X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কষ্টের স্মৃতি নিয়ে ক্যাম্পে কাটলো আরও একটি ঈদ

আবদুর রহমান, টেকনাফ
২১ জুলাই ২০২১, ২১:৫৭আপডেট : ২১ জুলাই ২০২১, ২২:২৮

স্বজন হারানোর বেদনা ও দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আরও একটি ঈদ কেটেছে রোহিঙ্গাদের। বুধবার (২১ জুলাই) সকাল ৭টায় কক্সবাজারের টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শিবিরে ছোট-বড় ১০টি মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। একইভাবে কক্সবাজারের আরও ৩৩ রোহিঙ্গা শিবিরে অনুষ্ঠিত হয় ঈদ জামাত। নামাজ শেষে মোনাজাতে কান্নায় ভেঙে পড়েন রোহিঙ্গা সদস্যরা। মোনাজাতে নিজেদের ওপর হওয়া নির্যাতনের ফরিয়াদ ও স্বদেশে মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের প্রার্থনা জানান তারা। একইসঙ্গে করোনা মহামারি থেকে গোটা বিশ্বকে যেন হেফাজত করেন আল্লাহর কাছে  তারা সে প্রার্থনাই করেছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঈদের দিন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শিবির ঘুরে শিশুরা সকাল থেকেই সেজেগুজে, নতুন জামা-কাপড় পরে ক্যাম্পের রাস্তায় হই-হুল্লোড় আর আনন্দে মেতে উঠেছে। রোহিঙ্গারা অনেকে নতুন জামা, পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি ও চশমা পরে দলবেঁধে শিবিরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু বড়রা স্বজনহারা বিষাদের যন্ত্রণায় কাঁদছেন। কেননা, অতীতে যাদের নিয়ে ঈদ করেছিলেন, এবার তাঁরা অনেকেই শুধু স্মৃতি।

রোহিঙ্গা শিবিরে শিশুদের ঈদ আনন্দ ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট কোরবানি ঈদের মাত্র কয়েক দিন আগে রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরসা রাখাইনের ৩৪টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলা চালায়। প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নিপীড়নমূলক অভিযান শুরু। এর ফলে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে পুরনোসহ উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তবে বহিরাগমন বিভাগ ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সূত্র মতে, এ পর্যন্ত ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৪ জন রোহিঙ্গার নিবন্ধন শেষ হয়েছে। তবে বর্তমানে রোহিঙ্গা নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে।

বুধবার সকাল ৯টার দিকে টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শিবিরে কথা হয় তাহেরা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে চারবারের মতো কোরবানি ঈদ এলো। তবু খুশি বলতে কিছু নেই। অন্তত এটা বলতে পারি জীবনটা নিয়ে বেঁচে আছি। কিন্তু এই বেঁচে থাকাকে কী জীবন বলে? নেই কোনও স্বজন, পরিবারে মাঝে নেই কোনও খুশি। এই দিনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস রূপগুলো বেশি মনে পরে। সেদিন চোখের সামনেই সেনারা গুলি করে হত্যা করেছে তার স্বামী ও দুই ভাইকে। ঘরে আগুনে লাগিয়ে হত্যা করা হয় তার পাশের বাড়ির এক পরিবারকে। ঈদের দিনটা কেমন কাটছে জানতে চাইলে সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা বলেই কাঁদেন তিনি। যে দেশে জন্ম, বেড়ে ওঠা, সেই দেশেই ভয়ংকর নির্যাতনের শিকার হয় তাহেরার পরিবারকে।

তাহেরা জানান, স্বজন হারানোর বেদনা ঈদের দিনে আরও বেশি ব্যথা হয়ে বাজছিল তার বুকে। মিয়ানমারে স্বামী-সন্তান সেজেগুজে ঈদের জামাতে গিয়েছিলেন, আজ নেই। সময়ের ব্যবধান চার বছরেরও কম। কত বিভীষিকাময় পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাদের এটুকু সময়ে।

মংডুর জামবুনিয়া রাঙ্গাবালি গ্রামের বিধবা ছকিনা খাতুন দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন বারবার। জানান, রাখাইন প্রদেশে বসবাস হলেও নাগরিকত্ব মেলেনি। তারপরও সন্তান ও নাতি-নাতনি নিয়ে সুখে দুঃখে কেটে যাচ্ছিল জীবন। কিন্তু স্বজন হারিয়ে এখন কোনও আনন্দই আর তাকে স্পর্শ করে না। প্রতিটি দিনই বিচ্ছেদ আর বেদনার।

রাখাইন রাজ্য থেকে আজ যাদের ঠাঁই হয়েছে রোহিঙ্গা শিবিরে তাদের অনেকের অবস্থা একসময় ভালো ছিল। এখন এই শিবিরের দুঃসহ জীবনের মধ্যে অতীতের সুখের স্মৃতি তাদের পীড়া দেয়। এদের একজন আলী জোহার। 

তিনি বলেন, ২৫ বছর ধরে রাখাইন রাজ্যে বিশাল আয়োজনে ঈদ পালন করেছি। ঈদের সময় গ্রামের লোকজন ঘরে এসে সেমাই ও চালের রুটির সঙ্গে রান্না করা গরুর মাংস খেয়েছে। আর এখন সেমাইয়ের জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। এটা বড়ই লজ্জার। 

২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে নিজের সহায় সম্বল রেখে এপারে পালিয়ে আসেন তিনি।

রোহিঙ্গা শিবিরে শিশুদের ঈদ আনন্দ আলী জোহর আরও বলেন, প্রিয় জন্মভূমিতে সত্যিই কী ফেরা হবে, এমন সংশয় রোহিঙ্গাদের ভেতরে। এই দেশে বোঝা হয়ে দিনের পর দিন থাকতে হচ্ছে। জানি না আবার কখন ফিরে পাবো হারানো ঈদের সুখের দিনগুলো?

টেকনাফের লেদা শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার অনেক কিছু করেছে। তারপরও আমরা অসহায় হয়ে আর কত দিন এই দেশের বোঝা হয়ে থাকবো। এবারে আমাদের শিবিরে কোরবানি ঈদের তেমন আন্দন নেই। কেননা, শিবিরে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও কোরবানির পশু দেওয়া হয়নি। এতে অনেক ঘরেই মাংস রান্না হয়নি। 

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নতুন করে নির্যাতন শুরু হয়। তবু মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের স্বদেশ, তাই আমরা ফিরতে চাই। তবে আমাদের শর্ত মানলেই সবাই ফিরবো।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ঈদ জামাত সম্পন্ন হয়েছে। ঈদে উপলক্ষে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

 

/টিটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
যাত্রী কল্যাণ সমিতিঈদুল আজহায় ২৭৭ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৯৯, আহত ৫৪৪
রাজধানীর ফাঁকা রাস্তায় যাত্রীদের স্বস্তি
চাপ নেই কর্মস্থলে ফেরার, এখনও গ্রামে ফিরছে মানুষ
সর্বশেষ খবর
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা