X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাতক্ষীরায় ডুবেছে ১৯ হাজার মাছের ঘের, ক্ষতি ৫৩ কোটি

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
৩১ জুলাই ২০২১, ১১:৪১আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২১, ১১:৪১

সাতক্ষীরায় টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে সাত উপজেলার ৭৮টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভার নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। ভেসে গেছে ১৯ হাজারের বেশি মাছের ঘের। এতে মাছ চাষিদের ক্ষতি ৫৩ কোটি টাকা। এদিকে ১৭ হেক্টর বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

নিম্নচাপের প্রভাবে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরায় মোট ২৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে জেলার কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৯ হাজার ৪৫৯টি মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। সরকারিভাবে ভেসে যাওয়া ঘেরের আয়তন নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৬৫ হেক্টর। এতে ক্ষতির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৫৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

এদিকে জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, ভারী বর্ষণে নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৭০০ হেক্টর জমির আমন বীজতলা পানিতে ডুবে আছে। সেই সঙ্গে পানিতে তলিয়ে গেছে সদ্য রোপনকৃত ৮৬০ হেক্টর জমির আমন ধান।

বৃষ্টিতে চারদিকে পানি থৈ থৈ করছে

এখনই ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব নয় জানিয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, পানি স্থায়ী হলে যে ক্ষতি হবে তা সহসায় কাটিয়ে উঠতে পারবে না কৃষকরা। তবে, জেলাব্যাপী সব সেক্টরে যে ক্ষতি হয়েছে তা এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে নিরূপণ করতে পারেননি বলে জানিয়েছে স্ব স্ব দফতর।

এদিকে সাতক্ষীরা পৌরসভার অধিকাংশ নিচু এলাকা এখনও পানিতে ডুবে আছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে সাতক্ষীরাবাসী। 

সাতক্ষীরা পৌরসভার বদ্দীপুর কলোনির বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টিতে আমাদের এলাকা তলিয়ে যায়। আর বৃহস্পতিবারের ব্যাপক বৃষ্টিতে চারদিকে পানি থৈ থৈ করছে। চারদিকে আটকানো। পানি বের হওয়ার সুযোগ নেই। আমার তিন মাছের পুকুর ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে লক্ষাধিক টাকা।’

টানা বৃষ্টির ফলে গদাইবিল, ছাগলার বিল, শ্যাল্যের বিল, বিনেরপোতার বিল, রাজনগরের বিল, কচুয়ার বিল, চেলারবিল, পালিচাঁদ বিল, বুড়ামারা বিল, হাজিখালি বিল, আমোদখালি বিল, বল্লীর বিল ও মাছখোলার বিলসহ কমপক্ষে ২০টি বিল ডুবে গেছে। এসব বিলের মাছের ঘের ভেসে পানিতে একাকার হয়ে গেছে। বেতনা নদী তীরবর্তী এই বিলগুলোর পানি নদী নিষ্কাশন হতে পারছে না। এই পানি পৌরসভার ভেতরে ঢুকছে। গ্রামাঞ্চলের সব পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। বেরিয়ে গেছে শত কোটি টাকার মাছ। সবজি ক্ষেতগুলো পানিতে ভাসছে।

পানির নিচে তলিয়ে গেছে ১৭ হেক্টর বীজতলা

এদিকে, বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে উপকুলীয় উপজেলা শ্যামনগর, কালিগঞ্জ ও আশাশুনিসহ জেলার সাতটি উপজেলা। সেখানে প্রধান রাস্তার উপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এসব এলাকার মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা, বড়দল, শ্রীউলা, আশাশুনি সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পানিতে থৈ থৈ করছে।

শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, কাশিমাড়ি, কৈখালী, রমজাননগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মাছের ঘের ও পুকুর পানিতে ভেসে একাকার হয়ে গেছে। বসতবাড়িতে উঠেছে পানি। পানি নিষ্কাশনের খালগুলো দখল করার কারণে এ দুর্দশার কবলে পড়েছেন এলাকাবাসি। হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্লাবিত এলাকার মানুষ। তালা উপজেলার ইসলামকাটি, মাগুরা, কুমিরা, খেশরা, তেঁতুলিয়া, ধানদিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের।

কালীগঞ্জের রতনপুর, কালিকাপুর, বিষ্ণুপুর, মথুরেশপুরসহ বিস্তীর্ণ এলাকার মাছের ঘের, পুকুর ও সবজি ক্ষেত ডুবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দেবহাটার কোমরপুর, পারুলিয়া, সখীপুর ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেছে পুকুর ও ঘের। কলারোয়ার জয়নগর, ধানদিয়া, যুগিখালি, সোনাবাড়িয়া, শ্রীপতিপুর, ব্রজবকসসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু নিয়ে মানুষ চরম বিপদে পড়েছে।

আশাশুনির শ্রীউলা এলাকার ঘের ব্যবসায়ী তরুণ কান্তি সরকার জানান, ‘বছরে তিন থেকে চারবার আমাদের মাছের ঘের ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিরোধে কোনও ব্যবস্থা নেই। ৫০ বিঘার একটি ঘেরে আম্পানে আমার ক্ষতি হয়েছিল ২০ লাখ টাকা। ইয়াসে ক্ষতি পাঁচ লাখ টাকা। আর এই কয়দিনের টানা বর্ষণে আমার ঘের ভেসে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। ঘের ব্যবসা বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।’

শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি

শ্যামনগরের পদ্মপুকুর এলাকার ঘের ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম জানান, তার ১০০ বিঘার একটি ঘের রয়েছে। গতকাল সেটা ঘের ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা। ব্যাংক সুদ মাপ হয় না। বছরের কয়েকবার এমন ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলে এটাই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম বলেন, ভারী বর্ষণে জেলার নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে এক হাজার ৭০০ হেক্টর জমির রোপা আমন বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। ৮৬০ হেক্টর রোপা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ৫০০ হেক্টর জমির সবজির ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি আর না হলে ক্ষতির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমবে বলে জানান তিনি।

মৎস্য অধিদফতর সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সাতক্ষীরায় মাছের ক্ষতি হয় ১৭৬ কোটি টাকার। ইয়াসের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে মাছের ক্ষতি হয় ১৬ কোটি টাকা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবারের ব্যাপক বর্ষণে ৫৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জ উপজেলার ১৯ হাজার ৪৫৯টি মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘেরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫ হেক্টর। মাছের ক্ষতির পরিমাণ ৫৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

এদিকে সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আ. বাছেদ জানান, অতি বৃষ্টির কারণে জেলার কী পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা সঠিকভাবে নিরূপণ করতে একটু সময় লাগে। এ বিষয়ে সকল উপজেলা কর্মকর্তারা একযোগে কাজ করছে। রবিবারের মধ্যে সঠিকভাব ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হবে।

তিনি আরও জানান, পানিবন্দি মানুষের কথা বিবেচনা করে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তাৎক্ষণিক ২৫৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় এক লাখ করে মোট তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, ঘর-বাড়িসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) মাধ্যমে প্রাপ্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দ্রুত পাওয়া যাবে। তখন কোথায় কেমন বরাদ্দ করতে হবে সেটা নিরূপণ করা হবে।

/এসএইচ/
সম্পর্কিত
নাইজেরিয়ায় বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কারাগার, পালালো শতাধিক বন্দি
আরও বিস্তৃত হবে তাপপ্রবাহ, তবে সিলেটে হতে পারে বৃষ্টি
মোংলায় নামাজ পড়ে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা