বাংলাদেশ সময় তখন ১২ জুলাই প্রথম প্রহর, ঘড়িতে সময় আড়াইটা পেরিয়ে গেছে। ঠিক এসময় লন্ডনের আকাশে শুরু হয়েছে তুমুল বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিতে মিশে যাচ্ছে লাখো ব্রিটিশের চোখের পানি। মাত্রই নিজেদের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ড পেনাল্টিতে হেরে গেছে ইতালির কাছে। আর এ হারে বহুল প্রতীক্ষিত আন্তর্জাতিক ট্রফিটা অধরাই রয়ে গেল, ‘ফুটবলের ঘরে ফেরা’ও হলো না ফুটবলের জনকদের। অথচ এই উচ্ছ্বাসেই আজ উদযাপনের আশা নিয়েই লকডাউন ভেঙে রাস্তায় নেমে এসেছিলো ব্রিটিশরা।
১৯৬৬ সালে প্রথম বিশ্বকাপের ট্রফি জিতেছিল ইংল্যান্ড। এরপর প্রায় ৫৫ বছর আন্তর্জাতিক শিরোপা জয়ের স্বাদ পায়নি তারা। দীর্ঘদিন শিরোপা খরায় ইংল্যান্ডের এখন যে কোনও বড় টুর্নামেন্ট জেতা মানেই নাকি ‘ফুটবলের ঘরে ফেরা’। শিরোপার মুখিয়ে থাকা ব্রিটিশরা গেল রাশিয়া বিশ্বকাপে সেমি ফাইনাল থেকে ফিরে আসতে হয়। এবার ‘ইউরো ২০২০’-তে ফাইনালে চলে যাওয়ায় ‘ঘরে ফেরা’র দাবি আরও প্রকট হয়েছিলো। কিন্তু ১-১ গোলে সমতায় থাকা ইউরো কাপে ফাইনাল ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও ম্যাচের ফল অমীমাংসিত। শেষ পর্যন্ত শাসরুদ্ধকর টাইব্রেকারে ইংল্যান্ডকে ৩-২ গোলে হারিয়ে ইতালি দ্বিতীয়বারের মতো ইউরো ট্রফি জেতে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, খেলার শেষ পর্যায়ে ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম এবং এর আশপাশে জড়ো হওয়া ভিড়ে নিজেদের মধ্যে এবং নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কোন্দলে জড়ানোয় ৪৯ জন দর্শককে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া এসময় ১৯ পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।
শুধু স্টেডিয়াম নয়, ইউরো ফাইনালের খেলা দেখতে মোড়ে মোড়ে অস্থায়ীভাবে লাগানো হয়েছে বড় স্ক্রিন। রাস্তায় নেমে এসেছে লাখ লাখ মানুষ। প্রায় অধিকাংশের মুখেই ছিলো না মাস্ক। অথচ ব্রিটেনজুড়ে করোনার লকডাউন চলছে। করোন প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দেওয়ার পরও সংক্রমণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
স্থানীয় সময় বিকেল থেকেই লকডাউন ভেঙে জড়ো হতে থাকেন মানুষ। লন্ডনের ট্রাফলগার স্কোয়ারে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। লন্ডন, বার্মিংহাম, ম্যানচেষ্টারে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে আসলেও কোথাও পুলিশকে বাধা দিতে দেখা যায়নি। ইংল্যান্ডের পতাকা হাতে, জার্সি গায়ে জমায়েতে লাখ লাখ মানুষ হামলে পড়েছেন। দীর্ঘদিন পর এরকম কানায় কানায় পূর্ণ লাখো মানুষ রীতিমত উৎসবে মেতেছেন।
করোনার লকডাউন বহাল থাকা অবস্থায় লাখ লাখ মানুষের জমায়েত ব্রিটেনে করোনার থার্ড ওয়েভ নিয়ে আসার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কি না, সেটা নির্ভর করছে ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করছে, তার উপর। কারণ, ব্রিটেনের সিংহভাগ মানুষকে সরকারের পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন অফার করা শেষ।
অর্থনীতির বড় বিপর্যয় এড়াতে ব্রিটেনে বরিস জনসনের সরকার এখন লকডাউন তুলে দিতে চায়। ১৯ তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়ারও কথা। যদিও ব্রিটেনে করোনায় মৃত্যুর হার বাড়ছে, সঙ্গে আক্রান্তের হারও। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের কথা সরকার শুনছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
This is England and his fan's.... pic.twitter.com/8fjCCEey0B
— Schizophrenic...... (@Blackseetornado) July 12, 2021