উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় পুনরায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। লঘুচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে পটুয়াখালী জেলার ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ জেলায় বাতাসের চাপ আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। সাগর ও নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
টানা তিন দিনের বৃষ্টি ও ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে কুয়াকাটার আলীপুর, মহিপুর, নিজামপুর, কলাপাড়ার ধানখালী, লালুয়া; রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ, চরআন্ডা, বাহেরচর, চালিতাবুনিয়া; দশমিনা উপজেলার ঢনঢনিয়া গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে অধিকাংশ ঘরবাড়ি, মাছের ঘের ও পুকুর।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) রাত থেকেই ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। কয়েক স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। গাছ উপড়ে পড়েছে ঘরের ওপর। এতে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিলো। দুমকি উপজেলার পাগলার মোড়, মৌকরণ, বসাকবাজার, শাখারিয়া, পাখিমারা এলাকার রাস্তায় গাছপালা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পায়রা বন্দরকে স্থানীয় তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। মাছ ধরার ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে চলাচল করতে বলা হয়েছে। এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে উপকূলীয় এলাকায় থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এসব এলাকায় ৩৩ ঘণ্টায় ২৮৪.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ বৃষ্টিপাত ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে জেলা আবহাওয়া অফিস।
রাঙ্গাবালী উপজেলার নয়ারচর গ্রামের কৃষক আবদুর রহিম বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে এসব এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এছাড়া চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের বাঁধ অনেক আগে থেকেই ভেঙে আছে। এ বাঁধগুলো সংস্কার না করায় জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বেড়িবাঁধ সংস্কার করেনি। চরমোন্তাজ এলাকার মানুষেরা ৬০ হাজার টাকা চাঁদা তুলে স্থানীয় কৃষকরা মিলে চাষাবাদের জন্য দুই কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার করে। গত রবি ও সোমবার (২৫ ও ২৬ জুলাই) দুপুরে সংস্কার করা বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে লোকালয়। এতে আমাদের বাড়িঘর সব ডুবে গেছে।
লালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত হেসেন বলেন, আমার ইউনিয়নে সিডরের পর থেকেই বেড়িবাঁধ নেই। আজ আমার ইউনিয়নের কয়েকটা গ্রাম ছাড়া সব তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে উপজেলার চালিতাবুনিয়া, চরলতা, গাইয়াপাড়া, কোড়ালিয়া, চরমোন্তাজ, চরবেষ্টিনসহ কয়েকটি এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অরক্ষিত ওই ছয় গ্রামের মধ্যে পাঁচ গ্রামের নিম্নাঞ্চলের অভ্যন্তরে জোয়ারের পানি প্রবেশ ঠেকাতে আপদকালীন পদক্ষেপ নিয়েছে পাউবো। যেখানে বাঁধের ক্ষতি হয়েছে সেখানে সংস্কার এবং যেখানে বিলীন হয়েছে সেখানে পুনর্নির্মাণের কাজ করা হয়। তবে উপজেলার ১৪ কিলোমিটার ভাঙা বাঁধের তিন কিলোমিটার জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা হয়েছে। এখনও ১১ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার বাকি আছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সাহেলী বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে যেসব এলাকার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই জায়গায় কাজ চলমান আছে। কিছু জায়গার সংস্কার করা হয়েছে। আর কিছু জায়গায় এখনও সম্ভব হয়নি। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া দূর হলে আমারা দ্রুত সংস্কার করতে পারবো। এরপরও নতুন করে কোনও বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করলে আমরা দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা করবো।