X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০
মগবাজার বিস্ফোরণ

লিকেজ সারিয়ে তড়িঘড়ি রাইজার খুলে নেয় তিতাস

নুরুজ্জামান লাবু
৩০ জুলাই ২০২১, ১৭:৪৩আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২১, ১৭:৪৩

রাজধানীর মগবাজারের রাখীনীড় ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের দুদিন পর নিজেদের অবহেলা আড়াল করতে তড়িঘড়ি করে গ্যাস লিকেজ মেরামত করেছিল তিতাস। তিতাসের কর্মীরা সড়কের নিচে থাকা মূল গ্যাসলাইন থেকে ওই ভবনের সংযোগ স্থায়ীভাবে বন্ধও করে দেয়। যা কিনা মূলত ২০১৪ সালেই বন্ধ করার কথা ছিল। তিতাসের কর্মীদের অবহেলার কারণে ওই লাইন থেকে গ্যাসের লিকেজ হয়েছিল। ঘটনার পর গ্যাস পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে সেখানে ৮-১২ শতাংশ মিথেনের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) পুলিশ সদর দফতরের গঠিত তদন্ত কমিটি এসব তথ্য উল্লেখ করে আইজিপি বেনজীর আহমেদের কাছে ২১ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বিস্ফোরণের ধরন ও কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশও করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের বিস্তারিত জানতে চাইলে সাত সদস্যের এই কমিটির কেউ আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি হননি। কমিটির সভাপতি পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট- সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা বিস্ফোরণের কারণসহ বিস্তারিত বিবরণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করে জমা দিয়েছি। এখন কর্তৃপক্ষ এই প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

এদিকে একাধিকবার যোগাযোগ করেও এ প্রসঙ্গে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের এক কর্মকর্তা গ্যাস লিকেজ মেরামত ও রাইজার খুলে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

গত ২৭ জুন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মগবাজারের ওয়্যারলেস গেট এলাকার একটি তিনতলা ভবনের নিচতলায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ১২ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। এই ঘটনায় পুলিশের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক অধিদফতর, তিতাস, পেট্রোবাংলা ও বিআইআরসি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পুলিশের তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন সিটিটিসির দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এই বিস্ফোণের ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর ধারা উল্লেখ করে রমনা থানায় পুলিশ বাদি হয়ে যে মামলা দায়ের করেছে, সেই মামলাটিও তদন্ত করছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, তারা এতদিন পুলিশ সদর দফতরের গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এখন প্রতিবেদনের গাইডলাইন অনুযায়ী মামলার তদন্ত করা হবে।

তবে কমিটির প্রতিবেদন ও মামলার তদন্ত আলাদা বিষয়। তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানের দায় বা অবহেলা উল্লেখ করা যাবে। আবার মামলার তদন্তে অবহেলার কারণে বিস্ফোরণ হয়ে থাকলে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে হবে।

ঘটনাস্থলে তিতাসের যে কর্মী বা কর্মকর্তা এই এলাকার দায়িত্বে ছিলেন, সংযোগটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার দায়িত্ব ছিল যার ওপর তাকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। তাকে শনাক্ত করতে পারলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চালানো হবে বলছিলেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।

ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের ঘটনায় মোট ছয়টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে সর্বপ্রথম তিতাস, এরপর ফায়ার সার্ভিস ও সর্বশেষ পুলিশের কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বাকি তিনটি কমিটি এখনো তদন্ত শেষ করতে পারেনি।

তিতাস তাদের প্রতিবেদনে নিজেদের দায় এড়িয়ে এলপিজি সিলিন্ডার থেকে নির্গত গ্যাসের কারণে শর্মা হাউজের কিচেন থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে উল্লেখ করলেও ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ বলছে, তিতাসের লিকেজ থেকে গ্যাস জমাট বেঁধে বিস্ফোরণ হয়েছে।

পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেঙ্গল মিটের একটি চিলার রুম হলো বিস্ফোরণের কেন্দ্রস্থল। তিতাসের গ্যাস লিকেজ হয়ে জেনারেটর রুমের ভেতর দিয়ে চিলার রুমে জমতে থাকে। পরে সেখানকার বৈদ্যুতিক কোনও স্পার্ক থেকে বিস্ফোরণ ঘটে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য বলেন, মূল সড়ক থেকে ওই ভবনের তিতাসের যে সংযোগ লাইন ছিল, তা ২০১৪ সালে বিচ্ছিন্ন করা হয়। সাধারণত গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে তা স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাইজারসহ সংযোগটি খুলে নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিতাস তা না করে শুধু রাইজার থেকে বাসার ভেতরের লাইন বিচ্ছিন্ন করেছে। একারণে লাইন লিকেজ হয়েছিল। বিস্ফোরণের দুদিন পর তিতাস কর্তৃপক্ষ রাইজার ও সংযোগ লাইন খুলে নিয়ে যায়।

প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে

ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে। এর মধ্যে অবৈধ সংযোগ স্থায়ীভাবে বন্ধ ও জড়িতদের শাস্তি, ঝুঁকিপূর্ণ লাইনে নিয়মিত তদারকি ও মেরামত, যে কোনও লিকেজ দ্রুত শনাক্ত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া ও গ্যাস ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বাড়াতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া তিতাসকে জরুরি সেবা প্রদানকারী ৯৯৯-এর আওতায় আনা উচিত বলেও মন্তব্য করেছে তদন্ত কমিটি। কারণ কোথাও গ্যাস নির্গত হতে দেখলে যাতে যে কেউ দ্রুত জরুরি নম্বরে কল করতে পারে।

সুপারিশে গ্যাস বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনা তদন্তে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোরও সুপারিশ করেছেন কমিটির সদস্যরা।

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রংপুরে খেজুর বিক্রি নিয়ে চলছে তেলেসমাতি কারবার
মান নিয়ে প্রশ্ন, নেই প্রতিকাররংপুরে খেজুর বিক্রি নিয়ে চলছে তেলেসমাতি কারবার
সংঘর্ষের কারণে তিউনিসিয়া-লিবিয়া সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ
সংঘর্ষের কারণে তিউনিসিয়া-লিবিয়া সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ
মজুতদারি ও কারসাজি বন্ধে বাজার পরিদর্শন চলবে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
মজুতদারি ও কারসাজি বন্ধে বাজার পরিদর্শন চলবে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
আল্লাহর রাসুল (সা.) ইফতারে কী খেতেন?
আল্লাহর রাসুল (সা.) ইফতারে কী খেতেন?
সর্বাধিক পঠিত
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার