অপেক্ষা বাড়িয়ে দিলো মোনাকো
অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে আটকা পড়েছে শতাধিক পাইলট তিমি
অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে আটকা পড়েছে শতাধিক পাইলট তিমি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ