X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ত্রিপুরায় কংগ্রেস-বাম-বিজেপি ভাঙার চেষ্টায় তৃণমূল!‍

কলকাতা প্রতিনিধি
০৪ আগস্ট ২০২১, ২১:১৯আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২১, ২১:১৯
image

একুশের বিধানসভায় ‘খেলা হবে’ তৃণমূলের স্লোগান এখন পশ্চিমবঙ্গের সীমানা ছাড়িয়ে ত্রিপুরার বুকে আছড়ে পড়েছে। এই খেলায় রীতিমতো হোমওর্য়াক করেই নেমেছে তৃণমূল। তৃণমূল সূত্রের খবর, ত্রিপুরায় ইতিমধ্যেই সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে শুরু করেছে দলটি। উত্তর ত্রিপুরা, উনকোটি, ধলাইসহ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন দলের বহু নেতাকর্মী তৃণমূলে যোগ দিতে শুরু করেছেন। শুধু তাই নয়, ত্রিপুরার আদিবাসীদের মধ্যেও তৃণমূলের প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা দেখা গিয়েছে।

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর বাম বা সিপিএমকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে তৃণমূল যে কৌশল নেয়, সেই একই কৌশল ত্রিপুরায় প্রয়োগের লক্ষ্য নিয়েছে দলটি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, আপাতত বিজেপি বিরোধিতার প্রশ্নে তৃণমূলকে সমর্থন জানিয়ে সিপিএম তথা বামেরা আত্মতুষ্টিতে থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্যটিতে তারা পশ্চিমবঙ্গের মতোই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ত্রিপুরার আগামী রাজনৈতিক লড়াইটা তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির হবে।

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের মতোই ত্রিপুরায় দীর্ঘ বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ইতিহাস গড়েছিল বিজেপি। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই কংগ্রেস ছেড়ে আসা বিজেপি নেতাদের সঙ্গে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের সংঘাত দেখা দিয়েছে। সুদীপ রায় বর্মন একাধিক বিধায়ক নিয়ে বিজেপি ছাড়তে পারেন বলেও জল্পনা তৈরি হয়েছে। মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরতে এই জল্পনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

মুকুল ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত সুদীপ। মুকুলের হাত ধরেই কংগ্রেস থেকে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। এই বিজেপি বিধায়ক তার অনুগামীদের নিয়ে দল ছাড়লে চাপ বাড়তে পারে ত্রিপুরা সরকারের। পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েকদিন আগেই ত্রিপুরার নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব, তাতেও পরিস্থিতি আয়ত্বে আসেনি এমনটাই খবর। যদিও বিজেপির দাবি, ত্রিপুরায় বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো সংগঠনই তৃণমূলের নেই।

অপরদিকে, ত্রিপুরায় ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের মতোই বামশক্তি ক্ষয়িষ্ণু সেখানে। সিপিএমের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের পক্ষে একা বিজেপির বিরুদ্ধে কতটা লড়তে পারবেন তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কংগ্রেসের অবস্থাও তথৈবচ।

এমন পরিস্থিতিতে বাম-কংগ্রেসের ঘর ভাঙাচ্ছে তৃণমূল। বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলায় একক লড়াই ত্রিপুরায় তৃণমূলকে বিকল্প হিসাবে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করছে। সুবল ভৌমিকদের যোগদানের পর ত্রিপুরায় কংগ্রেসের বহু হেভিওয়েট নেতাই তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে খবর। পরিস্থিতি এমনই যে কংগ্রেসের ভিত্তি ধরে রাখতে ত্রিপুরার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পীযূষ বিশ্বাসকে ফোন করে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন কংগ্রেসের সোনিয়া গান্ধির ঘনিষ্ঠ নেতা বেনুগোপাল।

সূত্রের খবর, কংগ্রেস নেতা বেনুগোপালকে পীযূষ বিশ্বাস জানিয়েছেন, বিজেপিকে রুখতে পরিকল্পনার অভাবে বিরোধী শিবিরের বাম বা কংগ্রেস কারও তরফেই সেই উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। তৃণমূল অল্প কয়েকদিনেই এই কাজটা শুরু করে দিয়েছে। সেকারণেই তৃণমূল বিজেপি বিরোধী হিসাবে দ্রুত উঠে আসছে। এরই মধ্যে জল্পনা আরও বেড়েছে, পিকের আইপ্যাক বির্তকে আগরতলা আদালতে সওয়াল করেন ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পীযূষ বিশ্বাস। গৃহবন্দি থাকা আইপ্যাকের কর্মীরা মহামারী আইন ভাঙতে পারেন এই যুক্তিতে জামিন দেওয়ার বিরোধিতা করেন সরকারি পক্ষের আইনজীবী।

আইপ্যাকের হয়ে আইনজীবীর দায়িত্ব নেওয়া ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস নেতা পীযূষ বিশ্বাস আদালতে বলেন, ‘গৃহবন্দী করে অনর্থক হয়রানি করা হচ্ছিল এই প্রতিনিধি দলটিকে।’ এরপরই আই প্যাকের কর্মীদের জামিন মেলে। তৃণমূলের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা আইপ্যাকের জন্য সওয়াল করছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, এই ঘটনায় ত্রিপুরার রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে তাহলে কী ত্রিপুরার কংগ্রেস নেতারা কি তৃণমূলের দিকে ঢলে পড়েছেন?  বির্তক আরও বেড়েছে পীযূষ বিশ্বাসে আরও একটি বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, ‘যে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে তৃণমূল ত্রিপুরায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তার সিকিভাগ চেষ্টাও কংগ্রেস করছে না।’

রাজনৈতিক মহলের মতে, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে নাড়ির টান থাকার কারণে বাঙালি অধ্যুষিত ত্রিপুরায় সহজেই সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন সম্ভব তৃণমূলের। তাই এই মুহূর্তে ত্রিপুরাকেই পাখির চোখ করে এগোচ্ছে দলটি। মহিলা, যুব ভোটের জন্য তৃণমূলের সুনির্দিষ্ট রণকৌশল কাজে লাগানোর জন্যই আইপ্যাকের মতো সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে শক্তিশালী আইটি সেল তৈরির মতো নানা পদক্ষেপ তৃণমূলকে আলাদা মাত্রা দিচ্ছে ত্রিপুরায়। ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে দেড় বছর সময় রয়েছে তৃণমূলের হাতে। তার আগে যদি ত্রিপুরায় শক্ত অবস্থানে চলে যেতে পারে তৃণমূল তবে শুধু বিধানসভা কেন, চব্বিশের লোকসভার ভোটে গেরুয়া শিবিরকে কড়া চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলতে পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।

/জেজে/
সম্পর্কিত
জলপাইগুড়িতে বিজেপির ইস্যু বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া করিডর
ইডি হেফাজতে আরও ৪ দিন কেজরিওয়াল
সরকার ক্ষমতায় থাকতে ভোটের ওপর নির্ভর করে না: সাকি
সর্বশেষ খবর
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!