X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

ছাড়পত্র ছাড়াই আবাসিক এলাকায় চলছে চুন কারখানা

আমির হুসাইন স্মিথ, নারায়ণগঞ্জ
২৫ জুলাই ২০২১, ১০:০০আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২১, ১০:০০

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আবাসিক এলাকায় চলছে চুন তৈরির কারখানা। প্রয়োজনীয় লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে এসব কারখানায় চুন উৎপাদন হচ্ছে। অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নিয়ে এসব কারখানা পরিচালিত হচ্ছে। পাথর পোড়ার উৎকট গন্ধ এবং আগুনের তীব্রতাপে কারখানার আশপাশের বাড়ি-ঘরের বাসিন্দাদের বেড়েছে ভোগান্তি। দুর্বিষহ জীবন কাটছে তাদের। তবে কোনও এক অদৃশ্য কারণে এসব অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। 

সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকায় রয়েছে পাশাপাশি তিনটি চুন কারখানা। সুরমা লাইমস, মদিনা লাইমস ও চাঁন লাইমস। বায়ু দূষণের কারণে ২০১৯ সাল থেকে এসব কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান বন্ধ রেখেছে জেলা পরিবেশ অধিদফতর। কিন্তু কোনও এক অদৃশ্য খুঁটির জোরে বছরের পর বছর ধরে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই কারখানায় চুন উৎপাদন চলছে। 

প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব অনুমোদনহীন কারখানা পরিচালিত হলেও সবাই দেখেও যেন না দেখার ভান করে আছে। 

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মাঝে-মধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা লোক দেখানো কিছু অভিযান পরিচালনা করে। লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার এসব কারখানায় কার্যক্রম শুরু হয়। 

স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, আবাসিক এলাকায় কারখানা স্থাপন করে পাথর পুড়িয়ে চুন তৈরি কারণে কালো ধোঁয়া এবং ঝাঁঝালো উৎকট গন্ধে ঘরের দরজা-জানালা দিন রাত ২৪ ঘণ্টাই বন্ধ রাখতে হয়। গরমের সময় চুন পোড়ার তাপে স্থানীয়দের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। দিনে তিন থেকে চারবার ঘর মুছতে হয়। ঘরের আসবাবপত্র কালোধোঁয়ার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভবনের দেয়াল নষ্ট হয়েছে, ধোঁয়ায় ঘর-বাড়ির টিনও নষ্ট হচ্ছে। 

চুন করাখানার পাশের বাড়িতে বসবাসকারি নারী আফসানা বেগম বলেন, ‘কারখানার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে অভিযোগ হলেও প্রতিকার মিলছে না। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে তাদের এই মরণ ব্যবসা।’

একই বাড়ির তৃতীয় তলার বাসিন্দা আফরোজা বেগম বলেন, ‘বাড়িতে ভাড়া থাকতে এসে খুব বিপদে পড়েছি। দিন রাত ২৪ ঘণ্টা দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হয়। ঘরে আলো-বাতাস প্রবেশের চেয় বেশি আসে ধোঁয়া ও পাথর পোড়ানোর ঝাঁঝালো কটূ গন্ধ। এতে ঘরের আসবাবপত্র, মেঝে, কাপড়চোপড় নষ্ট হয়ে যায়। প্রতিদিন কমপক্ষে তিন থেকে চারবার ঘর মুছতে হয়। এভাবে আর থাকা যাচ্ছে না।’ 

হীরাঝিল এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, আবাসিক এলাকায় যে সব চুন কারখানা গড়ে উঠেছে এসব কারখানার মালিকরা সবাই প্রভাবশালী। পরিবেশ অধিদফতর লাইসেন্স নবায়ন করছে না। কিন্তু তারপরেও কীভাবে এসব চুন কারখানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, প্রশ্ন তার।  

হীরাঝিল এলাকায় সুরমা লাইসম ২০১৭ সালে পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়েছিল। তারপর আর পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন করছে না অধিদফতর। এরপর ছাড়পত্র ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে চলছে চুন কারখানাটি। পরিবেশ ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ছাড়া কীভাবে চুন কারখানা চলছে এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি সুরমা লাইমসের কর্মকর্তা রেদোয়ান হোসেন।

সুরমা লাইমসের কর্মকর্তা রেদোয়ান হোসেন বলেন, হীরাঝিলে চুন কারখানা গড়ে উঠেছে ১৯৮৫ সালে। তখন এই এলাকায় কোনও বাড়িঘর ছিল না। ২০০১ সালের পর থেকে এই এলাকায় বাড়িঘর গড়ে উঠেছে। এখন চুন কারখানার কালো ধোঁয়ায় মানুষের কিছু ক্ষতি হতে পারে। কিন্ত কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করেছি, তাই হঠাৎ করে কারাখানা সরিয়েও নিতে পারি না। সরকার যদি আমাদের জায়গা দেয়, তাহলে বিষয়টি সহজ হয়। 

একই অবস্থা এই এলাকার মদিনা লাইমসের। এই কারখানারও পরিবেশ ছাড়পত্র ও চুন পোড়ানোর লাইসন্সে নেই।  মদিনা লাইমসের কর্মকর্তা মাইনুদ্দিন আহমেদ বলেন, কী কারণে পরিবেশ ছাড়পত্র দিচ্ছে না, বুঝতে পারছি না। প্রতিষ্ঠানটির ফায়ার লাইসেন্স আছে। তবে চুন পোড়ানোর লাইসেন্স আছে কিনা জনতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

সার্বিক বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আবাসিক এলাকায় চুনকারখানার কারণে পরিবেশ ও মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থায় হীরাঝিলসহ আশেপাশের এলাকায় গড়ে ওঠা চারটি চুন কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্র ২০১৯ সাল থেকে দেওয়া বন্ধ আছে। ছাড়পত্র ছাড়াই কারখানার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অপরাধে অচিরেই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ চুন কারখানার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। 

প্রসঙ্গত, সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল, মুক্তিনগর, সিদ্ধিরগঞ্জপুলসহ বিভিন্ন জায়গায় পাথর পুড়িয়ে চুন তৈরির কারখানা রয়েছে ১০ থেকে ১২টি। এসব কারখানার বেশিরভাগই রয়েছে আবাসিক এলাকায়। এগুলোর নেই পারিবেশ ছাড়পত্রসহ অন্যান্য অনুমোদন। তবু বছরের পর বছর অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নিয়ে চলছে তাদের কার্যক্রম। এতে পরিবেশ, মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির পাশাপাশি সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

 

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী