X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুই-আড়াই যুগ আগের কমিটি দিয়ে চলছে উপজেলা আ.লীগ  

পাভেল হায়দার চৌধুরী
১৪ জুলাই ২০২১, ২২:৩১আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২১, ২২:৪৬

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটিগুলো কে চালাচ্ছে, কীভাবে চলছে, তা নিয়ে দলের কোনও পর্যায়েই কোনও মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। অনেক উপজেলাই রয়েছে যেখানে গত আড়াই-তিন দশক ধরে কোনও সম্মেলন হয় না। ২৫-৩০ বছর আগের নির্বাচিত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক মারা গেছেন, দল চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। শতাধিক উপজেলা রয়েছে, যেখানে সবশেষ সম্মেলন হয়েছে দুই থেকে আড়াই যুগ আগে। আর দুই শতাধিক উপজেলায় দল চলছে এক থেকে দেড় দশক আগের কমিটি দিয়ে। বছরের পর বছর যায়, কিন্তু পুরনো নেতৃত্বই থেকে যায়।

কিশোরগঞ্জ জেলায় ১৩টি উপজেলা। এগুলো হলো—কিশোরগঞ্জ সদর, হোসেনপুর, কটিয়াদি, পাকুন্দিয়া, করিমগঞ্জ, তাড়াইল, ভৈরব, কুলিয়ারচর, নিকলী, ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও বাজিতপুর। এরমধ্যে বাজিতপুর বাদে বাকি ১২টি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে ২৫/২৬ বছর আগে। ২০১৯ নভেম্বরে সম্মেলন হয়েছে বাজিতপুর উপজেলার। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সম্মেলন হয়েছে ২৭ বছর আগে।

ঢাকার একেবারে কাছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সম্মেলন হয়েছে এখন থেকে ২৫ বছর আগে।

২৪ বছরের পুরোনা কমিটি দিয়ে চলছে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা আওয়ামী লীগ। এই উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দু'জনই প্রয়াত। যে কারণে দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্তদের দিয়েই চলছে ছাতক কমিটি।

অন্তত তিন ডজন উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে থাকা নেতা মারা গেছেন। উপজেলায় সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক মারা গেছেন এমন রয়েছে দুই ডজন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যমান কমিটির নেতাদের পদ হারানোর শঙ্কা, স্থানীয় দ্বন্দ্ব-কোন্দল, দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের টালবাহানাসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন তৃণমূল পর্যায়ের এসব সম্মেলন সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে সম্মেলনের তারিখ ঠিক করেও তা স্থগিত বা বাতিল করতে হয়েছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে ইউনিটগুলোর কমিটির মেয়াদ তিন বছরের। অর্থাৎ দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতি তিন বছর পর পর সম্মেলনের মাধ্যমে এসব কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে।

বর্তমানে আওয়ামী লীগের ৭৮টি জেলা কমিটি রয়েছে। এছাড়া প্রশাসনিক উপজেলাগুলোতে একটি করে উপজেলা কমিটি, মহানগরের পুলিশি থানাগুলোতে একটি করে থানা কমিটি, মহানগরের ওয়ার্ডগুলোতে একটি করে ওয়ার্ড কমিটি, দেশের পৌরসভাগুলোতে উপজেলা ও থানা মর্যাদার একটি করে পৌর কমিটি, দেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদে একটি করে ইউনিয়ন কমিটি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ডগুলোতে ওয়ার্ড কমিটি এবং পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ডগুলোতে ওয়ার্ড কমিটি।

সম্মেলন ও নতুন কমিটি না হওয়া প্রসঙ্গে  বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না, সংগঠনও হচ্ছে না গতিশীল। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. হারুন অর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজনৈতিক সংগঠনগুলোতে সম্মেলন না হওয়ার রীতি চালু রয়েছে বলেই নতুন নেতৃত্ব উঠে আসছে না। তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব তৈরি করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই নিয়মিত সম্মেলন করতে হবে।’ 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘তৃণমূলে নেতারা পদ ছাড়তে চান না। যখনই সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশনা যায় কেন্দ্র থেকে, তৃণমূল নেতারা নানা রকম টালবাহানা শুরু করে।’ তিনি বলেন, ‘তৃণমূল নেতাদের আবদার-অনুরোধ থাকে যে, মাঠে লড়াই সংগ্রাম করেছি, আর কয়টা দিন থাকি নেতৃত্বে। ফলে সম্মেলন করা হয় না, নতুন নেতৃত্বও তুলে আনা সম্ভব হয় না।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘সংগঠনের প্রত্যেক স্তরে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব তৈরির লক্ষ্যে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের ৮ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা জট লেগে থাকা তৃণমূলের সম্মেলন আয়োজন করবেন।’ তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই আওয়ামী লীগ জেলা-উপজেলাসহ সংগঠনের সর্বস্তরে সম্মেলন আয়োজন করে আওয়ামী লীগকে গতিশীল করে তোলা হবে।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের সর্বস্তরে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। অনেক জেলা-উপজেলায় নিয়মিত সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘চলমান সাংগঠনিক সফরে দলকে নতুনরূপে সাজিয়ে তোলা হবে। আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বেশ কিছু জেলার তৃণমূল নেতাকর্মীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের অপর সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম  বলেন, ‘বেশিরভাগ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। এবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সফর শুরু হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন, যাতে তৃণমূলের সম্মেলন নিয়ে টালবাহানা করা না হয়।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অপর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রায় সব কমিটির সম্মেলনই অনিয়মিত। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনিটরিংয়ের অভাবে মূলত নিয়মিত সম্মেলন করা যায় না। ফলে নেতৃত্ব উঠে আসে না।

আবার যেসব জেলায় সম্মেলন হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হতে সময় খেয়ে ফেলা হয় এক থেকে দেড় বছর। আবার জেলা থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা পড়লে তা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন পেতে পেতে চলে যায় আরও  ছয় মাস থেকে এক বছর।

/এপিএইচ/এমকে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
রাব্বির ব্যাটে শাইনপুকুরকে হারালো শেখ জামাল
রাব্বির ব্যাটে শাইনপুকুরকে হারালো শেখ জামাল
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা