X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে সতর্ক রোহিঙ্গারা

বিদেশ ডেস্ক
১২ জুলাই ২০২১, ১৯:৩৭আপডেট : ১২ জুলাই ২০২১, ২১:১৮

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী জোটে রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানিয়েছে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ছায়া সরকার। কিন্তু বিশেষ করে কয়েক দশক ধরে বৈষম্য ও রক্তাক্ত সহিংসতার মধ্যে জীবনযাপন করার পর নিপীড়িত মুসলিম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মানুষ এই বিক্ষোভ নিয়ে সতর্ক। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি'র এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।

ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চি’র সরকার উৎখাত হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় পড়েছে মিয়ানমার। দেশটিতে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে নামেন গণতন্ত্রপন্থীরা এবং জান্তা কঠোর হাতে এগুলো দমন করছে। সু চির দলের আইন প্রণেতারা জাতীয় ঐক্য সরকার গঠন করেছেন। তারা এই প্রতিরোধ আন্দোলনে বিদেশি সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রচার মাধ্যমের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

গত মাসে এ ঐক্য সরকারের পক্ষ থেকে সামরিক শাসন অবসানের আন্দোলনে যুক্ত হতে রোহিঙ্গাদের আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, ২০১৭ সালে সামরিক অভিযানের মুখে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া হবে।

ছায়া সরকারের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘু এই জনগোষ্ঠীকে নাগরিকত্ব দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।  মিয়ানমারের রাজনীতিকদের পক্ষে রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহারও নতুন। বার্মার জাতিগোষ্ঠী ও সু চি’র সরকার রোহিঙ্গাদের রাখাইনে বসবাসকারী মুসলিম হিসেবে অভিহিত করতো। তবে মিয়ানমারে এখনও বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে সন্দেহ বাড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকত্ব বঞ্চিত এসব মানুষকে বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী বলে মনে করা হয়।

প্রায় এক দশক ধরে রাখাইনের থেট কায় পাইন শিবিরে থাকা ওয়াই মার বলেন, প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং পরে বিদেশ থেকে সমর্থন পাওয়া- যেন একেবারে মাছ ধরার জন্য টোপ ফেলা। আমরা উদ্বিগ্ন, আমরা বেঁচে আছি শুধু মানবঢাল বা বলির পাঁঠা হওয়ার জন্য।

চার সন্তানের জননী সান ইয়ির মুখেও একই কথা। তিনি বলেন, এতদিন ধরে নিপীড়নের শিকার হওয়ার কারণে আমরা পূর্ণ আস্থা ও প্রত্যাশা রাখতে পারি না।

এমন প্রতিশ্রুতির পরও জাতীয় ঐক্য সরকারের ৩২ সদস্যের মন্ত্রিসভায় রোহিঙ্গাদের কোনও প্রতিনিধি রাখা হয়নি।

শিবিরের আরেক বাসিন্দা কো তুন হ্লা বলেন, ২০১৫ সালে সু চির দল ক্ষমতা গ্রহণের পর রাতারাতি সবকিছু পাওয়া যাবে না বলে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু আমরা একেবারে মৌলিক অধিকার বঞ্চিত হয়েছি। যেমন, চলাচলের স্বাধীনতা, নাগরিক হওয়া, নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার মতো কোনও অধিকার আমাদের নেই।

এই শিবিরে অবস্থান করেই তারা ২০১৭ সালে রাখাইনে সামরিক অভিযানের কথা জানতে পারেন। তারা জেনেছেন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ডের মুখে তাদের জনগোষ্ঠীর সাত লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে।

রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে মিয়ানমারের বেশিরভাগ নাগরিকদের কোনও সহানুভূতি ছিল না। এমনকি রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলা অ্যাক্টিভিস্ট ও ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশকারী সাংবাদিকদের অনলাইনে হেনস্তা ও হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়েছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা পরিচালনার অভিযোগ আনা হলে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে জেনারেলদের রক্ষায় নেদারল্যান্ডসের হেগে হাজির হন সু চি। কয়েক মাস পর সেই জেনারেলরাই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে।

বার্মার অধ্যুষিত ইয়াঙ্গুন ও মান্দালয়ে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ দমনে কোনও দয়া দেখায়নি সামরিক সরকার। এমন পরিস্থিতিতে থেট কায় পাইন ক্যাম্পের অনেকেই ভীত। তুন হ্লা নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, কোনও দ্বিধা ছাড়াই তারা নিজেদের জনগোষ্ঠীর মানুষকে নৃশংস ও নির্মমভাবে হত্যা করবে। আমাদের বিরুদ্ধে তারা আরও বেশি করবে। কারণ, আমাদের নিয়ে তাদের কোনও চিন্তা নাই।

উইন মাউং জানান, ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের কয়েক দিনের মধ্যেই সেনারা থেট কায় পাইন ক্যাম্পে এসে একটি বৈঠক করে। বৈঠকে বাসিন্দাদের আশ্বস্ত ও শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু যখন আমাদের অধিকারের কথা তুলে ধরা হয়, তখন তারা হুমকির সুরে কথা বলা শুরু করে।

তিনি বলেন, তারা বলে আমরা বাঙালি, রোহিঙ্গা না এবং তারা আমাদেরও গুলি করার হুমকি দেয়।

২০১৭ সালে রাখাইনে সামরিক অভিযানের সময় মিয়ানমারের সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল মিন অং হ্লাইং। এখন তিনি জান্তাপ্রধান। সম্প্রতি রোহিঙ্গা শব্দকে কাল্পনিক শব্দ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

থেট কায় পাইন শিবিরে প্রায় এক দশক ধরে অবস্থান করা অনেকের রাজনৈতিক আনুগত্য সবার আগে বিবেচনা করার মতো কিছু না। কো তুন হ্লা বলেন, তারা যদি আমাদের অধিকার দেয় আমরা সেনাবাহিনী, এনএলডি (সুচির দল) বা এনইউজি (ছায়া সরকার)-কে সমর্থন করবো। যে আমাদের অধিকার দেবে আমরা তাদের সঙ্গেই সহযোগিতা করবো।

সান ইয়ি বলেন, আমার আশা ‘আমি আমার আগের জীবনে ফিরে যেতে চাই। কিন্তু কখন আমাদের প্রত্যাশা ও আশা পূরণ হবে’? দীর্ঘশ্বাস নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মৃত্যুর পরে’?

/এএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ফিরলেন ১৭৩ বাংলাদেশি, মিয়ানমারে ফেরত যাবেন ২৮৮ জন
নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিতে এসে ১৭৩ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়ে গেলো মিয়ানমার
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
সর্বশেষ খবর
বৃষ্টির প্রার্থনায় বিভিন্ন জেলায় নামাজ আদায়
বৃষ্টির প্রার্থনায় বিভিন্ন জেলায় নামাজ আদায়
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর বোল্ট
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর বোল্ট
রানার্সআপ হয়ে প্রিমিয়ার লিগে ওয়ান্ডারার্স 
রানার্সআপ হয়ে প্রিমিয়ার লিগে ওয়ান্ডারার্স 
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা