X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

দান করা চামড়া কোথায় যায়?

শফিকুল ইসলাম
২০ জুলাই ২০২১, ০৯:০০আপডেট : ২০ জুলাই ২০২১, ০৯:০০

শাহজাহানপুর ঝিল মসজিদ সংলগ্ন মাদ্রাসার ছাত্র তাওহীদ। গতবছর কোরবানির সময় মাদ্রাসার হয়ে চামড়া সংগ্রহ করেছিল শাহজাহানপুর সংলগ্ন মহল্লায়। ঈদের দিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত হেঁটে বেড়িয়েছিল এ বাড়ি ও বাড়ি। সারাদিনের সংগ্রহ করা চামড়া এসে জমা দিয়েছিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের হাতে। তাওহীদ তখনও জানতো না তার সারাদিনের কষ্টের এ সংগ্রহ আদৌ কাজে আসবে কিনা।

তাওহীদের মতো শত শত মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষক বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেন। এলাকার অনেকে আবার খুঁজে বের করেন তাদের। বিক্রির ঝামেলা এড়াতে তারা সরাসরি চামড়া দান করেন অপেক্ষাকৃত দরিদ্র শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিচালিত মাদ্রাসায়। ওই কোরবানিদাতারাও জানেন না, তাদের এই দান শেষপর্যন্ত কোথায় যাচ্ছে বা সেটা কোনও কাজে আসছে কিনা।

পশুর চামড়াগুলো মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। ব্যবসায়ীরা কখনও পিস হিসেবে, কখনও লট ধরে কেনেন। ব্যবসায়ীরা এসব চামড়া জড়ো করেন রাজধানীর পোস্তায়। যেখানে জড়ো হয় সারাদেশের কোরবানির পশুর চামড়া। লবণ মাখিয়ে রাখার কয়েকদিন রাখার পর সেটা বিক্রি হয় ট্যানারি মালিকদের কাছে।

এটাই ছিল এতদিনকার কোরবানির স্বাভাবিক দৃশ্য। কিন্তু গতবারের মতো এবারও যদি বাজার মন্দা যায়, তবে দান করা চামড়া নিয়ে ফের বিপাকে পড়বে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, গতবছর মহল্লায় ঘুরে ঘুরে যোগাড় করা চামড়াগুলো উল্টো আরও বিপদে ফেলে দিয়েছিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে। অনেকেই চামড়া বিক্রি করতে না পেরে শেষে ড্রেনে ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। অনেকেই রাতের আঁধারে ফেলে গেছেন রাস্তার পাশে। পরিবেশ সচেতনরা খানিকটা কষ্ট করে হলেও তা মাটিতে পুঁতেছিলেন। কারণ দিন-রাত পড়ে থাকায় চামড়ায় ধরেছিল পচন, ছড়াচ্ছিল গন্ধ। বাজার মন্দা থাকায় গতবছর মৌসুমী ব্যবসায়ীরা মাঠে নামেননি।

অনেক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আবার বেশি লাভের আশায় নিজেদের টাকায় লবণ কিনে গাড়িভাড়া করে চামড়া নিয়ে গিয়েছিলেন আড়তে। সেখানেও অনেকে বিক্রি করতে না পেরে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন চামড়া।   

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাহজাহানপুর ঝিল মসজিদের মোয়াজ্জিন আব্দুল আলিম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘গতবছরের কথা আর বলবেন না। সারাদিন কষ্ট করে প্রায় দুই শ’ চামড়া যোগাড় করেছিলাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত চেষ্টা করেছি বিক্রির। পরে আমিনবাজারে নিয়ে গিয়েছিলাম।  সেখানেও বিক্রি করতে পারিনি। লবণ লাগিয়ে পরদিন পোস্তায় নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে বিক্রি করেছিলাম নামমাত্র দামে। এ বছর কী হবে আল্লাহই ভালো জানেন।’

গতবছর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছিল, রাস্তার মোড়ে মোড়ে চামড়া নিয়ে বসেছিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও বিক্রি করতে পারেনি কেউ। অথচ অন্যান্য বছর এ সব চামড়া বিক্রি হয়ে যায় দুপুর ২টা থেকে তিনটার মধ্যেই।

জানা গেছে, করোনার কারণেই মূলত রাজধানীতে গতবছর মৌসুমী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম ছিল না। অনেক মহল্লায় তাদের দেখাও যায়নি। শাহজাহানপুরের বাসিন্দা মো. বেলাল হোসেন জানান, ব্যবসায় মন্দার কারণে গতবছর ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নেননি। চামড়ার চাহিদা যে কম হবে তা আগেই বোঝা গিয়েছিল।    

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গতবছর ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ঢাকার বাইরে এ দর ছিল ২৮ থেকে ৩২ টাকা। একইসঙ্গে সারাদেশে প্রতি বর্গফুট খাসির কাঁচা চামড়ার দর ছিল ১৩ থেকে ১৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকা।

এ বছর ঢাকাসহ সারাদেশের কোরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করা হয়েছে বৃহস্পতিবার (১৫ জুন)। ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪০-৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩-৩৭ টাকা। খাসির চামড়া সারাদেশে ১৫-১৭ টাকা, বকরির চামড়া ১২-১৪ টাকা।

 

 

 

 
 
/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আরও কমলো সোনার দাম  
আরও কমলো সোনার দাম  
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
স্কুল ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি