আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য পদ থেকে সম্প্রতি বহিষ্কৃত ‘বিতর্কিত’ নেতা হেলেনা জাহাঙ্গীর ফেসবুকে বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে কটূক্তি করে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন।
তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু এসব কথা বলেন।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাদের সঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীরের সম্পর্ক রয়েছে। আমরা চাই এ সত্যটা বেরিয়ে আসুক। হেলেনা জাহাঙ্গীর ফেসবুকে বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে কটূক্তি করে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন। দেশের এরকম পরিস্থিতিতে এই আসামি চেয়েছিলেন দেশকে অস্থিতিশীল করতে। পরে শুনানি শেষে আদালত রিমান্ডের আদেশ দেন।
পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু গণমাধ্যমকে বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যোগাযোগ রয়েছে। তারা দেশের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এবং হেলেনা জাহাঙ্গীর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মন্ত্রীদের মানহানি করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও মামলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মদ জব্দ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি মাদক সেবন এবং মজুত রাখার কোনও লাইসেন্স দেখাতে পারেননি। তাই গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা হয়েছে। তাই মামলাগুলোতে আসামির রিমান্ড আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনুর রহমানের আদালত এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসীর আদালত আসামি হেলেনা জাহাঙ্গীরের পৃথক চার মামলায় মোট ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
মামলাগুলোর মধ্যে, পল্লবী থানার চাঁদাবাজির মামলায় ৪ দিন, একই থানার টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ৪ দিন, গুলশান থানার মাদক মামলায় ৩ দিন এবং গুলশান থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ৩ দিন। চার মামলায় মোট ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাত ৮টা থেকে টানা ৪ ঘণ্টা রাজধানীর গুলশান ২-এ আলোচিত-সমালোচিত এই ব্যবসায়ীর বাসায় অভিযান পরিচালনা শেষে তাকে আটক করা হয়।
এ সময় তার বাসা থেকে বিদেশি মদ, হরিণের চামড়া, ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জাম, বিদেশি মুদ্রা, ওয়াকিটকি সেট, ড্রোন ক্যামেরা, ক্যাঙ্গারুর চামড়া, অনেক চাকু জব্দ করা হয়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামে একটি সংগঠন খুলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন হেলেনা জাহাঙ্গীর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তিনি দাবি করেন, সংগঠনটির নাম এখনও সেভাবে পরিচিত না হলেও ইতোমধ্যে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ লাখ লাখ মানুষ এর সদস্য হয়েছেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নিয়োগের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার পর রবিবার মেহের আফরোজ চুমকি স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে গত মাসে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন উত্তর জেলা সভাপতি রুহুল আমিন।