X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘দুই ম্যাচের একটি জিতিয়েছি, তবে আলোচনায় আসার মতো ইনিংস খেলিনি’

রবিউল ইসলাম
২৯ জুলাই ২০২১, ১৫:৩২আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২১, ১৫:৪৪

টিভি-টুর্নামেন্টের কয়েকটি ম্যাচ খেলেই নজর কাড়েন শামীম হোসেন। এরপর চাঁদপুরের ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমি হয়ে ২০১৫ সালে শামীমের ঠিকানা হয় বিকেএসপি। ২০১৯ সালের যুব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য শামীম বয়সভিত্তিকের চৌকাঠ পেরিয়ে সদ্যই পা রেখেছেন আন্তর্জাতিক আঙিনায়। বৃহস্পতিবার সকালে দেশে ফিরে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে ক্লেমন ক্রিকেট থেকে জাতীয় দলের জার্নির অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করলেন। যেখানে এতোটুকু নেই অহংবোধ, বরং তিনি অধিকমাত্রায় পরিণত। তাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাত্র দুই ম্যাচ খেলেই প্রশংসার বৃষ্টিতে ভিজে কিছুটা যেন বিব্রত শামীম। তবে উপভোগের কমতি রাখছেন না মোটেও!

বাংলা ট্রিবিউন: কেমন আছেন? চারপাশে কতটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন?

শামীম হোসেন: ভালো আছি। দুটি ম্যাচ জেতাতে পারলে আরও ভালো লাগতো। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ শেষে আরও ভালো থাকতে চাই। তাছাড়া আমি এখন মাত্র দুটি ম্যাচ খেলেছি, সেখানে অমন বড় ইনিংস খেলতে পারিনি। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে সেই চেষ্টাই থাকবে। তারপরও আমাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, ভালো লাগছে। তবে আমি চাই আরও ভালো খেলে আলোচনায় আসতে।

বাংলা ট্রিবিউন: ভিসা জটিলতায় জিম্বাবুয়েতে যথাসময়ে যেতে পারেননি। সেই সময়টা কেমন ছিল?

শামীম: উৎকণ্ঠায় ছিলাম না। তবে কিছুটা খারাপ লাগছিল, ভাবছিলাম সুযোগটা কি হারাবো? তবে মাথায় এটাও এসেছিল টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে হয়তো ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা কেটে যাবে। পরে তো রুবেল ভাই (পেসার রুবেল হোসেন) আর আমি একসঙ্গেই গেলাম।

বাংলা ট্রিবিউন: ওয়ানডে সিরিজ থেকেই জাতীয় দলের সঙ্গী হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উত্তাপের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কতটা সাহায্য করেছে?

শামীম: অবশ্যই ওয়ানডে দলের সঙ্গে থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছিলাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার আগে আমার জন্য এটা খুব ভালো হয়েছে। যা আমাকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। পাশাপাশি প্রথম ম্যাচ না খেলে ফিল্ডিং করেও আমি দারুণ কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। যা আমাদের পরের দুটি ম্যাচে সাহায্য করেছে।

বাংলা ট্রিবিউন: বদলি ফিল্ডার হিসেবে দুর্দান্ত একটি ক্যাচ নিয়েছিলেন, কেমন লেগেছিল?

শামীম: এমন ক্যাচ নিতে পারলে সবসময় দারুণ লাগে। উপভোগ করি। আমি এমন কিছুই করতে চাই। আমার আদর্শ যেহেতু জন্টি রোডস। তার মতো করেই ফিল্ডিং করে দলের জয় নিশ্চিত করতে চাই।

সাকিবের কাছ থেকে শামীম পেয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্যাপ বাংলা ট্রিবিউন: সাকিব আল হাসানের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক ক্যাপ পাওয়া, কতটা রোমাঞ্চিত ছিলেন?

শামীম: সাকিব ভাই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে খেলা আমার জন্য গর্বের। তার কাছ থেকে ক্যাপ পাওয়াটাও আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আশা করি, এই ক্যাপের মর্যাদা রাখতে পারবো।

বাংলা ট্রিবিউন: যাদের খেলা দেখে বড় হয়ে ওঠা, তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ট্রফি লড়াই কতটা উপভোগ করেছেন?

শামীম: উনাদের খেলা দেখে বড় হয়ে ওঠা। তাদের ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। এখন তাদের সঙ্গে মাঠে লড়াই করাটা আমার জন্য দারুণ ব্যাপার। মাঝে মাঝে মনে হয় স্বপ্নের মধ্যে আছি। যে স্বপ্ন নিয়ে ক্রিকেট শুরু করেছিলাম, সেই পথে মাত্র হাঁটা শুরু করলাম। আশা করি, অনেকদূর পর্যন্ত যেতে পারবো। এই মুহূর্তে বলতে পারি, তাদের সঙ্গে একই মঞ্চে লড়তে পেরে খুব গর্বিত অনুভব করছি।

বাংলা ট্রিবিউন: প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগে নিশ্চয় নার্ভাস ছিলেন?

শামীম: মোটেও না। বিন্দুমাত্র নার্ভাস ছিলাম না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হলেও এই ম্যাচ ঘিরে নিজের মধ্যে কোনও চাপ আসতে দেইনি। তবে প্রথম ম্যাচটি জিততে না পেরে হতাশ ছিলাম। ওই সময় আউটটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছি। প্রথম ম্যাচে পারেনি বলে জেদ ছিল। ড্রেসিংরুমে বসে অপেক্ষা করছিলাম কখন ব্যাটিংয়ে যাবো, ব্যাটিংয়ে গিয়ে নটআউট থেকে দলকে জেতাবো। আমি আসলে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম।

টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক শামীমের বাংলা ট্রিবিউন: সেই আত্মবিশ্বাস কি নিজে নিজে পেয়েছিলেন, নাকি সিনিয়র ক্রিকেটার কিংবা কোচিং স্টাফদের কথায় পেয়েছেন?

শামীম: আত্মবিশ্বাস নিজেরই ছিল। নিজের ভেতর থেকেই ছিল। বিশ্বাস ছিল আমি পারি, আমি পারবো।

বাংলা ট্রিবিউন: টিভি টুর্নামেন্ট থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চ, ভাবতে কেমন লাগে?

শামীম: আসলে আমার মধ্যে সবসময়ই আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি আমার মতো করেই চেষ্টা করে গেছি। এই সময়টাতে আমার পরিবার, আমার চাচা, আমার কোচরা নানা সময়ে আমাকে পথটা দেখিয়ে দিয়েছেন। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সবে তো শুরু, আমি অনেক দূর যেতে চাই। হারিয়ে যেতে চাই না।

বাংলা ট্রিবিউন: টিভি টুর্নামেন্ট দিয়েই আপনার শুরু। আন্তর্জাতিক মঞ্চে পারফর্ম করার পর বিশেষ কোনও স্মৃতি কি মনে পড়ছে?

শামীম: তখন তো আমি অনেক ছোট। ৭-৮ বছর বয়সে এলাকার কিছু ভাই আমাকে ওই টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ করে দেয়। এক ম্যাচে দুটি ছক্কা মেরেছিলাম। আরেক ম্যাচে ৪ বলে টানা ৪ ছক্কা মেরে দলকে জিতিয়েছিলাম। ওখানে খেলে আমি এক বড় ভাইয়ের নজরে পড়েছিলাম। উনিই আমাকে চাঁদপুরের ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন। ওখানকার কোচ শামীম ফারুকী স্যারের হাত ধরে আমার ক্রিকেট দীক্ষা শুরু। এরপর ২০১৫ সালে আমার কাকা আমাকে বিকেএসপিতে ভর্তি করিয়ে দেন।

বাংলা ট্রিবিউন: একটা সময় খেলার কারণে বাবা-মায়ের বকা খেয়েছেন, এখন তাদের অনুভূতি কী?

শামীম: খেলার কারণে আমার বাবা-মা আমাকে কখনোই মারেনি। তবে পড়াশোনার চাপ দিতো। বরং তাদের অনুপ্রেরণাই বেশি ছিল। এখন তো তারা খুব খুশি। মানুষের আলোচনা দেখে, টিভিতে আমার খেলা দেখে তারা অনেক খুশি। সবচেয়ে বেশি খুশি আমার কাকা আনোয়ার হোসেন খোকন।

বাংলা ট্রিবিউন: ক্রিকেটার হওয়ার পেছনে আপনার চাচার অবদান কতটা? তার সঙ্গে কথা হয়েছে?

শামীম: ক্রিকেটার হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার কাকার। উনি আমাকে বিকেএসপিতে ভর্তি করিয়েছেন। সেটা না করলে আজকে হয়তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার খেলা হতো না। আজকে তিনি বিমানবন্দরে এসেছিলাম। কিন্তু জৈব সুরক্ষা বলয়ের কারণে কথা বলতে পারিনি। উনি বিমানবন্দর থেকে হোটেলেও এসেছিলেন। সেখানেও সুযোগ হয়নি কথা বলার। কাকার সঙ্গে কথা বলতে পারিনি বলে খারাপ লাগছিল।

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন জেমকন খুলনার জার্সিতে বাংলা ট্রিবিউন: ‘ইলিশের শহর’ চাঁদপুর থেকে ‘শামীমের শহর’ চাঁদপুর হতে কতদূর?

শামীম: ওটা আমাদের ঐতিহ্য। সবসময় থাকবে। আর আমি যদি ভালো খেলতে পারি অবশ্যই একদিন নড়াইলের মাশরাফি, চট্টগ্রামের তামিম, মাগুড়ার সাকিব ভাইয়ের মতো চাঁদপুরের শামীম হয়ে উঠবে। অবশ্যই চাই নিজের জন্মস্থানকে বিশ্বে পরিচিত করে তুলতে। আমি হারিয়ে যেতে চাই না। আমি চাই দীর্ঘ সময় জাতীয় দলকে সার্ভিস দিতে। স্বপ্ন দেখি বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হবো, জন্টি রোডাসের মতো হবো। ওই পর্যায়ে যেতে হলে আমাকে যতো পরিশ্রমই করতে হোক, আমি করতে প্রস্তুত।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনাকে নিয়ে মানুষের এতো আলোচনা, এসব কেমন উপভোগ করছেন?

শামীম: উপভোগ করছি। তবে কিছুটা লজ্জাও লাগছে। আমি আগেও বলেছি, আমার স্বপ্নটা অনেক বড়। আমি হুট করে হারিয়ে যেতে চাই না। আমি অনেক দূর যেতে চাই। দুই ম্যাচের একটি হয়তো জিতিয়েছি, তবে আলোচনায় আসার মতো ইনিংস খেলিনি। তাই এতো আলোচনায় কিছুটা লজ্জা লাগছে। এমন না যে উপভোগ করছি না, উপভোগও করছি। তবে সত্যি কথা বলতে আমার তো কেবল শুরু।

/কেআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন