X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

দাম নেই, বগুড়ায় চামড়া গেছে ভাগাড়ে

বগুড়া প্রতিনিধি
২৩ জুলাই ২০২১, ১৫:১৩আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২১, ১৫:১৩

বগুড়ায় গরিবের হক কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নেই। এ অবস্থায় ছোট গরু, ছাগল ও ভেড়ার চামড়া রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া হয়েছে। চাহিদামতো সংগ্রহ করতে না পেরে ও লোকসানের ভয়ে অনেক সাধারণ ব্যবসায়ী ঈদের পরদিন শহরের বাদুড়তলা, চকসুত্রাপুর, চামড়াগুদাম লেন এলাকার রাস্তার পাশে গরু, ছাগল ও গরুর মাথার চামড়া ফেলে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা স্তুপ থেকে চামড়াগুলো সংগ্রহ করে ট্রাকে তুলে শহরের বাইরে গোকুলের ভাগাড়ে ফেলে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ফেলে দেওয়া এসব চামড়া পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দাবি, অন্তত ১৪ হাজার চামড়া তারা অপসারণ করেছেন। এরমধ্যে ছাগলের চামড়া ও গরুর মাথার চামড়াই বেশি ছিল।

শহরের বাদুড়তলার চামড়া ব্যবসায়ী মোকাররম আলী, কামরুল হোসেন, সারোয়ার হোসেন জানান, রাস্তার পাশে স্তুপ করে ফেলে দেওয়া চামড়ার মধ্যে কোরবানির ছাগল ও গরুর নিম্নমানের চামড়া রয়েছে। এ মৌসুমে ব্যবসায়ীরা তাদের চাহিদামতো চামড়া সংগ্রহ করতে পারেননি। ছাগলের চামড়ার চাহিদা এবারও কম। যেসব মৌসুমি ব্যবসায়ী ছাগলের চামড়া কিনেছেন, তাদের বেশিরভাগই লোকসান গুণছেন। ছাগলের চামড়া ১০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আরও কম দামে কিনেছেন। দাম না থাকায় অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে চামড়া ফেলে দিয়ে গেছেন। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা চামড়াগুলো পৌরসভার ট্রাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 

সড়কের পাশে ফেলে দেওয়া পচা চামড়া সরিয়ে নিচ্ছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ব্যবসায়ীরা আরও জানান, গত বছরে চেয়ে এবার আমদানি অনেক কম। শহরে কোরবানি বেশি হলেও গ্রামে কম হয়েছে। তারপরও চামড়ার দাম বাড়ছে না।

বুধবার (২১ জুলাই) সকাল থেকে শহরের থানা মোড় থেকে চকসুত্রাপুর পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনার জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকান খুলে বসেন। তবে বিগত বছরের মতো আমদানি কম হয়েছে। কোরবানির গরুর চামড়া ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়। ছাগলের চামড়া ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা দাম উঠেছে। ভেড়া ও ছোট খাসির চামড়া ৫ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। 

আবার শহরের একটু বাইরে চাঁদমুহা, বারপুর, ঘোড়াধাপসহ বিভিন্ন এলাকায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গরুর চামড়া ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫৫০ টাকায় কিনেছেন। ছাগলের চামড়া ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা ও ভেড়ার চামড়া পাঁচ টাকায় কেনেন।

স্থানীয় এক মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের শিক্ষক বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) দুপুরে শহরের চকসুত্রাপুর এলাকায় কয়েকটি ছাগলের চামড়া ফেলে দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই শিক্ষক জানান, সাতটি গরুর চামড়া ও ১১টি খাসির চামড়া দানে পেয়েছেন। গরুর চামড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। কিন্তু কেউ খাসির চামড়া না নেওয়ায় ফেলে দিতে বাধ্য হন।

বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়ার ব্যাংকার মামুনুর রশিদ, রাজন ও সায়েদ আলী জানান, তারা পাঁচ ভাগে ৮৭ হাজার টাকায় একটি গরু কেনেন। কয়েকদিন খাওয়ানোর পর প্রায় ৯০ হাজার টাকা দাম পড়ে যায়। কোরবানির পর সে গরুর চামড়া মাত্র ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। 

শহরের কাটনারপাড়ার ব্যবসায়ী আবদুর রহমান জানান, তিনি ৭১ হাজার টাকায় কেনা গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ৪০০ টাকায়। তার ১৮ হাজার টাকা দামের খাসির চামড়ার দাম নেই। তাই চামড়াটি একটি মাদ্রাসায় দান করেছেন। 

শহরের সুত্রাপুর এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ৬৭ হাজার টাকা দামের গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ৪০০ টাকায়। দুটি ভেড়ার চামড়ার দাম ১০ টাকা দিতে চাওয়ায় বিক্রি করেননি। পরে চামড়া দুটি ফেলে দিয়েছেন। 

রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া হয়েছে চামড়া কয়েকজন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী জানান, গত ৮-১০ বছর ধরে তারা চামড়া কেনাবেচা করছেন। তবে গত ৩-৪ বছর ধরে তাদের ব্যবসায় মন্দাভাব যাচ্ছে। চামড়ার দাম না থাকায় পুঁজি হারিয়ে তাদের অনেকে ব্যবসা থেকে সরে গেছেন। সে কারণে তারা এবার আড়ত থেকে জেনে নিয়ে কম দামে চামড়া কিনেছেন।

বৃহস্পতিবার বিকালে বগুড়া সদরের গোকুল এলাকায় ময়লার ভাগাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা ট্রাকে আনা পঁচন ধরা চামড়া ফেলছেন। তারা জানান, এসব চামড়া শহরের বাদুড়তলা, চকসুত্রপুর, চামড়াগুদাম এলাকায় পড়েছিল। তাদের হিসাবে সকাল থেকে প্রায় ১০ হাজার গরু-ছাগলের চামড়া ভাগাড়ে ফেলেছেন।

বগুড়ার চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিন সরকার জানান, পচে যাওয়ার কারণে নিম্নমানের গরুর চামড়া ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ছাগলের চামড়ার চাহিদা কম থাকলেও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অনেক কেনেন। দাম না পেয়ে তারাও ছাগলের চামড়াগুলো ফেলে দিয়েছেন। আমরা দ্রুত চামড়াগুলো অপসারণ করছি।

ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের ট্যানারি মালিকদের কাছে আমাদের ২৫ কোটির বেশি টাকা পাওনা রয়েছে। অথচ ট্যানারি মালিকরা পাওনা টাকা পরিশোধ করছেন না। ট্যানারি মালিকরা টাকা না দেওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী পথে বসেছেন। একটি চামড়া কেনার পর তা প্রসেসিং করতে অনেক খরচ হয়। এ কারণে আড়তদারদের চামড়ার বিষয়ে আগ্রহ কম ছিল বলে জানান তিনি। 

 

/টিটি/
সম্পর্কিত
পোস্তায় চামড়া বেশি এলেও মেলেনি সরকার নির্ধারিত দাম
তিন লাখ ১৯ হাজার চামড়া বিক্রির জন্য প্রস্তুত চট্টগ্রামের আড়তদাররা
দেশ থেকে চামড়া পাচারের সুযোগ নেই: বাণিজ্য সচিব
সর্বশেষ খবর
দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব
দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জেনে নিন
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জেনে নিন
হাতিরঝিলে ভাসমান অবস্থায় যুবকের মরদেহ
হাতিরঝিলে ভাসমান অবস্থায় যুবকের মরদেহ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি