X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

তারুণ্যের প্রতীক সব্যসাচী শেখ কামাল

ড. জেবউননেছা
০৫ আগস্ট ২০২১, ১২:৪২আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২১, ১৮:৩৮

ড. জেবউননেছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে যে দুটো সিমেন্টের সাইনবোর্ড রয়েছে, সে সাইনবোর্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় পোস্টার লাগানো হয়েছিল সত্তর দশকে। কলাভবনে ছাত্র সংসদের সভা সমাবেশের কারণে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হওয়ায় বর্তমানে বাণিজ্য ভবনের পশ্চিমে ‘মল চত্বরে’ মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল এই মঞ্চে দর্শক শ্রোতাবৃন্দ বিভিন্ন রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। চত্বরে রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এবং একটি মহুয়া রোপণ করা হয়েছিল। দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লিখন বন্ধ করা হয়েছিল যে আন্দোলন, সে আন্দোলনের  নাম ছিল ‘শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন’। এই আন্দোলনের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী শেখ কামাল। যিনি ডাকসুর উদ্যোগে নাট্য সংস্থা ‘নাট্যচক্রের’ প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি  এবং ‘ঢাকা থিয়েটারের’ অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। একজন নাট্যাভিনেতা হিসেবে বাংলা একাডেমির আমন্ত্রণে ভাষা সপ্তাহ উপলক্ষে ১৯৭৫’র ১৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ডাকসু’র সাংস্কৃতিক সম্পাদক ম. হামিদ পরিচালিত ‘নবান্ন’ নাটকে অভিনয় ছাড়াও তিনি আরও বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেন। কলকাতায় অভিনয় করেছেন বার্নাড শ’র লেখা ‘ইউ নেভার ক্যান টেল’-এর শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর অনুবাদ ‘কেউ কিছু বলতে পারে না’ নাটকে। 

দেশের প্রথম বাংলা ব্যান্ড সংগীত সংগঠন ‘স্পন্দন’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। বিদেশ থেকে এই ব্যান্ড দলের জন্য বাদ্যযন্ত্র আনার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি বিভাগীয় উপস্থিত বক্তৃতা এবং বিতর্ক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রথম স্থান দখল করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্কেটবল টিমের প্রধান ছিলেন তিনি। হকি এবং ক্রিকেট খেলার প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে তিনি ক্রিকেট খেলতে যান। আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগের লিগে খেলেছেন। ১৯৬৮ সালে তিনি প্রথম ধানমন্ডি ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ঢাকা কলেজে অধ্যয়নকালীন ১৯৬৯-এর গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সংগঠক হিসেবে ছিলেন। তৎকালীন সময়ে যখন রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়েছিল, তখন সব সংস্কৃতিকর্মীর সঙ্গে তিনি এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন। ছায়ানটের যন্ত্রসংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে সেতারবাদনে তালিম নিয়েছেন।

ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে খেলেছেন ফুটবল, উদিতি, আজাদ বয়েজের হয়ে খেলেছেন ক্রিকেট, মোহামেডানের হয়ে বাস্কেটবল খেলেছেন, খেলেছেন বাস্কেটবল লিগের অন্যতম সেরা দল ‘স্পার্সে’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২-এ ‘আবাহনী সমাজকল্যাণ’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থার নামে গঠিত হয় ফুটবল দল ‘ইকবাল স্পোর্টিং’। মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের বেশ কিছু কৃতী খেলোয়াড়কে এনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘আবাহনী ক্রীড়া চক্র’। ১৯৭৩ সালে আবাহনীর জন্য আয়ারল্যান্ড থেকে প্রথিতযশা কোচ বিল হার্টকে এনে বাংলাদেশের ফুটবলে আধুনিকায়নের সূচনা করেছিলেন। ১৯৭৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরে আবাহনীর পক্ষ হয়ে তিনি আইএফএ শিল্ডে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ভারতের বেলুনিয়া থেকে যে ব্যাচটি কমিশন লাভ করে, সেই ব্যাচের একজন শেখ কামাল। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়্যার কোর্সে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কমিশন লাভ করে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী দবির উদ্দিন আহমেদের কন্যা পূর্ব পাকিস্তানের ‘গোল্ডেন গার্ল’ নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট ফিমেল ব্লু দেশবরেণ্য অ্যাথলেট সুলতানা কামাল খুকুর সঙ্গে দুই পরিবারের সম্মতিতে ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। তার বিয়েতে প্রাপ্ত সব উপহার বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের তদারকিতে জমা দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় তোষাখানায়। শুধু একটি সোনার নৌকা এবং সোনার মুকুট স্মৃতি হিসেবে রাখা হয়।

বিয়ের ৩১ দিন পর ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট তিনি ও তাঁর স্ত্রী ঘাতকের গুলিতে প্রাণ হারান। এই মানুষটি জন্মগ্রহণ করেন গোপালগঞ্জ জেলার বাইগার নদীর তীরঘেঁষে টুঙ্গিপাড়া গ্রামে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসার ঘরে ১৯৪৯ সালের ৫ আগস্ট। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তাঁর বড় বোন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটানা ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তিনি বন্দি ছিলেন। সেই সময়ে আমাদের দুই ভাইবোনকে নিয়ে আমার মা দাদা-দাদির কাছেই থাকতেন। একবার একটা মামলা উপলক্ষে আব্বাকে গোপালগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। কামাল তখন অল্প অল্প কথা বলা শিখেছে। কিন্তু আব্বাকে কখনও দেখেনি, চেনেও না। আমি যখন বারবার আব্বার কাছে ছুটে যাচ্ছি, ‘আব্বা আব্বা’ বলে ডাকছি, ও শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে। গোপালগঞ্জ থানায় একটা বড় পুকুর আছে, যার পাশে বড় খোলা মাঠ। ওই মাঠে আমরা দুই ভাইবোন খেলা করতাম ও ফড়িং ধরার জন্য ছুটে বেড়াতাম। আর মাঝে মাঝেই আব্বার কাছে ছুটে আসতাম। অনেক ফুল-পাতা কুড়িয়ে এনে থানার বারান্দায় কামালকে নিয়ে খেলতে বসেছি। ও হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘হাসু আপা, তোমার আব্বাকে আমি আব্বা বলি?’ কামালের সেই কথা আজ যখন মনে পড়ে, তখন চোখের পানি ধরতে পারি না। আজ ও নেই। আমাদের আব্বা বলে ডাকারও কেউ নেই।’

কতটুকু বেদনাতুর স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হয় একজন বোনের। এই অনুভূতি একমাত্র তারাই বুঝতে পারবেন যাদের স্বজন হারিয়েছে। শেখ কামালের আর এক বোন শেখ রেহানা তাঁর স্মৃতিচারণে বলেছেন, ‘কামাল ভাই খুব সৌখিন ছিলেন। খুব গুছিয়ে রাখতেন সবকিছু। কিন্তু বেশি কিছু চাইতেন না। আমার কাছেই এসেই হয়তো কোনও দিন বললেন, ‘দশটা টাকা দিবি?’ বিড়ি-সিগারেট কোনও দিন নেয়নি। আমার মনে পড়ে সেই সব দিন। আমরা সবাই ছাদে। কামাল ভাই সেতার বাজাচ্ছেন। আমাকে বললেন, তুই একটা গান ধর। মায়ের পছন্দ জগন্ময় মিত্র। ‘যত লিখে যাই, চিঠি না ফুরায় কথা তো হয় না শেষ..তুমি আজ কত দূরে।’ হ্যাঁ সত্যিই বোনের কাছ থেকে তার ভাই আজ কত দূরে। যেখান থেকে কেউ কাউকে দেখতে পায় না। এই ক্ষণজন্মা মানুষটি সম্পর্কে বিশিষ্টজনেরা স্মৃতিচারণ করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম একজন তাঁর সরাসরি শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোহাব্বত খান। তিনি বলেন, ৭০ দশকে কলাভবনের ২০২১ নম্বর শ্রেণিকক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে ফিরছেন। হঠাৎ পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখেন ছাত্র শেখ কামাল তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে। স্যারকে সালাম দিয়ে বললেন, স্যার, বাংলা ভাষার জন্য আমাদের ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন, অথচ আপনি পুরো পাঠদানে একটিও বাংলা ভাষা ব্যবহার করলেন না? স্যার সেদিন বলেছিলেন, কামাল, তুমিও বাংলা জানো, আমিও জানি, কিন্তু তোমাকে ইংরেজিতে দক্ষ করার জন্যই ইংরেজি ভাষায় পাঠদান করেছি। ‘এই ঘটনাটুকু যদি বিশ্লেষণ করি তাহলে বুঝা যায়, শেখ কামাল কতটা মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। স্যার যখন ১৯৭২-এর দিকে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান, তখন একদিন কলাভবনের করিডোরে শেখ কামাল এসে স্যারের পা ছুঁয়ে কদমবুচি করেন। স্যার জানতে চাইলেন কেন কদমবুচি করলে? শেখ কামাল বলেছিলেন, স্যার আর যদি দেখা না হয়।’ শেখ কামালের কথা সত্যি হয়েছিল, স্যারের সাথে কোনও দিন শেখ কামালের দেখা হয়নি। প্রবাসে থাকা অবস্থায় জানতে পারেন শেখ কামাল হারিয়ে গেছেন।’ এখনও স্যার আফসোস করেন আর বলেন, ‘শেখ কামাল বঙ্গবন্ধুর সন্তান হয়েও তাকে কোনও দিন দেখিনি কারও চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে। সে ছিল চঞ্চল এবং সহজ-সরল।’ অথচ কতিপয় স্বাধীনতাবিরোধী শেখ কামাল সম্পর্কে অপবাদ ছড়িয়েছিল। তিনি নাকি ব্যাংক ডাকাতি নামক কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। তৎকালীন জাসদের মুখপত্র ‘গণকণ্ঠ’ এবং ভাসানী ন্যাপের ‘হক কথা’ পত্রিকা বিকৃতভাবে সংবাদ পরিবেশন করেছিল। অথচ ‘দৈনিক মর্নিং নিউজ’ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ সত্য ঘটনাকে কুৎসার নিচে চাপা দিয়েছিল কামালের চরিত্র হননকারীরা। লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফের তৎকালীন সাংবাদিক পিটার হেজেল হাস্ট তখন ছিলেন ঢাকায়। সেদিন পত্রিকায় ছাপানো সংবাদটি স্বাধীনতাবিরোধীরা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করলে তিনি টেলিগ্রাফে প্রকাশ করে বলেন, ‘একজন প্রধানমন্ত্রীর ছেলের ব্যাংক ডাকাতির দরকার কী? টাকা চাইলে তো ব্যাংক ম্যানেজাররাই তাঁকে টাকা এনে দেবেন।’

মেজর ডালিমের স্ত্রীর সাথে জড়িয়ে শেখ কামাল সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশ হয়। অথচ মেজর ডালিম তাঁর লিখিত ‘যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি’ গ্রন্থে তাঁর স্ত্রী অপহরণের ঘটনাকে খোলাসা করে দিলেও শেখ কামালকে মিথ্যা অপবাদে জড়িয়েছিল কুচক্রীরা। এই অসত্যকে পুঁজি করে নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করেছে। কিন্তু সত্যের দাপট চিরস্থায়ী, অসত্যের দাপট ক্ষণস্থায়ী। এই মহান বাণীই সত্য হয়েছে ইতিহাসের পরতে পরতে। ১৯৭৩-এর ৩০০ আসনের সংসদ নির্বাচনে বাবার আদেশে তিনি ফেনী যান। ফেনী থেকে বিলোনিয়া ২০ মাইল পথ মুগ্ধ জনতার সালাম দিয়েছেন আর নিয়েছেন। কোথাও ভোট চাননি, জনসভা করেননি। নির্বাচন সম্পর্কে একটি কথাও বলেননি। এই হলো শেখ কামাল। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন ভাবুক ধরনের। তৎকালীন সময়ে বাবার সাথে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে ২২ দিন অবস্থান করেন। তখনকার সময়ে জেনেভায় বাংলাদেশ মিশন প্রধান ওয়ালিউর রহমানের কাছে তিনি দু’বার গাড়ি চেয়েছিলেন দুর্লভ কিছু বইয়ের সন্ধান করতে। তার কাছে বইও চেয়েছেন বেশ কয়েকবার। এই সব্যসাচী মানুষটি শান্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তার একটি উদাহরণ- কলাভবনের সম্মুখে বটতলায় জাসদ ছাত্রলীগ ও ভাসানী ন্যাপপন্থী জাতীয় ছাত্রদলের কর্মীদের লাঠালাঠি সমাধান করতে গিয়ে মাথায় লাঠির আঘাত পেলেও কোনও উচ্চবাচ্য না করে সেদিনের ঝামেলা সমাধান করেছিলেন। নয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমগ্র ক্যাম্পাসে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়তো।

১৯৭৪-এর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির পেছনে শরীফ মিয়ার ক্যান্টিনের সামনে চট পড়া কবি সাবদার সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধুকে এবং তার পরিবার নিয়ে কটূক্তি আপত্তিকর মন্তব্য করলে ছাত্রলীগের কর্মীরা রাগান্বিত হয়ে কবিকে ধরেন। ঘটনার সময় কলাভবনের বারান্দায় ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে শেখ কামাল কথা বলছিলেন, তাকে গিয়ে ঘটনাটি জানালে তিনি সাবদারকে ভিড় থেকে হাত ধরে নিয়ে এলেন এবং গাড়ির পেছনে বসিয়ে প্রেসক্লাব নামালেন, গাড়ি থেকে নামিয়ে তার হাতে টাকা দিয়ে বললেন, ‘এত সুন্দর কবিতা লিখেন, গাঁজা খান কেন?’ সাবদারকে যখন ভিড় থেকে তিনি বের করছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘কবিরা অনেক দ্ব্যর্থবোধক অর্থে কথা বলেন, কিন্তু তারা আমাদের কবিতা উপহার দেন। তাছাড়া একজন কবি কী লিখলেন না লিখলেন তাতে বঙ্গবন্ধু ছোট হয়ে যান না’। শেখ কামালের এই উক্তিটি প্রমাণ করে তিনি কতটা উদার ছিলেন। 

শেখ কামাল কখনও ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য, কখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনের উদ্যোক্তা, কখনও সলিমুল্লাহ হলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাটকে ঘটকের ভূমিকায়, কখনও টিএসসির লনে সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের গানের আয়োজক, কখনও ৩০, মিরপুর রোডে ছাত্রলীগের অফিসে, কখনও ভাবুক মন নিয়ে কবি নজরুল ইসলামের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাওয়া একজন ভক্ত, কখনও খেলার মাঠে একজন খেলোয়াড়, একজন মগ্ন পাঠক, কখনও বন্ধুদের সাথে আড্ডায়, সবকিছু ছাপিয়ে অতি সাধারণ একজন সেতারবাদক শেখ কামাল। ৫ ফিট সাড়ে ১০ ইঞ্চির মানুষটির মাত্র ২৬ বছর বয়সে জীবন প্রদীপ থেমে যায়। সে বেঁচে থাকলে হতে পারতেন বাংলাদেশের একজন সেতার বাদক, বরেণ্য ক্রীড়াবিদ, সংগঠক অথবা অভিনেতা। শেখ কামাল বেঁচে থাকলে তার বয়স হতো ৭২। ইতিহাসের পাতায় শেখ কামাল বেঁচে থাকবেন ২৬ বছরের টগবগে তরুণ হয়ে।

বঙ্গবন্ধুর সন্তান হয়েও তিনি ছিলের ছাত্রলীগের একজন সাধারণ সদস্য, চাইলে বড় কোনও পদে তিনি অধিষ্ঠিত হতে পারতেন। শেখ কামাল তরুণের পথ প্রদর্শক। ঢাকার শাহীন স্কুলের শিক্ষার্থী নিজ প্রতিভায় ছড়িয়ে পড়েছিলেন প্রজাপতির মতো পাখা মেলে। এ প্রজন্ম তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে সংগঠক হিসেবে গড়তে পারে সোনার বাংলাদেশ।

শেষ করবো কবি ও নাট্যকার মু. জালাল উদ্দিন নলুয়ার শেখ কামালকে নিয়ে লিখিত কবিতার কয়েকটি চরণ দিয়ে, ‘অবারিত খেলার মাঠ, সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ, শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গন/আজও কাঁদে। অন্তহীন কান্নায় স্মৃতি সাগরে/শুভার্থীরা আজও খোঁজে তোমাকে। তুমি ভেসে গেছো শোকসিন্ধুতে/বেদনার বারি ঝরে অগণিত জনমনে/পাশবিক জিঘাংসায়, হিংস্র থাবায়/ হারায় কামাল, হায় কামাল! শেখ কামাল/তুমি বেঁচে আছো ভক্তের অশ্রুবিন্দুতে/ মল চত্বরের রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া, মহুয়া ফুলের সুভাসে।' 

লেখক: অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
খিলগাঁওয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
খিলগাঁওয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
স্থায়ী সংঘাতে পরিণত হচ্ছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা: তুরস্ক
স্থায়ী সংঘাতে পরিণত হচ্ছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা: তুরস্ক
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ