X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

মডেলের বাড়িতে গোপন সিসিটিভি ক্যামেরা!

নুরুজ্জামান লাবু
০২ আগস্ট ২০২১, ২৩:১৭আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২১, ২৩:৩২

মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌয়ের টার্গেট ছিল ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। বিভিন্ন পার্টিতে গিয়ে পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করতেন তারা। তারপর পার্টির নামে নিজ বাসায় ডেকে আনতো তারা। পার্টি শেষে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি তুলে পরিবারের সদস্যদের কাছে বলে দেওয়ার নামে অর্থ আদায় করতো। মডেল পিয়াসার পুরো বাসায় গোপন সিসিটিভি ক্যামেরা পেয়েছে গোয়েন্দারা। এসব সিসিটিভির ফুটেজ জব্দ করার প্রক্রিয়া চলছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

রবিবার (১ আগস্ট) বারিধারা ও মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের পৃথক দুটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, দেড় হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট, সীসা খাওয়ার উপকরণ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে পিয়াসার নামে গুলশান থানায় ও মৌয়ের নামে মোহাম্মদপুর থানায় পৃথক দুটি মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়। সোমাবার তাদের আদালতে সোপর্দ করে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ন কমিশনার হারুণ অর রশিদ বলেন, ‘এরা সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তাদের টার্গেট হলো কোটিপতি ব্যবসায়ী বা ব্যবসায়ীদের সন্তানেরা। বিভিন্ন ক্লাব বা বারে গিয়ে তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে ব্ল্যাকমেইল করতো তারা। একই সঙ্গে তারা বাসায় নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্যের আসর বসাতো। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সহযোগীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পিয়াসা বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনের ৯ নম্বর সড়কের ৩ নম্বর বাসার যে ফ্ল্যাটে থাকেন, সেটির আয়তন চার হাজার বর্গফুট। এই ফ্ল্যাটের ভাড়া প্রায় আড়াই লাখ টাকা। তিনি আরএম গ্রুপে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে নামকাওয়াস্তে একটি চাকরি করেন। ব্ল্যাকমেইলিং করে আয়কৃত অর্থ দিয়েই তিনি বিলাসবহুল জীবন-যাপন করতেন।

গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, গত শনিবার রাতেও পিয়াসা তার বাসায় মদ-ইয়াবা সেবনের একটি পার্টির আয়োজন করেছিলেন। ওই পার্টিতে দেশের নামকরা একটি গ্রুপ অব কোম্পানিজের মালিকের ছেলে উপস্থিত ছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পিয়াসা জানিয়েছে, তার বাসাতে মাঝে-মধ্যেই এ ধরণের আয়োজন হতো। এসব পার্টিতে উচ্চবিত্ত ও ধণাঢ্য ব্যক্তিরা নিয়মিত অংশ নিতেন। তারাই তাকে নিয়মিত অর্থ দিয়ে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করতে সহায়তা করতো।

গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারের পর পিয়াসা আরেকটি নামকরা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের রেফারেন্স দিয়ে বলেছিলেন, ‘.... ভাইয়া আমাকে যেকোনও মূল্যে ছাড়িয়ে নিবে।’ কিন্তু পিয়াসার জন্য কেউ তদবির করেনি জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, তার মোবাইলে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকার প্রায় সকল ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর সেভ করা রয়েছে। তাদের সঙ্গে পিয়াসা নিয়মিত বিভিন্ন পাটিতে অংশ নিত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালের মে মাসে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার সেলিমের ছেলে সাফাতের বিরুদ্ধে এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় প্রথম আলোচনায় আসেন পিয়াসা। পিয়াসা সেসময় সাফাতের বিবাহিত স্ত্রী ছিলেন। দিলদার সেলিম সেসময় অভিযোগ করেছিলেন, তার পূত্রবধূ পিয়াসাই তার ছেলেকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। এরপর গত এপ্রিলে গুলশানের একটি বাসা থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়া নামে এক কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার হলে আবারও আলোচনায় আসেন পিয়াসা।

গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, পিয়াসার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়। তার বাবা মাহবুব আলম চট্টগ্রাম পোর্টে পরিদর্শক হিসেবে চাকরি করতেন। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না। কিন্তু পিয়াসা ঢাকায় এসে মডেলিং করার নামে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন, যাদের কাজই হলো কোটিপতি ব্যক্তিদের টার্গেট করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করা। পিয়াসার সিন্ডিকেটে কয়েক ডজন নারী রয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে মৌয়ের বাবর রোডের বাসায় অভিযানের সময় তিনি ভাসাবির জামানের স্ত্রী তানজি ষড়যন্ত্র করে তাকে ফাঁসিয়েছে বলে দাবি করেন। মৌয়ের ভাষ্য, তানজির সঙ্গে মোকাম্মেল নামে কোনও এক ব্যক্তির প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে পিয়াসার সঙ্গে তার ঝামেলা হয়েছিল। সেই ঝামেলার বিষয় এবং তানজির প্রেমের বিষয়টি তিনি জানতেন। এজন্য তানজি তাকে বাসায় পুলিশ পাঠাবেন বলে হুমকিও দিয়েছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাসাবির যে জামানের কথা মৌ বলেছিলেন, তিনি ভাসাবি ফ্যাশন হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল জামান মোল্লাহ। তিনি একজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। মৌয়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার কোনও ভাষ্য পাওয়া যায়নি।

তবে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উচ্চবিত্ত ও কোটিপতি ব্যবসায়ীদের মধ্যে পার্টিতে যাতায়াত ও মেলামেশা নিয়ে একে অপরের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি এমন একটি ঘটনায় পিয়াসা ও মৌ ইন্ধন দিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। পিয়াসা ও মৌ ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করেও নিজেরা আর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

 

/এফএএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মানববন্ধন স্থগিত
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মানববন্ধন স্থগিত
জলাবদ্ধতা নিরসনে কাউন্সিলরদের মাঠে থাকার নির্দেশ মেয়র তাপসের
জলাবদ্ধতা নিরসনে কাউন্সিলরদের মাঠে থাকার নির্দেশ মেয়র তাপসের
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
রংপুরে খেজুর বিক্রি নিয়ে চলছে তেলেসমাতি কারবার
মান নিয়ে প্রশ্ন, নেই প্রতিকাররংপুরে খেজুর বিক্রি নিয়ে চলছে তেলেসমাতি কারবার
সর্বাধিক পঠিত
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার