X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

রেস্তোরাঁ মালিকদের বাঁচানোর আহ্বান 

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০২ আগস্ট ২০২১, ১৩:৫৫আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২১, ১৪:০৫

দেশের ৮০ ভাগ রেস্তোরাঁ বন্ধ আছে দাবি করে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি জানিয়েছে সারাদেশ থেকে মালিকদের হাহাকারের খবর আসছে। নিজেদের দুরাবস্থার কথা বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বেঁচে থাকার আকুতি জানিয়েছেন সমিতির নেতারা।

সোমবার (২ আগস্ট) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হোসাইন জানান,  মহামারি করোনাভাইরাসের আঘাতে রেস্তোরাঁ সেক্টরটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছরের ৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসজনিত কারণে সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী আমাদের রেস্তোরাঁ ব্যবসা কখনও ৫০ শতাংশ আসনে বসিয়ে, কখনো অনলাইন টেকওয়ের মাধ্যমে আমাদের ব্যবসা সীমিত রেখেছি। আমাদের রেস্তোরাঁ ব্যবসা শুধুমাত্র অনলাইন ডেলিভারি/টেকওয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে চালানো সম্ভব নয়। রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা আজ দিশেহারা ও বর্তমানে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। 

তিনি বলেন, সারাদেশে ৬০ হাজার রেস্তোরাঁয় ৩০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। যারা এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সারাদেশে শতকরা ৮০ ভাগ রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে হাহাকারের টেলিফোন আসছে, আমাদেরকে বাঁচান। আমরা এ ব্যবসায় টিকে থাকতে পারলাম না। রেস্তোরাঁ মালিকদের অসহায়ত্বের এই বর্ণনা আমাদেরকে কাঁদায়। রেস্তোরাঁর মালিকপক্ষ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ যে হৃদয়বিদারক কষ্ট করছে, যা ভাষায় বুঝানো সম্ভব নয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বর্তমানে টেকওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারি করছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হোটেল-রেস্তোরাঁ অনুপাতে মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ। আমরা মনে করি, বর্তমানে শুধু অনলাইন ডেলিভারির সুযোগ দিয়ে রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার ঘোষণাটি দূরভিসন্ধিমূলক ও দেশীয় ব্যবসায়ীদের কোণঠাসা করার পথও বটে। এখানে দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের হাত রয়েছে। এছাড়া ইএফডি মেশিন স্থাপন এবং তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ে হয়রানি চলছে। পচনশীল পণ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে লোন প্রদান করা যাবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোন প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে, তাই কোন ব্যাংকই হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে লোন দিচ্ছে না। জাতীয় রাজস্ব খাতে রেস্তোরা সেক্টরের অনেক অংশীদারিত্ব এবং পর্যটন শিল্পের প্রধান নিয়ামক শক্তি হওয়া সত্ত্বেও শিল্পের মর্যাদা পাচ্ছি না।

এসময় সরকারের কাছে কিছু দাবি তুলে ধরা হয়। তারা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-রেস্তোরাঁ স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী খোলা রাখতে চাই। তাও যদি সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ আসনে বসিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ চালু করতে চাই।

হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসাকে চলমান রাখার জন্য রানিং ক্যাপিটাল হিসেবে এসএমই খাত থেকে এই সেক্টরে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করে, সহজ শর্তে স্বল্প সুদে জামানতবিহীন এবং দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ প্রদান করা।

যেহেতু রেস্তোরাঁ খাতটি একটি সেবা খাত সেহেতু হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক-শ্রমিকদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে করোনার টিকা প্রদান করা জরুরি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সুদৃষ্টি দিবেন এটাই আমাদের দাবি।

হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে কর্মরত শ্রমিকদের প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে শ্রমিকদেরকে মোবাইলের মাধ্যমে নগদ অর্থ অথবা নির্দিষ্ট কার্ড প্রদানের মাধ্যমে মাসিকভাবে খাদ্য সাহায্য প্রদান করা যেতে পারে।

হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতকে শিল্পের মর্যাদা প্রদান করতে হবে। যেহেতু হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতটি পর্যটন শিল্পের প্রধান নিয়ামক শক্তি। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা পরিচালনা করতে যে পরিমাণ নিয়ম-নীতি বাস্তবায়ন প্রয়োজন তার চেয়ে অধিক নিয়ম-নীতি বাস্তবায়ন হয়ে থাকে হোটেল রেস্তোরাঁ খাতে। অপরদিকে হোটেল-রেস্তোরা খাতকে একাধিক মন্ত্রণালয়ের অধীনে না রেখে একটি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে শিল্পের মর্যাদা দিতে হবে ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

চালুকৃত ই-কমার্স টেকওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারির ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমিশন করা ও একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন পূর্বক তাদের নিয়ন্ত্রণ করা। বর্তমানে ডেলিভারি কোম্পানিগুলো স্বেচ্ছাচারীভাবে ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে যা আমাদের ব্যবসায়িক স্বাধীনতার স্বকীয়তা বিনষ্ট করছে। আমরা মনে করি, এতে সার্বভৌমত্ব ভূ-লুণ্ঠিত হচ্ছে বা করছে, যা ইস্ট ইন্ডিয়ার নীলচাষের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। ইতোমধ্যে অনলাইনে পণ্য ডেলিভারির ক্ষেত্রে সরকার একটি নির্দেশনা প্রদান করেছেন যা জরুরি ছিলো। সে অনুযায়ী হোটেল-রেস্তোরাঁর ই-ফুড ডেলিভারির ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দেওয়া জরুরি ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরালোভাবে করতে হবে, যাতে উভয়পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গণিসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

/পিএইচসি/এসও/এমএস/
সম্পর্কিত
ভারতের একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৬
হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার শঙ্কা এজেন্সি মালিকদের
গরমে পানির সংকট রাজধানীতে, যা বলছে ওয়াসা
সর্বশেষ খবর
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মীনা বাজার এখন মিরপুর-১২ নম্বরে
মীনা বাজার এখন মিরপুর-১২ নম্বরে
কুবিতে উপাচার্য-ট্রেজারার-প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, ৩ দফতরে তালা
কুবিতে উপাচার্য-ট্রেজারার-প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, ৩ দফতরে তালা
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা